অর্থসংকটে অলিম্পিক বাছাই খেলতে মেয়ে ফুটবলাররা মিয়ানমারে পাঠাচ্ছেনা বাফুফে

ছয় মাস আগে মেয়েদের হাত ধরেই এসেছিল দেশের ফুটবলের অন্যতম বড় অর্জন। সাফজয়ী মেয়েদের ‘ছাদখোলা বাস’ এ সম্মান দেয় বাফুফে। পরবর্তীতে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকেও সংবর্ধনা পায় সাবিনা-কৃষ্ণা-সানজিদারা। দেশের ফুটবলের এতো বড় অর্জন এনে দেওয়া সেই মেয়েরাই এখন অর্থসংকটে অলিম্পিক বাছাই খেলতে মিয়ানমারে যেতে পারছে না।

হঠাৎ কেনো অর্থ সংকট দেখা দিলো বাফুফেতে, এমন প্রশ্নের জবাবে বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ বলেন, অলিম্পিক বাছাইয়ের এই খেলাটি হওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশে। কিন্তু চার সপ্তাহ আগে এটি মিয়ানমারে করার সিদ্ধান্ত নেয় এএফসি। আর সে কারণেই সমস্যায় পড়েছে বাফুফে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে খেলা হলে বিমান ভাড়া, হোটেল ভাড়াসহ আরও অনেক খরচ লাগতো না বাফুফের। কিন্তু মিয়ানমারে হওয়ায় কোটি টাকার মতো খরচ হবে বাফুফের। টুর্নামেন্টের নিয়ম অনুযায়ী, বাছাই পর্বে অংশ নেয়া কোনো দলেরই কোনো খরচ বহন করবে না স্বাগতিক দেশ। ফলে, এই টুর্নামেন্ট শেষ করে আসতে প্রায় এক কোটি টাকার মতো খরচ হবে বাংলাদেশের। সেই টাকা এই মুহুর্তে বাফুফের হাতে নেই।

জাতীয় দলের জন্য ফিফা থেকে টাকা পাচ্ছে বাফুফে, তাছাড়া বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিও রয়েছে বাফুফের। তারপরও কেনো এই অর্থ সঙ্কট এমন প্রশ্ন অনেকেরই। বাফুফের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ফিফা জাতীয় দলের জন্য বছরে চার ভাগে টাকা দেয়।  এবার প্রথমভাগে যে রবাদ্দ পেয়েছিলাম, বয়সভিত্তিক দু-তিনটি টুর্নামেন্ট করে তা শেষ হয়ে গেছে। আবার পৃষ্ঠপোষক, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এবং অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের কাছ থেকেও আমরা ইতিবাচক কোনো সাড়া পাইনি।

তবে বাফুফের এই বক্তব্য মানতে পারছেন না ফুটবল কোচ এবং বাফুফের নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য হাসানুজ্জামান খান বাবলু। তিনি বলেন, বর্তমান কমিটি ফুটবলকে এগিয়ে নিতে যে পুরোপুরি ব্যর্থ, মেয়েদের মিয়ানমারে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত তারই প্রমাণ।  বাফুফে সভাপতির সমালোচনা করে বাবলু বলেন, চেয়ারে বসার জন্য যারা ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকা খরচ করতে পারে, তারা টাকার অভাব দেখিয়ে মেয়েদের খেলার জন্য বিদেশে পাঠাতে পারছে না। এটা চূড়ান্ত লজ্জার এবং দুঃখজনক।

বাফুফের নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য ফজলুর রহমান বাবুল বলেন, অনেক দিন থেকেই সরকারের কাছ থেকে বড় অঙ্কের তহবিল চাচ্ছে বাফুফে। সেটি না পেয়ে, নিজেদের একমাত্র ভালো দিককে ব্যবহার করে এখন এই কৌশল নিয়েছে তারা।

ফজলুর রহমান বাবুর এই বক্তব্যের জবাবে বাফুফে সাধারণ সম্পাদক বলেন, সরকারি সহযোগিতা ছাড়া মেয়েদের ফুটবলকে আমরা এই পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারতাম না। আরো সহযোগিতা চাই। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, এমন কৌশলে আমরা টাকা আদায় করবো। অনেকটা নিরুপায় হয়েই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

বাফুফের এলিট একাডেমিও যে কোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন বাফুফের সাধারণ সম্পাদক। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে দেশের ফুটবল দিন দিন আরো বেশি অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে বলে মনে করছেন হাসানুজ্জামান এবং ফজলুর রহমানের মতো সংগঠকরা

এনবিএস/ওডে/সি

news