পশ্চিমা মিডিয়া নেটওয়ার্কগুলো যার মধ্যে অনেকগুলো ইসরাইল বা তার সমর্থকদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক রয়েছে তারা ইরান বিষয়ে জনমত গঠনের জন্য নির্দিষ্ট ভাষা এবং ধারণা ব্যবহার করছে।
ইরান সম্পর্কে মিডিয়া বক্তৃতা এবং জনপ্রিয় রাজনৈতিক সাহিত্য বিশেষ করে পশ্চিমা মিডিয়া এবং পশ্চিমের সাথে যুক্ত কিছু আঞ্চলিক মিডিয়া ইসরাইলের নীতি দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত। পার্সটুডের মতে এই নীতি যা ইসরাইল এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট বিশাল এই পশ্চিমা মিডিয়া নেটওয়ার্ক আমেরিকার সমর্থনে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং পক্ষপাতদুষ্ট ভাষা কাঠামো ব্যবহার করে ইরান সম্পর্কিত তথ্যগুলোকে বিকৃত করা হয়। আর এসবের লক্ষ্য হচ্ছে ইরান বিরোধী জনমত তৈরি করে বিশ্বব্যাপী উত্তেজনা সৃষ্টি করা।
ইসরাইল:ইরান বিরোধী অপপ্রচারের প্রধান স্থপতি
ইহুদিবাদী ইসরাইল ইরানের বিরুদ্ধে বৈরী নীতি তৈরির অন্যতম প্রধান অভিনেতা হিসাবে জনমত গঠনের জন্য গণমাধ্যমকে একটি হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে আসছে। এই পদ্ধতির তিনটি প্রধান লক্ষ্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বিশ্লেষণ করা যেতে পারে:
১. নিজের দখলদারিত্ব এবং বেআইনি কর্মকাণ্ড থেকে মনোযোগ সরানো: ইরানকে একটি বৈশ্বিক হুমকি হিসাবে তুলে ধরে ইসরাইল মানবাধিকার লঙ্ঘন,অবৈধ বসতি স্থাপন এবং ফিলিস্তিনি ভূমি দখল থেকে মনোযোগ সরানোর চেষ্টা করছে।
২. ইহুদিবাদী ঔপনিবেশিকতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাধা হিসেবে তেল আবিবের শাসক গোষ্ঠী ইরানের বিরুদ্ধে একটি আন্তর্জাতিক ঐকমত্য তৈরির চেষ্টা করছে। এ ক্ষেত্রে ইসরাইল ইরান-ভীতি বক্তৃতা প্রচার এবং ইরানের উপর কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ জোরদার করতে পশ্চিমের সঙ্গে মিলে গণমাধ্যমকে ব্যবহার করছে।
৩. এই অঞ্চলে নিজের কৌশলগত অবস্থানকে শক্তিশালী করা: ইরানকে এই অঞ্চলে অস্থিতিশীলতার প্রধান কারণ হিসেবে প্রচারের মাধ্যমে ইসরাইল নিজেকে একটি বৈধ অভিনেতা এবং স্থিতিশীলতার রক্ষক হিসাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছে।
ইসরাইল:ইরান বিরোধী প্রধান প্রচারযন্ত্র
পশ্চিমা মিডিয়া নেটওয়ার্ক যার মধ্যে এর অনেকগুলো ইসরাইল বা এর সমর্থকদের নিকটবর্তী প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত ইরানের প্রতি জনমত গঠনের জন্য নির্দিষ্ট ভাষা এবং ধারণা ব্যবহার করে আসছে। আন্তর্জাতিক আইনজীবী রেজা নাসরির মতে এই ভাষা নীতির কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক এখানে তুলে ধরা হল:
লক্ষ্যযুক্ত শব্দ গঠন:
-'সরকার' এর পরিবর্তে শাসন শব্দটি ইরানের সরকারি ব্যবস্থার বৈধতা হ্রাস করার লক্ষ্যে ব্যবহৃত হয়। ইসরাইল এবং পশ্চিমারা আন্তর্জাতিক সমাজে একটি বৈধ অভিনেতা হিসাবে ইরানের অবস্থান হ্রাস করতে এটি ব্যবহার করতে চায়।
-জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের পরিবর্তে 'প্রক্সি' শব্দটি ব্যবহারের মাধ্যমে আঞ্চলিক প্রতিরোধ অক্ষগুলোকে অসম্মান করার জন্য সাজানো হয়েছে এবং এই প্রতিরোধ অক্ষের প্রতি ইরানের সমর্থনকে একটি অবৈধ হস্তক্ষেপ হিসাবে উপস্থাপন করে৷
