পোষাক শিল্পে পুনর্বিনিয়োগ ও সম্প্রসারণ কমে যাওয়ার শঙ্কা
মুদ্রা সংকোচন নীতি ও উচ্চ সুদ হার এবং সেই সঙ্গে জ্বালানি সংকটের কারণে রপ্তানিমুখী এবং আমদানি বিকল্প পোশাক শিল্পে বিনিয়োগ কমে যাবে বলে আশংকা করছেন øষ্ট উদ্যোক্তারা।
বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতির নানা সূচক বলে দিচ্ছে এবছর পোষাক খাতে আশানুরূপ বিনিয়োগ হবে না।
আমাদের নতুন সময়কে তিনি বলেন, জ্বালানি সংকট, অর্থ সংকট ও আন্তর্জাতিক ব্যবসা পরিস্থিতির কারণে আগামী দুই-এক বছর সেরকম কোন বিনিয়োগ হবে না। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও দেশীয় পরিস্থিতির কারণে রপ্তানিমুখী পোষাক শিল্পে প্রবৃদ্ধি কম হতে পারে বলেও তিনি আশংকা প্রকাশ করেন।
চলতি অর্থ বছরের জুলাই-মে সময়ে পোষাক খাতে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৭.৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যার বিপরীতে প্রকৃত জাহাজীকরণের মূল্য এসেছে ৪৩.৮৫ বিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ ঘাটতি হয়েছে ৩.৬২ বিলিয়ন ডলার বা ৪৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। আর, আগের অর্থ বছরের জুলাই-মে সময়ে এই খাতে প্রকৃত আয় হয়েছিল ৪২.৬৩ বিলিয়ন ডলার। সেই হিসেবে আগের অর্থ বছরের তুলনায় আয় বেড়েছে ১২৩ কোটি ডলার বা ১৪ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা, বলছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সর্বশেষ রপ্তানি পরিসংখ্যান।
বিসিআই সভাপতি বলেন, ব্যবসায়ীরা কিছুটা অনিশ্চয়তা অনুভব করছেন। বিভিন্ন দেশে মূল্যস্ফীতি কমে গেলেও বাংলাদেশে বেড়ে গেছে। আর সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে বেশি বেশি ঋণ নেয়ার কথা বলেছে। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের চলতি রপ্তানি ও বিনিয়োগের প্রক্ষেপন যা ছিলো, সেটাকে আমরা ধরে রাখার চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, সরকারের উচিৎ বাইরে থেকে ফান্ড এনে রাজস্ব ঘাটতি পূরণ করা, যাতে করে ব্যাংকগুলো থেকে বা বাজারে বন্ড ছেড়ে অর্থ সংগ্রহ করতে না হয়। শুধু রপ্তানিমুখী পোষাক নয়, দেশী বেশির ভাগ শিল্প কারখানা, আমদানি-বিকল্প কারখানা ও দেশি পোষাক খাতও ঋণপত্র খুলতে সমস্যায় পড়বে।
বিজিএমইএ’র এই প্রাক্তন সভাপতি বলেন, সরকারের এখন উচিৎ যেভাবে হোক তাদের খরচ কমানো। সরকারি খরচ কমলে ব্যাংক ঋণ ও সুদের চাপ কমবে। সেই সঙ্গে ডলারের রিজার্ভের ওপর থেকেও চাপ কমানোতে তা সাহায্য করবে।
কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমিতি বলছে, দেশে একসময় তারা বছরে ৫০ লাখ পিস নানা রকম পোষাক বিক্রি করতেন; এখন সেটির পরিমাণ ৫০ কোটি পিস। সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন বলেন, আমাদের ব্যবসায়ীরা দিনে ১০০ কোটি টাকার কাপড় বিক্রি করেন এবং এগুলো প্রত্যন্ত অঞ্চলে চলে যায়। এ বছর মূল্যস্ফীতির কারণে স্থানীয় বাজারে কিছটা প্রভাব তো পড়বেই।
তিনি আমাদের নতুন সময়কে বলেন, সুদ হার ১৩ থেকে ১৫ শতাংশ হলে তাদের মত ব্যবসায়ীদের জন্য অনেক বেশি হয়ে যায়। কেন না তারা ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি খোলেন না বা আমদানিকৃত কাপড়ের ওপর শুল্ক রেয়াত (বন্ডেড ওয়্যার-হাউজ) সুবিধা পান না। উল্টো মেশিন ও যন্ত্রাংশের ওপর নানা রকম কর দিতে হয়।
তফাজ্জল হোসেন বলেন, এত সংকটের মধ্যেও ব্যবসায়ীরা স্থানীয় বাজারে পোষাকের যোগান ঠিক রাখতে বছরে কেরানীগঞ্জে ৪ বা ৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করছেন। তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন বহুতল মার্কেট আগে যেখানে শিপ ডক বা পতিত জমি ছিল। তিনি সরকারের কাছে মেশিন ও যন্ত্রাংশের ওপর কর কমানোর আহ্বান জানান।
রপ্তানিমুখী তৈরি পোষাক কারখানা স্টারলিং এ্যাপারেল্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল হক বলেন, নতুন করে বিনিয়োগ বা কোম্পানি সম্প্রসারণে কিছু ঝামেলা বেড়েছে। এগুলো যেমন আন্তর্জাতিক নিয়মনীতির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, একইভাবে দেশের নিয়ম কানুনেও কিছু পরিবর্তন এসেছে।
তিনি বলেন, আগে আমরা ছিলাম ইউনিয়ন বা পৌরসভার আওতায়। এখন আমরা কাজ করি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আওতায়। ফলে নানাবিধ খরচও অনেক বেড়েছে।
ফজলুল হক মনে করেন, বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে রপ্তানি প্রবণতায় কোন বিশেষ সমস্যা হচ্ছে না। ফলে রপ্তানি আদেশ নাও কমতে পারে।
গত বছরের আগস্টের এক হিসেব অনুযায়ী, আগামী দুই বছরে শিল্পের দৃশ্যপট পাল্টে দিতে নতুন প্রযুক্তিতে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশের পোশাক, টেক্সটাইল ও অ্যাকসেসরিজ প্রস্তুতকারকেরা।


