এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ৩০ এপ্রিল, ২০২২, ০৩:০৪ পিএম
পাঞ্জাবে শিখ- হিন্দু সংঘর্ষে পাথর নিক্ষেপ- তলোয়ারবাজি, পুলিশের গুলিবর্ষণ, কারফিউ জারি
ভারতের পাঞ্জাবের পাতিয়ালায় শুক্রবার খালিস্তান বিরোধী মিছিলে মুখোমুখি হয় শিখ ও হিন্দু সংগঠন। শুক্রবার হিন্দুত্ববাদী একটি সংগঠন মিছিল বের করার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় কিছু শিখ সংগঠন তাদের বিরোধিতা শুরু করে। এর জেরে পরিবেশ এতটাই খারাপ হয়ে যায় যে দু’পক্ষের মধ্যে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ সময় হাতে আঘাত পান থানার এক কর্মকর্তা। এরপর পরিস্থিতি সামাল দিতে শূন্যে গুলি চালান পুলিশের এসএসপি। পারসটুডে
ওই ঘটনার পর পাতিয়ালায় কারফিউ জারি করেছেন জেলাশাসক। এটি শুক্রবার রাত ৭টা থেকে আগামীকাল শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত প্রযোজ্য হবে। গোটা জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। একইসময়ে চণ্ডীগড়ে পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান। সেখানে তিনি ওই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
খালিস্তান বিরোধী কুশপুত্তলিকা পোড়ানোর প্রস্তুতি নিয়েছিল হিন্দুত্ববাদী শিবসেনা। বিষয়টি জানতে পেরেই বিক্ষোভ শুরু করেন খালিস্তান সমর্থকরা। সেখানে পুলিশ তাদের থামিয়ে ফেরত পাঠায়। তবে শিখ সংগঠনের সদস্যরা তলোয়ার নিয়ে কালী মাতার মন্দিরের কাছে পৌঁছে যান। এখানে উভয়পক্ষের মধ্যে প্রচুর ইট-পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।
এ সময় থানার এসএইচও করণবীর শিখ বিক্ষোভকারীদের থামানোর চেষ্টা করলে তার হাতে আঘাত লাগে। এরপরেই ঘটনাস্থলে পৌঁছন এসএসপি নানক সিং। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য তিনি শূন্যে গুলিবর্ষণ করেন।
হিন্দু সংগঠনের নেতা হরিশ সিংলা বলেছেন, পাঞ্জাব পুলিশ এবং আম আদমি পার্টি সরকারের উচিত ওই লোকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। একইসময়ে, জাসবিন্দর সিং রাজপুরা বলেন, শিখ সংগঠনগুলো বহুদিন ধরে আবেদন করেছিল যে কিছু সংগঠন শিখ রাজের বিরুদ্ধে পরিবেশ নষ্ট করছে। প্রশাসনের উচিত ছিল ওই লোকদের গ্রেফতার করা, যাতে পরিবেশ নষ্ট না হয়।
বর্তমানে এখানে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। শিখ সংগঠনগুলোকে বিক্ষোভ করতে এবং হিন্দু সংগঠনগুলোকে মিছিল করতে বাধা দিয়েছে পুলিশ। ঘটনাস্থলে ভারী পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। একইসময়ে, শিখ সংগঠনগুলো পাতিয়ালার পাওয়ারা চকে বিক্ষোভ শুরু করেছে। তারা ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান বলেছেন, পাতিয়ালার ঘটনা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এ বিষয়ে আমি পুলিশের মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা বলেছি। এলাকায় শান্তি ফিরে এসেছে। সরকার পুরো বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করছে। কাউকে শান্তি বিঘ্নিত করতে দেওয়া হবে না। পাঞ্জাবে আমাদের কাছে শান্তি ও ভ্রাতৃত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পাতিয়ালা রেঞ্জের পুলিশের আইজি রাকেশ আগরওয়াল জানিয়েছেন, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কেউ গুজব ছড়ানোর কারণে উভয়পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। ‘এসএইচও’র হাত কাটার গুজবও রয়েছে। পরিস্থিতি পুরোপুরি শান্ত করার চেষ্টা চলছে। ঘটনাস্থলে পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশকে শূন্যে গুলি চালাতে হয় বলেও জানান তিনি।
পাঞ্জাব বিধানসভায় বিরোধী দলের নেতা প্রতাপ সিং বাজওয়া বলেছেন, রাজ্যে সম্পূর্ণ নৈরাজ্যের পরিবেশ রয়েছে। পাতিয়ালার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। গত একমাস থেকে পাঞ্জাবের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর অবিলম্বে ডিজিপির সাথে পাতিয়ালায় যাওয়া উচিত। কংগ্রেস বিধায়ক সুখপাল খাইরা বলেছেন, পাঞ্জাবের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। পাতিয়ালার ঘটনাটি সম্পূর্ণ গোয়েন্দা ব্যর্থতা। এখন সময় এসেছে ভগবন্ত মানকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য মুক্ত হাত দেওয়া উচিত। পাঞ্জাবের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং বলেছেন, দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের পরে পাতিয়ালায় উত্তেজনার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। পাতিয়ালার মানুষ শান্তিপ্রিয়। আমি আশা করি পাঞ্জাব পুলিশ আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।