- প্রতিরোধ অক্ষের জন্য 'সন্ত্রাসী' বা 'মিলিশিয়া' শব্দ ব্যবহার করে ইসরাইলের সঙ্গে যুক্ত পশ্চিমা মিডিয়াগুলো দখলদারিত্ব এবং ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এই প্রতিরোধ অক্ষের ভূমিকাকে হ্রাস করার চেষ্টা করছে৷
আঞ্চলিক পরিস্থিতির ব্যাখ্যায় দ্বৈত নীতি
- ইরানের আঞ্চলিক সম্পর্ক বা কর্মকাণ্ড যেমন তার প্রতিবেশীদের সমর্থন করা বা বিদেশী হস্তক্ষেপকারীদের প্রতিহত করার নীতিকে ইসরাইল আঞ্চলিক হস্তক্ষেপকারী হিসাব উপস্থাপন করার চেষ্টা করে থাকে। অন্যদিকে ইসরাইল বা আমেরিকার আঞ্চলিক সহযোগিতাকে 'ঐক্য' এবং "স্থিতিশীলতা সমর্থনকারী" হিসেবে বিশ্ব সমাজে বে বি করার চেষ্টা করেছী জনমহ ব্যাখ্যা করা হয়।
-ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে "পারমাণবিক হুমকি" হিসাবে উপস্থাপন করা হয়েছে অন্যদিকে ইসরাইলের পারমাণবিক সামরিকতা যা সম্পূর্ণরূপে আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানের বাইরে মিডিয়া থেকে কার্যত সরানো হয়েছে।
- সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অপমানসূচক শব্দের ব্যবহার:
ইরানের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে "মোল্লা" এবং "আয়াতুল্লাহ"-এ পরিণত করার মাধ্যমে পশ্চিমা মিডিয়া ইরানের রাজনৈতিক জটিলতা উপেক্ষা করার চেষ্টা করে এবং এর একটি সরল চিত্র উপস্থাপন করে যা বৈধতা হ্রাস করার লক্ষ্যে সহায়তা করে।
ইসরাইলি নীতির হাতিয়ার হিসেবে পশ্চিমা গণমাধ্যমের ব্যবহার
এটা জানা উচিত যে দুর্ভাগ্যবশত পশ্চিমা মিডিয়াগুলো কেবল ইসরাইলি আলোচনার বার্তাবাহক নয় আসলে এই অবৈধ সত্তার রাজনীতির ডান হাত হিসাবে কাজ করে আসছে। নির্বাচনীভাবে সংবাদ বাছাই,বিশ্লেষণ এবং পক্ষপাতমূলক লেবেলিংয়ের মাধ্যমে এই মিডিয়াগুলো ইসরাইলের স্বার্থের দিকে জনমতকে পরিচালিত করার চেষ্টা করে।
-সংকটের অক্ষকে বিকৃত করা: ইরানকে "অস্থিতিশীলতার কারণ" হিসেবে তুলে ধরে পশ্চিমা মিডিয়া নেটওয়ার্ক ইসরাইলি দখলদারিত্ব এবং মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপসহ আঞ্চলিক সংকটের প্রকৃত শিকড়কে উপেক্ষা করে।
-প্রতিরোধের বৈধকরণ: ইসরাইল আঞ্চলিক প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোকে বৈধতা দেওয়ার জন্য পশ্চিমা মিডিয়া ব্যবহার করে এবং "সন্ত্রাসী" লেবেল দিয়ে অবৈধ দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে এই বৈধ সংগ্রামকে পরিণত করার চেষ্টা করে।
অবশেষে ইসরাইলের সফট পাওয়ারের হাতিয়ার হিসেবে গণমাধ্যমের ব্যবহার
ইসরাইল ও আমেরিকার সফ্ট পাওয়ার বা মনস্তাত্বিক যুদ্ধের কৌশলের অংশ হিসেবে পশ্চিমা মিডিয়া ইরান-বিরোধী প্রচারণা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এই ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য প্রণোদিত আলোচনা, টার্গেটেড ভাষা এবং ধারণা ব্যবহার করে ইরান সম্পর্কে তথ্যগুলোকে কেবল বিকৃত করছে না বরং ইসরাইলকে স্পটলাইট থেকে তার অবৈধ কর্মগুলোকে আড়াল করার সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে।
যাইহোক এই ভাষাগত কাঠামোর মধ্যে মুক্ত এবং অ-পশ্চিমা মিডিয়ার সংশোধন এবং বিকল্প ব্যাখ্যা প্রদান এই প্রবণতা মোকাবেলার ক্ষেত্রে একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হতে পারে। জটিল আঞ্চলিক বাস্তবতা প্রতিফলিত করার চেষ্টা করা এবং বিদ্যমান বিকৃতিগুলো সরূপ উন্মোচন করা বা সমালোচনা করার মাধ্যমে আঞ্চলিক সংকটের শিকড় সম্পর্কে আরও ভাল বোঝাপড়ার ভিত্তি তৈরি করতে পারে।
পার্সটুডে