যুদ্ধবিরতি চুক্তি থাকলেও ইসরাইল থামছে না।দক্ষিণ লেবাননের অন্তত তিনটি শহরে বিমান হামলা চালিয়ে দিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। হামলায় কয়েকটা ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কিন্তু এখনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
বিবিসি জানিয়েছে, কয়েক দশকের মধ্যে ইসরাইল ও লেবাননের মধ্যে প্রথম সরাসরি আলোচনার মাত্র একদিনের মধ্যেই ইসরাইলি সেনাবাহিনী নতুন করে বিমান হামলা শুরু করে দিয়েছে। ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র আভিচে আদ্রেয়ি জেবা ও আল-মাজাদেলের বাসিন্দাদের শহর খালি করার নির্দেশনা জারির ঘণ্টাখানেক পরই হামলা শুরু হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ প্রকাশিত এক পোস্টে আল-মাজাদেল ও বারাচিতের কয়েকটি ভবনকে লক্ষ্যবস্তু হিসেবে চিহ্নিত করে মানচিত্র প্রকাশ করেন আদ্রেয়ি। সেসব ভবন হিজবুল্লাহ ব্যবহার করছে এমন অভিযোগ করে সাধারণ মানুষকে চিহ্নিত ভবনগুলো থেকে কমপক্ষে ৩০০ মিটার দূরে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
যেসব স্থান লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়েছে সেগুলো হলো মাহরুনা নামে একটি ছোট কৃষিভিত্তিক গ্রাম; লিটানি নদীর দক্ষিণে টায়ারের আল-মাজাদেল; লিটানি নদীর উত্তরে এবং বৈরুত থেকে ৬৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নাবাতিয়ের জেবা; এবং বৈরুত থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে নাবাতিয়ে এবং বিনতে জেবিলের মধ্যে অবস্থিত একটি বৃহৎ পাহাড়ি শহর বারাচিত।
লেবাননের ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, হামলায় জেবার জনবহুল আবাসিক এলাকায় একটি ভবন ধ্বংস এবং আশপাশের স্থাপনাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, ২০২৪ সালে নভেম্বরে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরাইল প্রায় প্রতিদিনই লেবাননে হামলা চালিয়েছে। এসব হামলায় এখন পর্যন্ত ৩০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, এর মধ্যে অন্তত ১২৭ জনই বেসামরিক তথা নিরস্ত্র।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, এবারের হামলার সময়টি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ দুই দেশের মধ্যে চলমান সংকট নিয়ে লেবাননের সঙ্গে আলোচনার একদিন পরই ইসরাইল ফের দেশটিতে হামলা চালালো।
দীর্ঘ চার দশক পর চলতি সপ্তাহে সরাসরি আলোচনায় অংশ নেয় লেবানন ও ইসরাইল। এ ব্যাপারে বৈরুত জানায়, এটি শান্তি আলোচনা নয়, বরং শত্রুতা কমানো ও লেবানিজ ভূখণ্ড থেকে ইসরাইলের সেনাদের প্রত্যাহার নিশ্চিত করার প্রচেষ্টামাত্র।
লেবাননের সেনাবাহিনী জানায়, নভেম্বরে শেষ নাগাদ ইসরাইল ৫ হাজার ১৯৮ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। এর মধ্যে ৬৫৭ বার বিমান হামলা চালানো হয়েছে। ইসরাইল বলছে, তাদের অভিযান হিজবুল্লাহর সদস্য ও অবকাঠামো লক্ষ্য করে চালানো হয়েছে, যাতে সংগঠনটি সামরিক সক্ষমতা পুনর্গঠন করতে না পারে।
যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী, উভয় পক্ষের শত্রুতামূলক কার্যক্রম বন্ধ করার কথা ছিল। লেবাননের দায়িত্ব ছিল ইসরাইলে হামলা ঠেকানো এবং ইসরাইলের প্রতিশ্রুতি ছিল আক্রমণাত্মক সামরিক অভিযান বন্ধ করা।
তবে ইসরাইলি বাহিনী এখনো লেবাননের অন্তত পাঁচটি স্থান দখলে নিয়ে সেখানে ঘাঁটি গেড়েছে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী সেসব জায়গা এখনও ছাড়েনি তারা।
