সিরিয়ায় মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলার নেপথ্যে

সিরিয়ায় মার্কিন সামরিক অবস্থানগুলোতে আবারো ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে এবং এতে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার সিরিয়ার উত্তর পূর্বাঞ্চলে মার্কিন সামরিক অবস্থানগুলিকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয় বলে আল মায়েদিন টিভি নেটওওয়ার্ক জানিয়েছিল। হামলায় একজন মার্কিন ঠিকাদার নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়। মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের সদর দপ্তরও ঘোষণা করেছে যে তারা এই হামলার জবাবে সিরিয়ার কিছু লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করেছে,  যার ফলে বেশ কয়েকজন শহীদ ও আহত হয়েছে।

এছাড়া শুক্রবার সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলের দেইর আযজোর শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত আল-ওমর এবং কোনিকোর তেল ও গ্যাস ক্ষেত্রে অবস্থান করা  মার্কিন সামরিক ঘাঁটিকে লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। ফক্স নিউজ জানিয়েছে যে সিরিয়ায় মার্কিন সেনাবাহিনীর ঘাঁটিতে নতুন রকেট হামলায় দেশটির বেশ কয়েকজন সামরিক বাহিনী আহত হয়েছে।

এছাড়া এই প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে ফক্স নিউজ জানিয়েছে যে এসব হামলায় মার্কিন বাহিনীর হতাহতের সংখ্যা এখনও মিডিয়াতে প্রকাশ করা হয়নি, তবে সৈন্যদের অবস্থা শঙ্কটাপন্ন।  ধারনা করা হচ্ছে যে সিরিয়ায় মার্কিন সৈন্য এবং সামরিক গোষ্ঠী গুলোর মধ্যে নতুন করে সংঘর্ষের পেছনে বিভিন্ন  কারণ থাকতে পারে। 

প্রথমত, মনে হচ্ছে সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মার্কিন সামরিক অবস্থানে হামলার অন্যতম কারণ হচ্ছে ওয়াশিংটন জেরুজালেম আল কুদসের দখলদার শাসক গোষ্ঠীকে সিরিয়ার বিরুদ্ধে বারবার হামলার জন্য সবুজ সংকেত দেয়া। গত দুই মাসে ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠী সিরিয়ার আলেপ্পো বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে যার ফলে বেশ কয়েকজন শহীদ হওয়ার পাশাপাশি কয়েক জন আহত হয়েছে। 

দ্বিতীয়ত, সিরিয়ার ঘাঁটিগুলোতে অবস্থান করা মার্কিন সৈন্যরা সিরিয়ার কারাগারে বন্দি দায়েশ সন্ত্রাসীদেরকে ইরাকে স্থানান্তরে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছে। মূলত উগ্র তাকফিরি গোষ্ঠীর সঙ্গে মার্কিন সৈন্যদের দহরমমহরমের কারণেই সিরিযার বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং মার্কিন বাহিনীর মধ্যে সংর্ঘের ঘটনা ঘটছে। 

তৃতীয়ত, মার্কিন সামরিক বাহিনী সিরিয়ার পূর্ব ও উত্তর-পূর্বে অবস্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলিকে দেশের জ্বালানি সম্পদ লুট করতে সহায়তা করছে। সিরিয়া সরকার এই বিষয়ে অনেকবার প্রতিবাদ করেছে এবং এই ঘটনাকে তার সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে। এছাড়া সিরিয়ার জনগণও বারবার আমেরিকান সৈন্যদের সাথে সংঘর্ষের সময় সিরিয়া থেকে তাদের বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছে।

চতুর্থত: ইরান ও আরব দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার ও সম্প্রসারণের সাম্প্রতিক চুক্তিতে আমেরিকা মোটেও খুশি হতে পারে নি।  বিশেষ করে চীনের মধ্যস্থতায় ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে চুক্তি ওয়াশিংটনের স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

পরিশেষে মনে হচ্ছে আরব দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা ঠেকাতে ওয়াশিংটন এই অঞ্চলে ইরানের বিরুদ্ধে একটি নতুন দৃশ্যপট তৈরি করার চেষ্টা করছে। এরই ধারাবাহিকতায় মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান মাইকেল ম্যাককল সিরিয়ায় উত্তর পূর্বাঞ্চলে একটি মার্কিন ঘাঁটিতে ড্রোন হামলার বিষয়ে এক বিবৃতিতে ইরানকে এই হামলায় ভূমিকা রাখার জন্য অভিযুক্ত করে বলেছেন ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে গেছে
খবর পার্সটুডে /এনবিএস/২০২৩/একে

news