যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির নবনির্বাচিত প্রথম মুসলিম মেয়র জোহরান মামদানিকে দায়িত্ব গ্রহণে বাধা দেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়েছে। ওয়াশিংটনের রিপাবলিকান নেতারা শুধু তার মেয়র হওয়া ঠেকাতে চান না, বরং তার মার্কিন নাগরিকত্ব বাতিলের দাবিও তুলেছেন।
মামদানি নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রভাব বলয়ের বিপরীতে দাঁড়িয়ে জয়ী হন। আর তাই এখন রিপাবলিকান মহলে প্রশ্ন—তিনি কি এই বাধাগুলো পেরিয়ে দায়িত্ব নিতে পারবেন?
ট্রাম্পের হুমকি ও নাগরিকত্ব বিতর্ক
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগেই হুমকি দিয়েছিলেন—মামদানি জিতলে নিউইয়র্ক সিটির ফেডারেল তহবিল বন্ধ করে দেবেন। ট্রাম্প মামদানিকে ‘কমিউনিস্ট’ আখ্যা দিয়ে বলেন, তার নাগরিকত্ব নিয়ে “বড় প্রশ্ন” রয়েছে।
এরপর কিছু রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা তার নাগরিকত্ব প্রক্রিয়া তদন্ত এবং বাতিল করার আহ্বান জানান। তারা দাবি করেন, মামদানি নাকি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করেছেন, যদিও এই অভিযোগের কোনও প্রমাণ নেই।
রিপাবলিকান প্রতিনিধি অ্যান্ডি ওগলস এক বিবৃতিতে বলেন, “যদি মামদানি নাগরিকত্বের কাগজপত্রে মিথ্যা বলে থাকেন, তবে তিনি নাগরিক নন, মেয়রও হতে পারেন না।” তিনি মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডিকে মামদানির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করার আহ্বান জানান।
আরেক রিপাবলিকান, র্যান্ডি ফাইন, অভিযোগ করেন, “মামদানি মাত্র আট বছর আগে আমেরিকায় এসেছেন। তিনি নাগরিকত্বের মানদণ্ডই পূরণ করেননি।”
মামদানির পক্ষে বাস্তবতা ও আইন
তবে ফ্যাক্টচেকিং প্ল্যাটফর্ম পলিটিফ্যাক্ট জানিয়েছে, মামদানি নাগরিকত্বের আবেদনপত্রে মিথ্যা বলেছেন—এর কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ নেই।
মামদানি ১৯৯৮ সালে মাত্র সাত বছর বয়সে উগান্ডা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন, এবং ২০১৮ সালে নাগরিকত্ব পান। মার্কিন আইনে নাগরিকত্ব বাতিল কেবল আদালতের আদেশে সম্ভব, এবং এটি অত্যন্ত বিরল ঘটনা—যেমন নাৎসি অপরাধী বা সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যুক্তদের ক্ষেত্রে হয়েছে।
ইমিগ্রেশন বিশেষজ্ঞ জেরেমি ম্যাককিনি বলেন, “নাগরিকত্ব বাতিল করতে সরকারের খুব স্পষ্ট, অখণ্ড প্রমাণ দরকার। মামদানির ক্ষেত্রে তেমন কিছুই নেই।”
বিতর্কিত গান ও ডিএসএ সদস্যপদ নিয়ে সমালোচনা
ওগলস অভিযোগ করেন, মামদানি ২০১৭ সালের এক র্যাপ গানে ‘হলি ল্যান্ড ফাইভ’-এর সমর্থনে গান লিখেছিলেন। ওই পাঁচজন মুসলিমকে পরে হামাসকে আর্থিক সহায়তার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তবে অনেক আইনজীবী মামলার প্রমাণকে প্রশ্নবিদ্ধ বলেছেন।
আরও বলা হচ্ছে, মামদানি নাগরিকত্ব ফর্মে তার ‘ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্টস অব আমেরিকা (DSA)’ সদস্যপদ উল্লেখ করেননি। তবে বিশেষজ্ঞরা পরিষ্কার করে বলছেন, DSA কোনও কমিউনিস্ট দল নয়।
এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হার্ভি ক্লেয়ার বলেন, “ডেমোক্রেটিক সমাজতন্ত্রীরা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাস করেন—যা কমিউনিজমের বিপরীত ধারণা।”
মুসলিমবিদ্বেষের অভিযোগ
ইমিগ্রেশন আইনজীবী ম্যাককিনি জানান, “DSA সদস্যপদ নাগরিকত্বে কোনও বাধা নয়, আর রাজনৈতিক সংগঠন উল্লেখ না করাও প্রতারণা নয়।”
কাউন্সিল অন আমেরিকান ইসলামিক রিলেশন্স CAIR পুরো বিষয়টিকে “বর্ণবাদী ও ইসলামোফোবিক” আক্রমণ বলে নিন্দা জানিয়েছে।
অক্টোবরে এক সাক্ষাৎকারে মামদানি বলেন, “ইসলামোফোবিয়া এখন আমেরিকান রাজনীতির স্থায়ী অংশে পরিণত হয়েছে।”
