‘সিনেপ্লেক্সে দর্শক এসব সিনেমা দেখতে চান না’ 

গেল দুই দশক ধরে দেশ-বিদেশের সিনেমা প্রদর্শন করে যাচ্ছে স্টার সিনেপ্লেক্স। বসুন্ধরা সিটিতে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়েছিল। জনপ্রিয়তার হাত ধরে তা ঢাকা শহরেই ৭টি শাখায় ১৯টি হলে রুপ নিয়েছে। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, রাজশাহীতেও দর্শককে সিনেমার বিনোদন দিয়ে যাচ্ছে স্টার সিনেপ্লেক্স।

সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি ক্লাবে দেশীয়-ভিনদেশি সিনেমা প্রসঙ্গে ‘তৃতীয় দশকের স্বপ্ন’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে স্টার সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সিনেপ্লেক্সের চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য মাহবুব রহমান রুহেল, প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র বিপণন কর্মকর্তা মেজবাহ আহমেদসহ সিনেপ্লেক্স সংশ্লিষ্ট অনেকে। 

অনুষ্ঠানে মাহবুব রহমান রুহেল বলেন, ‘সারাদেশে সিনেপ্লেক্সের ১০০ ব্রাঞ্চ চালুর পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।’

তবে সিনেপ্লেক্স যেমন সিনেমা প্রদর্শনের সারথি হয়েছে, তেমনি মাঝেমধ্যে এই প্রেক্ষাগৃহ চেইনটির বিরুদ্ধে কোনো কোনো নির্মাতা অভিযোগ করে বলেছেন, সিনেপ্লেক্স বাংলা সিনেমা প্রাধান্য দেয় না। গত সপ্তাহে মুক্তিপ্রাপ্ত এমডি ইকবাল পরিচালিত ‘ডেডবডি’ মুক্তির দুদিন পরেই সিনেপ্লেক্স থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। এতে পরিচালক অভিযোগ করেন, সিনেপ্লেক্স বাংলা সিনেমার ভালো চায় না বলে ‘ডেডবডি’ সেখান থেকে নামিয়ে দিয়েছে। দু-দিন আগে এফডিসিতে সংবাদ সম্মেলন ডেকে এমন মন্তব্য করেছেন ছবিটির পরিচালক এম ডি ইকবাল।

এই অভিযোগ প্রসঙ্গে রুহেল বলেন, ‘যে ধরনের অপবাদ দেওয়া হচ্ছে এতে সিনেপ্লেক্সের সবাই কষ্ট পেয়েছে। এখানে আমার বা সিনেপ্লেক্সের কোনো হাত নেই। আমি কোনো ব্যক্তি বা সিনেমার বিপক্ষে নই। ব্যবসা হলে প্রফিট সিনেপ্লেক্সের হবে। কিন্তু কোনো সিনেমা দর্শক না দেখলে সেটা আমাদের দোষ নয়। এটা সিনেমা সংশ্লিষ্টদের ব্যর্থতা। তারা ঠিকমতো প্রমোশন করেনি, ভালোমতো সিনেমাটি বানাতে পারেনি। প্রেস কনফারেন্স করে বলা হচ্ছে ‘সিনেপ্লেক্সকে কন্ট্রোল’ করতে হবে। আপনারা কিসের কন্ট্রোল করবেন? বিনিয়োগ করে রিস্ক নিচ্ছি আমি, আপনারা কেন কন্ট্রোল করবেন?’

তিনি আরও বলেন, ‘কথাগুলো বাধ্য হয়ে বলছি, সিনেপ্লেক্সে যারা সিনেমা দেখে তারা এসব সিনেমা (ডেডবডি) দেখতে চায় না। আমাদের সার্ভে অনুযায়ী, ১৯৯৭ সালের দিকে জন্ম যাদের সেই জেনারেশন বেশি সিনেমা দেখতে আসে। তারা ভালো গল্পের আধুনিক সিনেমা চায়। কিন্তু এসব না করে যা ইচ্ছে ও মানহীন সিনেমা দিয়ে জোর করে বলা হয় সিনেপ্লেক্সে দেখাতে হবে, এটা তো হবে না। ‘ডেডবডি’ চালানোর জন্য পরিচালক আমাকে বারবার বলেছেন। ভেবেছি, এতবার যেহেতু বলছে দিয়ে দেখি কী হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এ সিনেমা দর্শক দেখেই নাই, বরং নেগেটিভ প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। আমাদের দর্শকরা বলেছে, সিনেপ্লেক্সে এই টাইপের সিনেমা দেখতে চাই না। শিক্ষিত, আপারক্লাস এবং মধ্যবিত্তরা আমাদের নিয়মিত দর্শক। এমন কোনো সিনেমা আমরা দেখাবো না যাতে আমাদের ব্র্যান্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’

