চলতি বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে শেখ হাসিনা দিল্লিতে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে প্রতিবেশী দেশ ভারতের। আর সম্মিলিত সনাতন জাগরণী মঞ্চের মুখপাত্র ও সাবেক ‘বিতর্কিত’ ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতার যেন সেই আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনায় ঢাকায় আসছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিসরি।
এর আগে ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে নয়াদিল্লিতে উভয় দেশের দুই পররাষ্ট্র সচিবের মধ্যে সর্বশেষ সংলাপ হয়েছিল। এবারের সংলাপে ভারত-অর্থায়ন করা উন্নয়ন প্রকল্পগুলো পুনরায় চালু, ভিসা ব্যবস্থা সহজ, আরও সরাসরি ফ্লাইট চালু এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগের মতো ইস্যু অন্তর্ভুক্ত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে বলে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিবের এই সফর এমন এক সময়ে হতে চলেছে যখন বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্কে অভূতপূর্ব উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর কথিত নিপীড়ন ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে অভিযুক্ত চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতারের অভিযোগে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী কয়েকটি ভারতীয় রাজ্যে বিক্ষোভ হচ্ছে।
এছাড়া ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় অবস্থিত বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের হামলা-ভাঙচুর ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননার দায়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার ভারতীয় রাষ্ট্রদূত প্রণয় ভার্মাকে তলব করে কড়া প্রতিবাদ জানায়।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস জানায়, ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব আলোচনার জন্য আগামী সপ্তাহেই বাংলাদেশ সফর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। গত আগস্টে শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর এটিই ভারতী কোনো জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার প্রথম ঢাকা সফর।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, উভয় দেশের কেউই এখনো এই সফরের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেয়নি। তবে নাম না প্রকাশ করার শর্তে এ বিষয়ে অবগত উভয় দেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিক্রম মিসরি সম্ভবত মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্ষিক আলোচনার জন্য বাংলাদেশে আসবেন।
হিন্দুস্তান টাইমস বলছে, গত ২৩ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাকে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিবের ঢাকা সফরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ভারতীয় এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পররাষ্ট্র সচিবের আগামী ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সফরের কথা রয়েছে। তবে সফরের আগে এখনো এক সপ্তাহ বাকি রয়েছে ও বর্তমান সম্পর্কের অবস্থাও আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে।
আরেকজন ভারতীয় কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ এই সফরটি নিয়ে আগ্রহী। কারণ ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সম্ভাব্য সফরটি উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রাথমিক পদক্ষেপ বা সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে। সফর ঠিকঠাকভাবে অনুষ্ঠিত হলে মিসরি ও ড. ইউনূসের মধ্যে বৈঠকের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাবে না।