হুমায়রা হিমু ৪ বার আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছিলেন, শেষবার পাত্তা দেননি প্রেমিক

ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনয় শিল্পী হুমায়রা নুসরাত হিমুকে আত্মহত্যা প্ররোচণায় অভিযুক্ত প্রেমিক মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন ওরফে রুফি ওরফে উরফি জিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে রাজধানীর বংশাল এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, হুমায়রা নুসরাত হিমু একজন জনপ্রিয় অভিনয় শিল্পী এবং প্রায় দুই দশকের বেশি সময় ধরে অভিনয় করেছেন। ২০১৪ সালে হুমায়রা হিমুর খালাতো বোনের সঙ্গে জিয়াউদ্দিন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। কিছুদিনের মধ্যে পারিবারিক সমস্যা জনিত কারনে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। পারিবারিক আত্মীয়ের সম্পর্কের সুবাধে জিয়াউদ্দিনের  হিমুর পরিচয় হয়। হিমুর খালাতো বোনের সঙ্গে জিয়াউদ্দিনের ববাহ বিচ্ছেদ হলেও হিমু ও জিয়াউদ্দিনের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। পরবর্তীতে  জিয়াউদ্দিন অন্যত্র বিবাহ করলেও হিমুর সঙ্গে সে বিভিন্নভাবে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখতো এবং বিগত ৪ মাস পূর্বে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ট সম্পর্ক তৈরী হয়। এক পর্যায়ে  জিয়াউদ্দিন হিমুকে বিবাহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়মিত তার বাসায় যাতায়াত করতো বলে জানায়। 

তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে হিমু ও জিয়া উদ্দিনের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া ও বাকবিতণ্ডার সৃষ্টি হতো। এছাড়াও বিগত ২/৩ বছর ধরে  হিমু বিগো লাইভ অ্যাপসে  অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ অপচয় করেছে বলে গ্রেপ্তারকৃত জানায়। গত ৪ মাসে জুয়া খেলার জন্য হিমুকে বিপুল পরিমান টাকাও দেন রুফি। এসব বিষয় নিয়েও বিভিন্ন সময় তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা ও মনোমালিন্যের সৃষ্টি হতো বলে জানা যায়। বুধবার রাতেও তাদের মধ্যে মনোমালিন্য হয়। হিমু আত্মহত্যা হুমকি দেয়।

মঈন বলেন,  গ্রেপ্তারকৃত আরও জানায়, গত বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় জিয়াউদ্দিন হিমুর উত্তরার বাসায় আসে। পরবর্তীতে অনলাইন জুয়াসহ বিষয় নিয়ে হিমু ও জিয়াউদ্দিনের বাকবিতন্ডার একপর্যায় হিমু ভাংচুর করে। একপর্যায়ে রুমের বাহিরে থেকে একটি মই এনে রুমের সিলিং ফ্যান লাগানোর লোহার সঙ্গে পূর্ব থেকে বেঁধে রাখা প্লাস্টিকের রশিতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করবে বলে তাকে জানায়। জিয়াউদ্দিন আরও জানায়, হিমু এর আগে ৩/৪ বার আত্মহত্যা করবে বলে তাকে জানালেও সে পরবর্তীতে আত্মহত্যা করেনি। এবারও পূর্বের ন্যায় হিমু আত্মহত্যা করার ব্যাপারে তাকে  জানালে সে বিষয়টি গুরুত্ব দেয়নি। কিন্ত  হিমু একটু পর বেধে রাখা রশি দিয়ে গলায় ফাঁস দিলে জিয়াউদ্দিন তাকে নামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। এসময় সে পাশের রুমে থাকা হিমুর মেকআপ আর্টিস্ট মিহিরকে ডেকে আনে। পরবর্তীতে মিহির রান্নাঘর থেকে একটি বটি এনে রশি কেটে তাকে নিচে নামায়। পরবর্তীতে জিয়াউদ্দিন বাসার দারোয়ান এবং মিহিরের সহায়তায় হিমুকে বাসা থেকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। 

তিনি আরও বলেন,  জিয়াউদ্দিন ‘ও’ লেভেল শেষ করে টেক্সটাইল ক্যামিকেলের ব্যবসা করতো। ঘটনার দিন হিমুকে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করার পরে হিমুর ২টি আইফোন ও ব্যবহৃত গাড়ি নিয়ে দ্রুত হাসপাতাল ত্যাগ করে। পরবর্তীতে সে হিমুর গাড়ি উত্তরার বাসার পার্কিং এ রেখে দেয় এবং মোবাইল ফোন ২টি বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে রাজধানীর বংশাল এলাকায় পালিয়ে যায়।

এদিকে হিমুর আত্মহত্যার ঘটনায় তার খালা উত্তরা পশ্চিম থানায় মামরা করেন। মামলায় অভিযোগ করেন, ছয় মাস আগে থেকে রুফি নিয়মিত হিমুর বাসায় যাতায়াত এবং মাঝে মধ্যে রাত্রীযাপন করতেন। ১ নভেম্বর রুফির মোবাইল নম্বর ও ভিগো আইডি ব্লক দেন হিমু। বিষয়টি নিয়ে উভয়ের মধ্যে ঝামেলা হয়। ২ নভেম্বর বিকেল ৩টার দিকে তিনি বাসায় এসে কলিং বেল দেন। মিহির দরজা খুলে দিলে তিনি বাসার ভেতরে যান। মিহির তার রুমে চলে যান। ৫টার রুফি মিহিরের রুমে গিয়ে চিৎকার করতে করতে বলেন, হিমু আত্মহত্যা করেছে। তখন মিহির তাকে জিজ্ঞাসা করে, আপনি-তো রুমেই ছিলেন। তখন তিনি বাথরুমে ছিলেন বলে জানান। হিমুকে আত্মহত্যার জন্য প্ররোচনা দিয়ে বাথরুমে প্রবেশ করেন রুফি। সূত্র: ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলা

এনবিএস/ওডে/সি

news