এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ০৯ জুন, ২০২২, ০৬:৫৫ পিএম
চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বৃদ্ধি করে নূন্যতম ৩৫ করাসহ ৪ দফা বাস্তবায়ন এবং লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত যুবকদের বেকারত্ব থেকে মুক্তির লক্ষ্যে ২০২২-২৩ অর্থ বছরের বাজেট অধিবেশনে যুব বান্ধব বাজেট পেশ করার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ ছাত্র যুবকল্যাণ পরিষদ।
বৃহস্পতিবার (৯ জুন) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান সংগঠনটি। সংগঠনের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন প্রধান সমন্বয়ক মুজাম্মেল মিয়াজী। অন্যান্য সমন্বয়কের মাঝে উপস্থিত ছিলেন সুরাইয়া ইয়াসমিন, ইউসুফ আলী, মো. জালাল, মো. মোশারফ
লিখিত বক্তব্যে যুব সমাজের কথা বিবেচনায় যুব বান্ধব বাজেট পেশের দাবি জানানো হয় এবং দাবি না মানলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুশিয়ারি দেয়া হয়। এতে বলা হয়, এই সরকার ক্ষমতায় আসার আগে কথা দিয়েছিল তাঁরা ক্ষমতায় এলে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বৃদ্ধি করবে এবং ১ কোটি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে। বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্রকল্যাণ পরিষদ দীর্ঘ সময় ধরে আন্দোলন করে আসছে এবং আন্দোলন থেকে জেল জুলুম নির্যাতন সহ্য করে আসছে। সরকার প্রায় ২৮ লক্ষ শিক্ষিত যুব সমাজ ও প্রায় ৪ কোটি যুব সমাজের সাথে কথা দিয়ে কথা রাখেনি। বারবার বৃহৎ এই যুব সমাজের সাথে তালবাহানা, তামাশা এবং অপমান করেই আসছে এই সরকার। সরকার মুখে মুখে যুব সমাজকে কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা হওয়ার কথা বললেও বাস্তব চিত্র পুরো উল্টো। যুব সমাজ ধ্বংস হওয়ার মত অনেক চিত্র এখন সবার সামনে দৃশ্যমান। বেকারত্বের অভিশাপে অসংখ্য বেকার আত্মহত্যার পথও বেছে নিয়েছে। এইভাবে প্রতি বছরে হাজার হাজার যুবক আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। একটি জরিপে (সম্প্রতি করা আচল ফাউন্ডেশনের জরিপ) দেখা গেছে বেকারত্ব, সামাজিক অবক্ষয়, পারিবারিক কলহ , আর্থিক সংকট এবং বিভিন্ন কারনে গত কয়েক বছরে প্রায় ১৪ হাজার ৫০০ লোক আত্মহত্যা করেছে। এর অনেকাংশই বেকার যুব সমাজ। সরকারের এই নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নেই।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দৃশ্যমান বাংলাদেশ এগিয়ে গেলেও দীর্ঘ সময় বিবেচনা করলে বাংলাদেশ আসলে ধ্বংসের মুখে যাচ্ছে। কারণ, যুব সমাজই যদি ধ্বংস হয়ে যায় তবে বাংলাদেশ কিভাবে উন্নয়নের পথে যাবে। এই মুহূর্তে যুব সমাজ আইসিউতে (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) রয়েছে। এই যুব সমাজকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে দরকার যুব বান্ধব বাজেট। তবেই সাড়ে ৪ কোটি যুব সমাজের মুক্তি মিলবে।
অন্যদিকে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা নির্দিষ্ট রেখে সরকার লক্ষ লক্ষ যুবককে শিকলবন্দী করে রেখেছে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাংলাদেশে মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধির সাথে সাথে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বৃদ্ধি পেয়ে আসছে। সেই হিসাবে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা এখন হওয়ার কথা ৪২ কিন্তু আমরা চেয়েছি মাত্র ৩৫। এছাড়া বিশ্বের উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা পর্যায়ক্রমে ৩৫, ৪০, ৪৫, ৫৯ এবং কোন কোন দেশে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা - ই নেই। আর এই সরকারও বারবার কথা দিয়েছে ক্ষমতায় আসলে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বৃদ্ধি করবে কিন্তু দুঃখের বিষয় সরকার এখনও তালবাহানা করেই চলছে। তাই বাংলাদেশ ছাত্র - যুব কল্যাণ পরিষদ পরিষ্কারভাবে বলতে চায়, যদি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বৃদ্ধি না করা হয় এবং যুব বান্ধব বাজেট পেশ করা না হয় তবে সরকারের জন্য কঠিন সময় অপেক্ষা করছে।
সরকারের প্রতি হুশিয়ারি উচ্চারণ করে এতে আরো বলা হয়, দীর্ঘদিন যুব সমাজ ধৈর্য্য ধরে এসব সহ্য করে আসছে কিন্তু এই সীমানা ক্রস বা অতিক্রম করলে সরকারের জন্য বিপদ বয়ে আনবে। আমরা বলতে চাই কিছুতেই তালবাহানা না করে আসন্ন বাজেটের মধ্যে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বৃদ্ধি সহ যুব বান্ধব বাজেট বাস্তবায়ন করুন।
সংবাদ সম্মেলনে সুস্পষ্ট ৪ দাবি তুলে ধরেন প্রধান সমন্বয়ক মুজাম্মেল মিয়াজী। দাবিসমূহ হলো→১. চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বৃদ্ধি করে নূন্যতম ৩৫ বছরে উন্নীত করতে হবে; ২. চাকরিতে আবেদনের ফি কমিয়ে ৫০-১০০ টাকার মধ্যে নির্ধারণ করতে হবে; ৩. নিয়োগ পরীক্ষা সমূহ জেলা কিংবা বিভাগীয় পর্যায় নিতে হবে; ৪. সকল নিয়োগ পরীক্ষা ৩ থেকে ৬ মাসের মধ্যে সম্পন্ন সহ করে সু - নির্দিষ্ট নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে হবে।