২০২৪ সালে যুক্তরাজ্যে আশ্রয় প্রার্থনায় দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে পাকিস্তানি নাগরিকরা। দেশটির সাড়ে দশ হাজারেরও বেশি পাকিস্তানি আশ্রয়ের আবেদন করেছেন, যার মধ্যে ৫১ শতাংশ প্রাথমিক অনুমোদন পেয়েছেন। বিপরীতে, বাংলাদেশিদের অনুমোদনের হার মাত্র ১৮ শতাংশ, যা একেবারে তলানিতে।
দীর্ঘমেয়াদি অভিবাসন প্রবণতায়ও পাকিস্তানিরা এগিয়ে। তারা এখন ভারতীয় ও নাইজেরীয় নাগরিকদের পরেই তৃতীয় বৃহত্তম ইইউ-ভুক্ত নয় এমন দেশের অভিবাসী গোষ্ঠী হিসেবে উঠে এসেছে।
সেপ্টেম্বরের সিদ্ধান্তে নীতিতে বড় প্রভাব
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ব্রিটিশ সরকার একটি তাৎপর্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়—শরণার্থী পরিবার পুনঃএকত্রীকরণ বা ফ্যামিলি রিইউনিয়ন রুটে নতুন আবেদন সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইগ্রেশন অবজারভেটরির নতুন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে এই ফ্যামিলি রিইউনিয়ন ভিসা পাওয়া ৯২ শতাংশই নারী ও কন্যাশিশু। সাধারণত এ রুটে নারীরা তাদের স্বামী বা বাবার সঙ্গে যুক্তরাজ্যে যোগ দিতে পারতেন।
গবেষণায় বলা হয়েছে, এই পথ বন্ধ হওয়ায় আশ্রয় প্রার্থীদের মধ্যে এখন পুরুষদের অনুপাত বাড়বে, এবং সাময়িকভাবে লিঙ্গ ভারসাম্য পরিবর্তিত হবে।
গবেষক ড. নুনি জর্গেনসেন সতর্ক করে বলেছেন, “এই পরিবর্তনের ফলে আরও বেশি নারী হয়তো অবৈধ পথে ব্রিটেনে প্রবেশের চেষ্টা করবেন, যা ঝুঁকি বাড়াবে।”
ভিসা অনুমোদনে পুরুষদের আধিপত্য বাড়ছে
এই নীতিগত পরিবর্তনটি এসেছে এমন এক সময়ে, যখন ভিসা অনুমোদনের ক্ষেত্রে পুরুষদের প্রাধান্য স্পষ্টভাবে বেড়েছে।
২০১৬ সালের পর প্রথমবারের মতো, ২০২৪ সালে ৫১ শতাংশ ভিসা আবেদন পুরুষদের পক্ষে গিয়েছে, যেখানে নারীদের অনুমোদনের হার ৪৯ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি মূলত পুরুষ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধির ফল।
তবে, একই বছরে সরকার আন্তর্জাতিক ছাত্রদের নির্ভরশীল ভিসা নিষিদ্ধ করায় নারীদের আবেদন উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। ফলে প্রধান আবেদনকারী হিসেবে নারীদের সংখ্যা নেমে আসে ৪৬ শতাংশে।
আশ্রয় আবেদন রেকর্ড পর্যায়ে
২০২৪ সালে যুক্তরাজ্যে আশ্রয়ের আবেদন জমা পড়েছে ১ লাখ ৮ হাজার ১৩৮টি, যা দেশটির সাম্প্রতিক ইতিহাসে অন্যতম সর্বোচ্চ।
সবচেয়ে বেশি আবেদন এসেছে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ইরান থেকে।
শরণার্থী ও সামাজিক সুবিধার চিত্র
সরকারি তথ্যমতে, ইউনিভার্সাল ক্রেডিট দাবিদারদের মধ্যে শরণার্থী মর্যাদাপ্রাপ্তদের হার ১.৫ শতাংশ।
এই দাবিদারদের মধ্যে ৭৬.৪ শতাংশই শ্বেতাঙ্গ জাতিগোষ্ঠীর।
অন্যদিকে, পাকিস্তান ২১% এবং বাংলাদেশ ২৭% থেকে আগত নতুন অভিবাসীরা তুলনামূলকভাবে বঞ্চিত পরিবারের মধ্যে বসবাসের ঝুঁকিতে রয়েছেন।
এটি প্রমাণ করে, বৈধভাবে বসবাসের অধিকার পাওয়ার পরও তাদের সরকারি কল্যাণ সহায়তার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।
অভিবাসন বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাজ্যের এই নতুন নীতিগুলো দক্ষিণ এশীয় অভিবাসীদের মধ্যে বৈষম্যের একটি নতুন ধারা তৈরি করছে—যেখানে পাকিস্তানিরা সুযোগ পাচ্ছেন, আর বাংলাদেশিরা ক্রমেই পিছিয়ে যাচ্ছেন।
