এক বছর পর ভাত খেতে পেয়ে কেঁদেছিলেন কুমার কার্তিক, এখন তিনি আইপিএলে তারকা ক্রিকেটার
দুপুরে ভাত না খেয়ে কতদিন কাটানো যায়? ১ দিন, ১ সপ্তাহ, বা বড়জোর ১ মাস? আবির্ভাবেই আইপিএলে আলো ছড়ানো কুমার কার্তিক টানা ১ বছর দুপুরে ভাত খাননি। দারিদ্রতাকে জয় করে ক্রিকেট দুনিয়ায় সুনাম কুড়ানো মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের এই স্পিনার সংগ্রামী এক জীবনকে পেছনে ফেলে বনে গেছেন তারকা। চারদিকে যখন কুমার কার্তিকের জয়জয়কার, তখন তার আবেগঘন কাহিনী শুনালেন তারই কোচ ভরদ্বাজ।
প্রতিষ্ঠিত হওয়ার লক্ষ্যে কুমার কার্তিক বাড়ি ছেড়েছিলেন ৯ বছর আগে, মাত্র ১৫ বছর বয়সে। দিল্লিতে বন্ধু রাঁধে শ্যাম ছিলেন একমাত্র পরিচিত ব্যক্তি। তার সহায়তায় নানা একাডেমিতে গিয়ে খোঁজ নিচ্ছিলেন। তবে কোথাওই বিনে পয়সাও ভর্তি হওয়ার সুযোগ নেই। ভরদ্বাজ নিজের একাডেমিতে ট্রায়ালের সুযোগ করে দেন কুমার কার্তিককে। আর তখন কুমারের একটি ডেলিভারি দেখেই তাকে একাডেমিতে বিনা পয়সাও কোচিংয়ের সুযোগ করে দেন।
ক্রিকেট নাহয় শেখা গেল বিনা খরচে, কিন্তু থাকা-খাওয়া? কুমার কার্তিকের সংগ্রাম তাই তখনও শেষ হয়নি, বরং শুরু বলা যায়। বাধ্য হয়ে ৮০ কিলোমিটার দূরে মাসুরি নামের এক ফ্যাক্টরিতে শ্রমিকের কাজ নেন। সকালে একাডেমিতে প্র্যাকটিস করতেন, আর তারপর ফ্যাক্টরিতে কাজ করে রাতে সেখানেই থাকতেন। ভাত দূরে থাক, দুপুরে এক প্যাকেট বিস্কুটের জন্য মাইলের পর মেইল হেঁটে যেতেন।
বিস্কুট খাওয়ার টাকা জোগাড়ের জন্য পায়ে হেঁটে বাঁচাতেন ১০ টাকা। ভরদ্বাজ একদিন জানতে চান, কুমার কার্তিক কেন কাছাকাছি কোথাও থাকেন না। তখন বের হয়ে আসে হৃদয়বিদারক ঘটনা।
ভরদ্বাজ সে কথা জানতে পেরে একাডেমির বাবুর্চির সাথে থাকার সুযোগ করে দেন কুমার কার্তিককে। বাবুর্চি যখন দুপুরবেলা কুমারের সামনে এক প্লেট ভাত ধরেছেন, দীর্ঘ ১ বছর পর দুপুরে ভাত খাওয়ার আনন্দে কুমারের চোখে তখন অশ্রু। রীতিমত হাউমাউ করে কেঁদেছিলেন।
আইপিএলে নিজের অভিষেক ম্যাচেই নজর কেড়েছেন কুমার। শিকার করেন দারুণ ফর্মে থাকা রাজস্থান রয়্যালসের অধিনায়ক স্যাঞ্জু স্যামসনের উইকেটও। ম্যাচ শেষে কুমার জানান, এবার তার বাড়ি ফেরার সময় হয়েছে। বাড়ি ছাড়ার পর গত ৯ বছরে আর একবারও বাড়ির পথ ধরেননি। এবার আইপিএল শেষে তাই ফিরে যাবেন প্রিয় পরিবারের কাছে।