ইসরায়েলি বোমায় পরিবারের সবাইকে হারিয়ে বাইডেন বরাবর খোলা চিঠি এক ফিলিস্তিনির
প্রেসিডেন্ট বাইডেন, আমি মাত্র একদিনে গাজায় ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে আমার পরিবারের ৩৬ জন সদস্যকে হারিয়েছি। আমি চাই আপনি তাদের নাম জানুন। সূত্র: আলজাজিরা
২৬ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সকালে, গাজায় আরেকটি বোমাবর্ষণে গণহত্যার খবর পেয়ে জেগে উঠি। কিন্তু জানতে পারি এবার ইসরাইল বোমারুর দল আমার নিজের পরিবারের সদস্যদের হত্যা করেছে। এটি ছিলো গাজা স্ট্রিপের দক্ষিণ অংশে খান ইউনিস শরণার্থী শিবির।
যুদ্ধের শুরুতে ইসরায়েলি বাহিনী গাজার উত্তরে বসবাসকারী বাসিন্দাদের দক্ষিণে সরে যেতে বলে তাদের মতে মানুষ সেখানে নিরাপদে থাকার কথা ছিলো। সেখানে একটি ক্যাম্পের সম্পূর্ণ আবাসিক কোয়ার্টার ছিলো যেখানে আমি জন্মগ্রহণ করেছিলাম এবং বেড়ে উঠেছিলাম কিন্তু ইসরায়েলের বোমারুবাহিনী সেখানে নির্মমভাবে বোমাবর্ষণ করে জায়গাটিকে একটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে।
মানুষজন সেখানে একটি ভূমিকম্প অনুভব করেছিল। একটি নৃশংস, মানবসৃষ্ট ভূমিকম্প। আর মহূর্তেই সেখানে থাকা ৪৭ জন মানুষ পৃথিবীতে তাদের যাত্রা শেষ করে মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে ফিরে গেছে। তাদের মধ্যে ৩৬ জন শুধু আমার পরিবারের সদস্য ছিলো আর বাকিরা নিরাপত্তার জন্য সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলো।
আমি আমার পরিবারের সবাইকে হারিয়েছি আর এখন আমি তাদের নাম আপনাকে বলার মাধ্যমে তাদের প্রতি সম্মান জানাতে চাই। আমার দাদা নায়েফ আবু শামলা (৭৯) দাদী ফাতিয়া(৭৬) যারা ছিলো ১৯৪৮ সালে ইসরায়েলের ফিলিস্তিনি জাতি নিধন যুদ্ধ ‘নাকবা’ থেকে বেঁচে যাওয়া এক দম্পতি। বোমা হামলার শিকার তাদের তিন মেয়ে আয়েশা, দৌলত, উমাইমা তাদের চার ছেলে হাসান, মাহমুদ, মোহাম্মদ এবং জুহাইর এবং তাদের স্ত্রী, ফাদিয়া, নিমা এবং এশা। এদের মধ্যে জুহাইরের স্ত্রী বেঁচে আছে এখনও কারণ সেই হামলার সময় সে ক্যাম্পের মধ্যে ছিলো না । কিন্তু হাসানের তিন সন্তান মোহাম্মদ, ইসমাইল ও সালমা। মাহমুদের ছেলে ইব্রাহিম।
আমার নানার বাড়িতেও বোমা হামলা হয়েছে এবং সেখানেও সবাই মারা গেছে। আমার নানা উম সাঈদ (৯২) তিনিও নাকবা থেকে বেঁচে যাওয়া একজন। মেয়ে নাজাতকে নিয়ে তিনি খান ইউনিসের বাড়িতে থাকতেন। দুজনেই এখন ধ্বংসস্তূপের নিচে হারিয়ে গেছে । লোকজন তাদের লাশ বের করার চেষ্টা করেও পারেনি। তার দুই ছেলে মারওয়ান ও আসাদ এবং তার মেয়ে মুনা। মারওয়ান বেঁচে গেলেও তার স্ত্রী সুহায়লা এবং চার সন্তান মোহাম্মদ, মাহমুদ, আয়া এবং শাহদ নিহত হয়েছে। মুনাও তার দুই ছেলে আমজাদ ও মোহাম্মদ মারা গেছে। আসাদ তার স্ত্রী, ইমতিয়াজ আর তার ছেলে আবদেলরহমান যে মেডিকেলের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ছিলো। এছাড়া আকরাম, রিমন, বৈরুত, ইমাদ, নেইমাসহ আরো কয়েকজন রয়েছে যাদের নাম মনে করতে পারছি না এরা সবাই আমার পরিবারের সদস্য ছিলো।
আপনি কি সত্যিই এই ট্র্যাজেডির মাত্রা বুঝতে পারেন? নাকি আপনি এখনও প্রশ্ন করছেন যে ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের গণহত্যার জন্য দোষী কিনা।সূত্র: ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলা
এনবিএস/ওডে/সি