সংখ্যালঘুদের সমস্যার বিষয়ে অবাধ ও সত্য তথ্য পেতে ধর্মীয় নেতাদের পরামর্শ চাইলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূস। কীভাবে নিরাপদে তথ্য সংগ্রহ করবো, যে তথ্য দিচ্ছে সে যেন বিব্রত না করে, তাও নিশ্চিত হতে হবে।

বৃহস্পতিবার  বিকালে ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের শুরুতে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা  ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন  বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে।

জানা গেছে বৈঠকে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা, আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা শায়খ আহমদুল্লাহ, বায়তুল মোকাররমের খতিব আবদুল মালেক, কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার এবং হেফাজতে ইসলামের সাজেদুল হকের নেতৃত্বে কয়েকজন আলেম অংশ নিয়েছেন।

তিনি  বলেন, আজকে বসলাম এ জন্য পত্র-পত্রিকায় দেখছি, মনে অনেক প্রশ্ন জেগেছে, সেই প্রশ্নের জবাব খুঁজে পাওয়ার জন্য আপনাদের সঙ্গে বসা।

সরকার গঠনের আগে বিমানবন্দরে দেওয়া বক্তব্যের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ইউনূস বলেন, তখন আমি বলেছিলাম আমরা একটা পরিবার। আমাদের নানা মত, নানা ধর্ম থাকবে, নানা রীতিনীতি থাকবে, কিন্তু আমরা সবাই একই পরিবারের সদস্য। এটাতে জোর দিয়েছিলাম। আমাদের শত পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও আমরা পরস্পরের শত্রু নই। আমাদের জাতীয়তা পরিচয়ের প্রশ্নে আমরা এক জায়গায় চলে আসি। আমরা বাংলাদেশি, এক পরিবারের সদস্য।

তিনি বলেন, শপথ গ্রহণের পরে শুনতে আরম্ভ করলাম সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে। তখন মনটা খারাপ হয়ে গেলো। এর পরপরই আমি ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গেলাম। সেখানেও বললাম আমরা একই পরিবারের সদস্য। সব দাবি-দাওয়া বাদ দিলেও একটা দাবি পরিষ্কার, আমাদের সবার সমান অধিকার, বলার অধিকার, ধর্মের অধিকার, কাজকর্মের অধিকার— সেটা এসেছে সংবিধান থেকে। নাগরিক হিসেবে প্রাপ্য রাষ্ট্রের দায়িত্ব সেটা নিশ্চিত করা। শুনলাম এখনও সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হচ্ছে।  তাই আমি সবাইকে নিয়ে বসলাম—এটা থেকে কীভাবে উদ্ধার করা যায়।

দুর্গাপূজার নিরাপত্তায় সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, সেটি পুরো জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছিল। তখন তৃপ্তি পেলাম একটু তো কাজ করেছি।

তিনি বলেন, এখন আবার নতুন কথা, হামলা হচ্ছে, অত্যাচার শুরু হচ্ছে। বিদেশি গণমাধ্যম বলবো না, প্রচারমাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে—এটা হচ্ছে।  আমি খোঁজ নিচ্ছি কী হচ্ছে? সবদিকে দেখলাম এটা হচ্ছে না। এক খবরে বলা হচ্ছে,  আরেক খবরে বলা হচ্ছে— হচ্ছে (নির্যাতন) না, তথ্যের মধ্যে ফারাক আছে। এটা ঠিক না। এটার অবসান হতে হবে। আমরা যে তথ্য পাচ্ছি তা ভুল হতে পারে। তথ্যের ওপর বসে থাকার কিছুই নাই, এটার অর্থ অন্ধের মতো বসে থাকা। ভেতরে গিয়ে দেখতে হবে। খোঁজ নিতে হবে তথ্যের গরমিল কেন? তাতে ওরা যা বলছে, তা কি মিথ্যা প্রচার? না আমরা যা বলছি তা মিথ্যা প্রচার, সত্যটা কোথায়।

তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্যের কোনও ফারাক নেই। সেখানে সঠিক তথ্য কীভাবে পাবো, সেটা আমাদের জানা দরকার। প্রকৃত তথ্য, অনেক সময় সরকারি তথ্যের ওপর ভরসা করে লাভ নেই। কর্তা যা চায়, সেভাবে বলেন। আসলটা মন খুলে বলতে চাই না। আমরা আসল খবরটা জানতে চাই। সেই প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। এত বড় দেশে যেকোনও ঘটনা ঘটতে পারে, কিন্তু প্রকৃত তথ্য জানতে চাই। তাৎক্ষণিক খবর পেলে যাতে সমাধান করা যায়। যেদিক থেকেই, দোষী দোষীই। তাকে বিচারের আওতায় আনা সরকারের দায়িত্ব।

এদিকে, প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার  বলেন, দেশের চলমান বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনার জন্য প্রধান উপদেষ্টা ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে সংলাপ করছেন।

এর আগে গত মঙ্গলবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। এরপর গতকাল বুধবার দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। বৈঠকে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, অস্তিত্ব ও মর্যাদার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ থাকার ঘোষণা দিয়েছে।

news