আন্তর্জাতিক ট্যাঙ্কার ট্র্যাকিং ইনস্টিটিউট, "ট্যাঙ্কারট্র্যাকার্স" তাদের নতুন প্রতিবেদনে এক চমকপ্রদ তথ্য ঘোষণা করেছে: ইরানের অপরিশোধিত তেল রপ্তানি গত সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে।

ট্যাঙ্কারট্র্যাকার্স জানিয়েছে, ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে (ফার্সি শাহরিভার/মেহের ১৪০৪) ইরানের অপরিশোধিত তেল রপ্তানি প্রতিদিন প্রায় ২০ লক্ষ ব্যারেলে পৌঁছেছে। ট্যাঙ্কারট্র্যাকার্সের ওয়েবসাইটে এক বার্তায় লেখা হয়েছে, এই রপ্তানির মাত্রা ২০১৮ সালের মাঝামাঝি (ফার্সি ১৩৯৭) থেকে আর দেখা যায়নি।

নিষেধাজ্ঞা ফিরলেও কোনো চাপ নেই!
ইরানের তেল রপ্তানি বৃদ্ধির এই পরিসংখ্যান এমন এক সময়ে প্রকাশিত হচ্ছে, যখন ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে (ফার্সি ১৪০৪ সালের মেহের প্রথম দিকে) ইরানের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের নিষ্ঠুর ও অবৈধ নিষেধাজ্ঞাগুলো আবারও সক্রিয় করা হয়েছিল।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার ইউরোপীয় মিত্ররা আশা করেছিল যে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞাগুলো ফিরে এলে চীনের মতো বাজারে ইরানের তেল রপ্তানি প্রভাবিত হবে। কিন্তু ইরানি বিশেষজ্ঞ এবং কর্মকর্তাদের নতুন তথ্য নিশ্চিত করছে যে, এই নিষেধাজ্ঞাগুলো ইরানের তেল রপ্তানির ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না।

ইরানের তেলমন্ত্রী মোহসেন পাকনেজাদ ইতোপূর্বে বলেছিলেন, ইরানের তেল রপ্তানির ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞাগুলো পুনরায় ফিরে এলেও নতুন করে কোনো চাপ সৃষ্টি করবে না। তিনি বিগত বছরগুলোর অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে আরও বলেন, ইরান তেল শিল্পের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কঠোরতম নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে।

🇨🇳 চীনের সমর্থন: 'মার্কিন চাপ মানতে আমরা রাজি নই'
ইরানে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ঝং পেইউ এই প্রসঙ্গে বলেন, মার্কিন পদক্ষেপের কারণে ইরান ও চীনের সম্পর্ক প্রভাবিত হবে না এবং "আমরা দৃঢ়তার সাথে কাজ চালিয়ে যাব"।

চীনা রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, "আমরা একটি বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে ইরানকে সমর্থন করি এবং নিষেধাজ্ঞাগুলো দুই দেশের ব্যবসায়িক বিষয়গুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে দেব না।"

ঝং পেইউ স্পষ্ট করে দেন: "আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অযৌক্তিক চাপ মানতে রাজি নই এবং উপেক্ষা করব না। বাস্তবে আমরা তাদের বিরুদ্ধে আমাদের বিরোধিতা প্রদর্শন করব এবং ইরান ও চীনের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ব্যাহত করতে দেব না।"

কেন বারবার ব্যর্থ হচ্ছে তেল নিষেধাজ্ঞা?
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরানের ওপর তেল নিষেধাজ্ঞা সর্বদাই ব্যর্থ হয়েছে। এর প্রধান কারণ হলো:

বিকল্প রুট তৈরি: ইরান স্বাধীন দেশগুলোর সাথে সহযোগিতা, কূটনৈতিক এবং প্রযুক্তিগত সরঞ্জামসহ বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে তেল রপ্তানির বিকল্প রুট তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।

প্রধান ক্রেতা ধরে রাখা: ইরান চীনের মতো প্রধান ক্রেতা বাজার ধরে রাখতে সফল হয়েছে। চীন, ভারত এবং কিছু আরব দেশ একতরফা মার্কিন নিষেধাজ্ঞাগুলোকে স্বীকৃতি দেয়নি এবং ইরান থেকে তেল আমদানি অব্যাহত রেখেছে।

কৌশলগত অবস্থান: নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ইরান এখনো বিশ্ব জ্বালানি বাজারে অপরিশোধিত তেল সরবরাহের অন্যতম প্রধান খেলোয়াড়। ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে প্রতিদিন ২ মিলিয়ন ব্যারেল তেল রপ্তানি এই অবস্থানকে প্রমাণ করে।

আঞ্চলিক সহযোগিতা: চীন মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ইরান থেকে তেল আমদানিকে তার জ্বালানি কৌশলের অংশ মনে করে। রাশিয়ার সাথে ইরানের জ্বালানি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতাও শক্তিশালী হয়েছে, যা পশ্চিমাদের ওপর নির্ভরতা কমাতে সাহায্য করেছে।

নতুন বাজার: আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকাসহ এশিয়ার অনেক দেশই সস্তা এবং নির্ভরযোগ্য জ্বালানি উৎস খুঁজছে এবং ইরানকে তারা উপযুক্ত অংশীদার মনে করছে।

প্রাকৃতিক সম্পদ: ইরানের বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম তেল মজুদ এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক গ্যাস মজুদ রয়েছে , যা ইরানকে একটি কৌশলগত জ্বালানি উৎস করে তুলেছে।

২০২৫ সালে ইরানের বিরুদ্ধে তেল নিষেধাজ্ঞা ব্যর্থ হয়েছে কারণ ইরান প্রযুক্তিগত, কূটনৈতিক এবং পরিচালনামূলক সরঞ্জাম ব্যবহার করে তার রপ্তানি বজায় রাখতে এবং বৃদ্ধি করতেও সক্ষম হয়েছে। এই সাফল্য ইরানের অর্থনৈতিক শক্তি, কৌশলগত বুদ্ধিমত্তা এবং বিশ্ব জ্বালানি বাজারে ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানকে প্রতিফলিত করে।

 

news