বাংলাদেশের বাজারে রমজান মাসে ভোজ্যতেলের সংকট তৈরি হয়েছে, যা নিয়ে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ব্যবসায়ীরা আগেই আশ্বাস দিয়েছিলেন, রোজার সময় কোনো সংকট থাকবে না। তবে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, দোকানে এককভাবে বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। অধিকাংশ দোকানেই অন্যান্য পণ্য কিনলে তেল দেওয়া হচ্ছে, যা ক্রেতাদের জন্য বাড়তি ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রমজানের প্রথম দিনে রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে ভোজ্যতেলের সংকট দেখা গেছে। গৃহিণী জেসমিন লিপি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "লেবুর হালি ১২০ টাকা, বেসনের কেজি ১৬০ টাকা, তরমুজ ৮০ টাকা কেজি! এমন দাম আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জন্য অনেক বেশি।"

অন্যদিকে, ক্রেতা নাজমুল হক তপন বলেন, "শবে বরাতের আগেও বেগুন ছিল ৪০ টাকা, এখন রোজার প্রথম দিনে সেটা ১০০-১২০ টাকা। ছোলার দামও বেড়েছে। আর বাজারে সয়াবিন তেল নেই, চাইলে অন্যান্য পণ্য কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে!"

মুদি দোকানদার রহিম মিয়া জানান, পাইকারদের কাছ থেকে তেল পেতে হলে তাদেরও বাড়তি পণ্য কিনতে হচ্ছে। "আমরা যেমন পাই, তেমনই বিক্রি করি," বলেন তিনি।

রোববার সকালে বাজার পরিদর্শন করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান বলেন, "বাজারে তেলের পর্যাপ্ত মজুত থাকা সত্ত্বেও সংকট তৈরি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে সরবরাহ স্বাভাবিক করার কথা বলেছিলেন, কিন্তু কথা রাখেননি। আমরা এখন তদন্ত করছি, কারা সংকট তৈরি করছে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, এবার গত বছরের তুলনায় দেড় লাখ টন বেশি সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে। তবে অভিযোগ উঠেছে, আমদানিকারকরা কৌশলে তেল গুদামে না এনে সাগরে ভাসিয়ে রেখেছে, যাতে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়ানো যায়।

মেঘনা গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার মজিবুর রহমান এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, "বাজারে খোলা তেলের চাহিদা বেশি, তাই খুচরা বিক্রেতারা বোতলজাত তেল নিতে চান না। তবে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হবে বলে আশা করি।"

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সিনিয়র সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, "পর্যাপ্ত আমদানি থাকার পরও সিন্ডিকেট কারসাজি করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে। সরকারের মনিটরিং কার্যক্রম দুর্বল হওয়ায় ভোক্তারা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।"

বাজার পরিস্থিতি মনিটরিং না করলে সংকট আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এখন দেখার বিষয়, সরকার দ্রুত কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয় কি না। খবর ডয়চে ভেলের

news