নিজের নাক কেটে রাশিয়ার যাত্রা ভঙ্গ করার পশ্চিমা নীতি যেভাবে বুমেরাং হচ্ছে!

ইউক্রেনে রুশ সেনা অভিযান পঞ্চম মাসেও অব্যাহত রয়েছে। এই সংকটকে ঘিরে পাশ্চাত্যের নানা ধরনের দ্বিমুখী আচরণ ও নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা তথা রাশিয়ার যাত্রা ভঙ্গ করার ভুল নীতির নানা খেসারতও স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

এইসব খেসারতের মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক মন্দা, বিশ্বের কোটি কোটি পরিবারের দরিদ্র হয়ে যাওয়া, বহু মানুষের মৃত্যু এবং ইউক্রেনের কয়েক মিলিয়ন মানুষের শরণার্থী হওয়া ইত্যাদি। 


সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত তেলের রিজার্ভ ৪০ বছরের ইতিহাসে সর্বনিম্ন মাত্রায় নেমে গেছে, মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে ফ্রান্সে, গ্যাসের সংকট সামলাতে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করার পরিকল্পনা নিয়েছে ব্রিটেন, ইউক্রেন থেকে শরণার্থীদের ঢল নামার পাশাপাশি বেকারত্ব বেড়েছে জার্মানিতে, রাশিয়ার হাতে বন্দি হয়েছে ইউক্রেনের ছয় হাজার সেনা-এসবই হচ্ছে ইউক্রেন সংকটের সঙ্গে সম্পর্কিত সাম্প্রতিক কয়েকটি সংবাদ শিরোনাম।

রাশিয়ার গ্যাস ও তেলের ওপর পাশ্চাত্যের নির্ভরতার কারণে রাশিয়ার এ দুই জ্বালানীর ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা জ্বালানী সংকটকে তীব্রতর করেছে পাশ্চাত্যে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত তেলের রিজার্ভ ৪০ বছরের ইতিহাসে সর্বনিম্ন মাত্রায় নেমে যাওয়ায় তা বাইডেন সরকারর জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অপরিশোধিত তেলের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় মার্কিন সরকার কৌশলগত তেলের রিজার্ভ থেকে তেল উত্তোলন করছে যাতে দামের ঊর্ধ্বগতি কিছুটা কমিয়ে আনা যায়। দেশটিতে এখন প্রতি গ্যালন তেলের দাম পাঁচ ডলার যা দেশটির ইতিহাসে নজিরবিহীন। ৫১ শতাংশ মার্কিন নাগরিক মনে করছে যে ইউক্রেনকে সহায়তা দেয়ার চেয়ে মার্কিন নাগরিকদের ক্রয়-ক্ষমতা বাড়ানোকেই গুরুত্ব দেয়া উচিত।

জ্বালানী সংকটে ব্রিটেনও দিশাহারা হয়ে ইউরোপের বন্ধু দেশগুলোতেও গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। 

ইউক্রেন সংকটের এতসব ধ্বংসাত্মক প্রভাব সত্ত্বেও সুইডেন ও ফিনল্যাণ্ডকে ন্যাটো জোটভুক্ত করার কথা ঘোষণা দিয়ে আগামী দিনগুলোতে ইউক্রেনে ৮০কোটি ডলার মূল্যের অস্ত্র পাঠানো হবে বলে খবর দিয়েছেন জো বাইডেন। ব্রিটেনও নজিরবিহীন মুদ্রাস্ফীতি ও নিত্য-প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রবল ধকলে থেকেও ইউক্রেনকে আরও একশ কোটি পাউন্ড সামরিক সহায়তা দিবে বলে জানিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ইউক্রেনকে অস্ত্র দেয়ার ক্ষেত্রে মার্কিন সরকারের পরেই সবচেয়ে বড় যোগানদাতা হচ্ছে ব্রিটেন।

শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক জন মার্শিমার ইউক্রেনকে ছাইয়ের স্তূপে পরিণত করার জন্য মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা জোটের প্রচেষ্টার কঠোর নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ইউক্রেনের ব্যাপারে মার্কিন সরকার ও তার মিত্ররা যে নির্বুদ্ধিতাসুলভ নীতি গ্রহণ করেছে ইতিহাস সে বিষয়ে কঠোর রায় দেবে। 

পাশ্চাত্যের দ্বিমুখী নীতির শিকার খোদ ইউক্রেনের নাভিশ্বাস চরমে উঠেছে! রাশিয়া-ইউক্রেন আলোচক দলের সদস্য ইউক্রেনের এক বড় কর্মকর্তা বলেছেন, প্রতিদিন প্রায় এক হাজার ইউক্রেনীয় সেনা হতাহত হচ্ছে যার মধ্যে নিহতের সংখ্যা ২০০ থেকে ৫০০। কয়েক মিলিয়ন ইউক্রেনীয় শরণার্থীর জীবনও বেশ উদ্বেগজনক। আসলে পাশ্চাত্য ইউক্রেনকে অর্থ, অস্ত্র ও কূটনৈতিক সহায়তা দিয়ে রাশিয়াকে একটি দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধে মাতিয়ে রাখতে চায়। কিন্তু পাশ্চাত্যের হস্তক্ষেপকামী নীতি ও নিষেধাজ্ঞার নীতি তাদের জন্যই বুমেরাং হচ্ছে।! খবর পার্সটুডে./এনবিএস/২০২২/একে

news