দুই বাংলায় সমালোচনা, পথে নেমেছেন শিল্পীরা

 কাজী নজরুল ইসলামের এই গানটির সুর বিকৃতির অভিযোগে অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমানকে নিয়ে কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপক বিতর্ক চলছে। এরমধ্যেই কবির নাতি অনির্বাণ কাজী একরকম চটে গিয়ে বললেন, গানের ক্রেডিট থেকে তার পরিবারের নাম মুছে ফেলা হোক।

তিনি বলেছেন, আমরা বুঝতে পারিনি যে রহমানের মতো একজন শিল্পী এতটা অসংবেদনশীল হতে পারেন এবং এভাবে গানটিকে হত্যা করতে পারেন। ২০২১ সালে মা সুর এবং কথা না বদলে গানটা রিমেক করার অনুমতি দিয়ে বলেছিলেন, গানটা তৈরি হয়ে গেলে একবার শোনাতে। কিন্তু ওরা শোনায়নি। এরপর মা-ও মারা যান। আমি জানতে চাই, তাকে কে অধিকার দিল গানটি বিকৃত করার? স্বত্ব দেওয়ার সময় তো সুর বদলের কথা বলা হয়নি।

গানটির চুক্তির বিপক্ষে গিয়ে এ কাজটি যারা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন কবির নাতনি অনিন্দিতা কাজী। সুর বদলের প্রতিবাদ করে এটিকে অপরাধ বলেছেন ঢাকায় বসবাসরত কবি নাতনি খিলখিল কাজীও। এছাড়া এটিকে ইতিহাস বিকৃতি বলেও দাবি করেছেন অনেকে।

কলকাতার শিল্পী বাবজী সান্যাল বলছেন, এই গানটি মি. রহমান যেভাবে সুর করেছেন, তার সঙ্গে গানটির ইতিহাস, প্রেক্ষিত এগুলো একেবারেই মেলে না। তিনি এই বিখ্যাত গানটির একটি বিকৃত রূপ সামনে এনেছেন।

দেশের সঙ্গীতশিল্পী মাকসুদুল হক বলেছেন, কোনও পরিচিত গানের সুরটা ঠিক রেখে কেউ যদি যন্ত্রানুষঙ্গ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে চায় সেটা করতেই পারে। কিন্তু সেই পরীক্ষা করতে গিয়ে যদি সুরটা ধ্বংস হয়ে যায়, তাতে মানুষের কাছে আপত্তিকর মনে হতেই পারে।

গায়িকা ফাহমিদা নবী লিখেছেন, এ আর রহমান নিজেই গুনি সুরকার। নিজের সুরে অন্য কথায় ছবির প্রয়োজনে গান করতেই পারতেন। সঠিক সুরে গানটি ব্যবহার করতে পারতেন। আমাদের জাতীয় কবির প্রতি এই অসম্মানের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

লেখিকা তামান্না ফেরদৌস ফেসবুকে লিখেছেন, এই গান এবং এই গানের সাথে জড়িয়ে থাকা বাঙালির আবেগ সম্পর্কে এ আর রহমানের কোনো ধারণা নেই কিংবা থাকলেও উনি সেভাবে আমলে নেননি। একজন অস্কার বিজয়ী শিল্পীর কাছ থেকে এই ধরনের উদ্ধতপূর্ণ অপেশাদার আচরন কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। উনার অবশ্যই বাঙালি জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিৎ।

ভারত ও বাংলাদেশের কপিরাইট আইন বলছে, ২০৩৬ সাল পর্যন্ত কাজী নজরুলের সব সাহিত্য কীর্তির কপিরাইট তার পরিবারের হাতে রয়েছে। এটা চাইলেই যে কেউ কথা ও সুর বিকৃত করতে পারবেন না। গানটি নিয়ে বিতর্ক ছড়িয়েছে রাজনীতির ময়দানেও। এর মধ্যেই কলকাতায় নজরুল ইসলামের গানের অবমাননার প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন সেখানকার শিল্পীরা। সোমবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ে নজরুল মঞ্চের টিকিট কাউন্টারের সামনে হেরিটেজ বেঙ্গল নামের একটি সংগঠন আয়োজন করে প্রতিবাদ সভার। অনুষ্ঠিত হয়হবে এই প্রতিবাদ।

কলকাতার শিল্পীরা প্রতিবাদ স্বরুপ ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ গানটি প্রকৃত সুরে গেয়েছেন।সূত্র: ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলা

এনবিএস/ওডে/সি

news