এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ০৪:০৯ পিএম
প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আউয়ালসহ অন্যান্য কমিশনারদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন রাষ্ট্রপতি। বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠানো হলে তা গ্রহণ করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
এর আগে দুপুর ১২টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এরপর ১২টা ১২ মিনিটে সাংবাদিকদের সামনে পদত্যাগ পাত্রে সই করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আউয়াল।
পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়া নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশিদা সুলতানা ও মো. আনিছুর রহমানের গাড়িতে জুতা নিক্ষেপ করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন ভবন থেকে বের হওয়ার সময় এ ঘটনা ঘটে।
বিএনপিবিহীন নির্বাচন করেন আউয়াল একদলীয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৯ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২৩, স্বতন্ত্র ৫৬, জাতীয় পার্টি ১১, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি ও কল্যাণ পার্টি একটি করে আসনে জয়ী হয়।
হাবিবুল আউয়াল কমিশন হলো বাংলাদেশের ত্রয়োদশ নির্বাচন কমিশন। ২০২২ সালের অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ২৬ ফেব্রুয়ারি এই কমিশন গঠন করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ এই কমিশনের সদস্য ৫ জন। এই কমিশনের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী এই কমিশনের মেয়াদ ৫ বছর। কিন্ত আড়াই বছরের মাথায় পদত্যাগ করেন।
হাবিবুল আউয়াল কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর সংলাপ আয়োজনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম শুরু হয়। ২০২২ সালের ১৩ মার্চ শিক্ষাবিদদের সাথে ১ম সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। সংলাপে আমন্ত্রিত ৩০ শিক্ষাবিদের ১৭ জনই অংশ নেননি।
২২ মার্চ বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। এতে আমন্ত্রিত ৩৭ জনের মধ্যে ১৯ জন অংশগ্রহন করেন। ৫ এপ্রিল প্রথম কমিশন সভা অনুষ্ঠিত হয়। ২৫ মে বিশিষ্ট বিশেষজ্ঞ, গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে বৈঠকে বসে নির্বাচন কমিশন। ২৩ আগস্ট সর্বোচ্চ ১৫০টি আসনে ইভিএমে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেয়। ১১ সেপ্টেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রস্তুত করে।
দায়িত্ব নেওয়ার পরই ওই বছরের ১২ অক্টোবর গাইবান্ধার একটি আসেন উপনির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির পর ওই নির্বাচন বাতিল করে কমিশন। এরপর কয়েকটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিরোধী রাজনৈতিক জোট বিএনপিসহ অন্যান্য দল। তবুও সে সব নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি অনিয়মের পরও কোন ব্যবস্থা নেয়নি কমিশন।
সবশেষ গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দল নিবন্ধনে অনেকগুলো দল আবেদন করে। শর্ত পূরণ করার পরও চারটি রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন না দেওয়ার অভিযোগ ওঠে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে।
গত সাতই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম থাকলেও দিন দেশে ৪১ শতাংশের বেশি ভোট পড়ার তথ্য জানানোর পর এই কমিশন নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা তৈরি হয়।
গত পাঁচই আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর গত এক মাসে তিনটি রাজনৈতিক দল- আমার বাংলাদেশ পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ ও নাগরিক ঐক্যকে নিবন্ধন দেয় কমিশন।
২০২৩ সালে ৪ অক্টোবর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা গেলে কে নির্বাচনে এল, কে এল না, সেটা নিয়ে মাথা ঘামাবেন না। ব্যাপকসংখ্যক ভোটার ভোট দিলেই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলা যাবে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, ‘ইসি নির্বাচনের লিগ্যালিটি (আইনগত দিক) দেখবে, নির্বাচনের লেজিটিমেসি (বৈধতা/ন্যায্যতা) নিয়ে মাথা ঘামাবে না।’
সিইসি বলেন, ‘যদি এক শতাংশ ভোট পড়ে এবং ৯৯ শতাংশ নাও পড়ে, আইনগতভাবে নির্বাচন সঠিক হবে। লেজিটিমেসির ব্যাপারটা ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু আইনত নির্বাচন সঠিক হবে। লেজিটেমেসি নিয়ে ইসি মাথা ঘামাবে না। ইসি দেখবে, ভোটটা অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে— এক শতাংশও যদি ভোট পড়ে এবং ভোটার যারা আসছে, তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়নি, তাদের ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়েছে, তারা নির্বিঘ্ন ও স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।’