আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে ঢাকা শহরে ছাত্র আন্দোলনের সব মামলা প্রত্যাহার হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। এ ছাড়া সাবেক সরকারপ্রধানসহ জুলাই হত্যাকাণ্ডে যাদের নাম আসবে, তাদের সবার বিচার হবে বলে স্পষ্ট জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার (১৪ আগস্ট) সচিবালয়ে প্রেস কনফারেন্সে এ কথা জানান তিনি।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, আসামিরা পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুক না কেন তাদের বিচার হবে। এছাড়া জুলাই গণহত্যার বিচারের সত্যিকারের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের সর্বাত্মক তত্ত্বাবধানে আমাদের ইনভেস্টিগেশন টিম কাজ করবে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। ড. আসিফ নজরুল বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গণহত্যা ও গুলি বর্ষণের ঘটনায় বিচারের জন্য ইতোমধ্যে কিছু মামলা হয়েছে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এসব ঘটনার বিচার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আসিফ নজরুল বলেন, গণহত্যা ও গুলি বর্ষণের ঘটনায় বিচারের জন্য ইতোমধ্যে কিছু মামলা হয়েছে। আমরা নিজেরা, রাজপথে থাকা বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠন, জনগণের বিভিন্ন গোষ্ঠী দাবি করেছেন যে, এটাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে বিচার করার সুযোগ আছে কি না। আমরা সেটা খতিয়ে দেখেছি।
তিনি বলেন, '১৯৭৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন আছে, সেটা পরে ২০০৯ ও ২০১৩ সালে সংশোধনী হয়েছে। সেই আইনে আমরা জুলাই গণহত্যা; আগস্টের প্রথম পাঁচদিনের গণহত্যাও বোঝাচ্ছি। এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের জন্য ইতোমধ্যে ছোটখাটো গবেষণা করেছি। আমরা দেখেছি, এই আইনের অধীনে হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তি ও যারা আদেশ দিয়েছেন এবং যারা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন, তাদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনা সম্ভব।'
তিনি আরও বলেন, 'আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একটি ইনভেস্টিগেশন টিম আছে, প্রসিকিউশন টিম আছে। এগুলোকে আমরা রিঅর্গানাইজড করার চেষ্টা করছি, আদালতটা একটু পরে করব। ইনভেস্টিগেশন আমরা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে করার চেষ্টা করছি। জাতিসংঘ থেকে বারবার আমাদের সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
বিচারের সত্যিকারের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার জন্য জাতিসংঘের সর্বাত্মক তত্ত্বাবধানে আমাদের ইনভেস্টিগেশন টিম কাজ করবে। সেটার লক্ষ্যে সব উদ্যোগ গ্রহণ করব।'
'ঢাকায় জাতিসংঘের আসাবিক প্রতিনিধির সঙ্গে মিটিং করার সিদ্ধান্ত হয়েছে, তারিখ চূড়ান্ত হয়নি। সহযোগিতা চাইবো। এ ছাড়া, আমাদের আরও উচ্চ পর্যায় থেকে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট সংস্থা আছে, উনাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। আশা করছি, দ্রুত এটা শুরু করতে পারব,' বলেন তিনি।
তিনি বলেন, 'আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি বিচার করব।
জুলাই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের জন্য পৃথিবীর যে দেশ থেকে বিশেষজ্ঞ আসতে চায় তাদেরকে আসার সুযোগ দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে জাতিসংঘের সহযোগিতা নেওয়া হবে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, যাদের আদেশে এসব হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, তাদের মধ্যে যারা সর্বোচ্চ ব্যক্তি ছিল তাদেরও এই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার হবে।
তিনি আরো বলেন, গণ আন্দোলনের জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মিথ্যা এবং হয়রানিমূলক যেসব মামলা হয়েছে সেগুলো প্রত্যাহারের বিষয় সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ মাঠে না থাকায় সেটা হয়নি।
তিনি জানান, আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সারাদেশের সব মামলা প্রত্যাহার করা হবে। একইসঙ্গে প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের মামলা এবং মাহমুদুর রহমানের মামলা আগামীকালকেই উইথড্র করা হবে।
উপদেষ্টা বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসে সব নিয়োগ দলীয় ভিত্তিতে হয়েছে। সেগুলো ঠিক করার চেষ্টা চলছে। সব বিচার বিভাগের কর্মকর্তার দেশে বিদেশি সব সম্পদের হিসেব আগামী ১০ কর্ম দিবসের মধ্যে দিতে হবে।