মানহীন সিনেমা নির্মাণের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ঝেড়ে মাহবুব রহমান রুহেল বলেন, যে যা ইচ্ছে বানাবে তাই আমাকে দেখাতে হবে এটা তো হতে পারে না। সিনেপ্লেক্স একটি শপ এবং সিনেমা হচ্ছে প্রোডাক্ট। শপের মানুষের চাহিদামতো প্রোডাক্ট না দিলে পারলে সেগুলো রাখবো কেন? এসব নিয়ে আমাকে কেউ কখনো বাধ্য করতে পারবে না। দরকার হলে আমি এই ব্যবসাই করবো না। সিনেপ্লেক্স ব্র্যান্ড হয়েছে দর্শকের আস্থার কারণে। মানুষ জানে সিনেপ্লেক্সে সিনেমা দেখলে বিরক্ত হবে না, বরং আনন্দময় সময় কাটাতে পারবে। এই বিশ্বাস আমাকে বজায় রাখতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দর্শক বিশ্বাস করে এসে যেসব ছবি দেখে বিরক্ত হচ্ছে এবং ব্যবসায়িকভাবে আমি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি, স্ক্রিনিং কস্ট (খরচ) উঠছে না, সেই সিনেমা তো আমি চালাবো না। কেউ যদি জোর করে গিলিয়ে খাওয়ানোর চেষ্টা করে যে- তার সিনেমা বেস্ট, সেখানে আমার কিছু বলার নেই। দর্শক যেটা বলবে আমরা সেদিকে বিশ্বাসী। এসব নিয়ে যে যতই প্রেস কনফারেন্স করুক আমার অবস্থান অনড় থাকবে। আমি সবসময় ভালো বাংলা সিনেমার পক্ষে। আমাদের ইয়াং মেধাবী পরিচালকরা দর্শকদের চাহিদা বুঝে কিছু কিছু ভালো সিনেমা উপহার দিয়েছেন। যেমন- হাওয়া, পরাণ, প্রিয়তমা, সুড়ঙ্গ, রাজকুমার।’

গেল ৩ মে বদরুল আনাম সৌদ পরিচালিত ‘শ্যামা কাব্য’ মুক্তি পায়। স্ক্রিন ঘোলাসহ নানা ধরনের অভিযোগ তুলে সিনেপ্লেক্স থেকে সিনেমাটি নামিয়ে নেন নির্মাতা। এই বিষয়ে রুহেল বলেন, বসুন্ধরাতে পাঁচটি স্ক্রিন রয়েছে। সম্প্রতি ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এ কারণে যে স্ক্রিনে সমস্যা আছে, সেটা ঠিক করা সম্ভব হয়নি। অপেক্ষা করছি, নতুন চুক্তি হওয়ার পর স্ক্রিনসহ বাকি যা আছে সেগুলো ঠিক করবো। উনি (বদরুল আনাম সৌদ) ঠিক বলেছেন। ওই হলে আমাদের প্রজেকশনে একটু সমস্যা ছিল। ওনার সিনেমাটি যেহেতু ডার্ক, উনি স্ক্রিন চেইঞ্জ করতে আমাকে পার্সোনালি বলতে পারতেন। আমি রিপ্লেস করে দিতে পারতাম। কিন্তু তারা সিনেপ্লেক্সের লবিতে দাঁড়িয়ে আমাদের অপবাদ দিয়েছে, যা কাম্য নয়। তবে আমি স্ট্যাটিস্টিক্স দেখলাম তার সিনেমা দেখতে দর্শক কম এসেছিল। সিনেমা ভালো মন্দ তা বলবো না তবে দর্শক সেভাবে ছিল না।’

‘ভালো সিনেমা বলতে গেলে ঈদের পর এখনো সিনেপ্লেক্সে ‘রাজকুমার’ চলছে এবং দর্শক পছন্দ করায় আমরা চালাচ্ছি। আমি সাপ্লাই ডিম্যান্ডে বিশ্বাস করি। দর্শক যেটা চাইবে সেটাই দেখাব। এতে ব্লেম করলে মানবো না। তবে টিকিটের টাকায় প্রযোজক-হল মালিক ও সরকারের ট্যাক্সের বিলি বন্টন নিয়ে আলোচনার জায়গা রয়েছে।’ সূত্র: ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলা

এনবিএস/ওডে/সি

news