বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকে সরব ছিলেন বরেণ্য নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। কথা বলেছেন ছাত্র-জনতার পক্ষে। শুধু এই আন্দোলনেই নয়, বিগত সরকারের (শেখ হাসিনা) আমলেও এই নির্মাতাকে দেখা গেলে সকল অন্যায়–অবিচারের বিরুদ্ধে কথা বলতে।
এদিকে, গেল ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী সরকার শেখ হাসিনার পতনের পর বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। গুম, খুন থেকে শুরু করে নজিরবিহীন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ছিল বিগত সরকার। এত কিছুর পরও তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পায়নি দেশের জনগণ। আর সেখানেই প্রশ্ন রেখে কথা বলেছেন নির্মাতা ফারুকী।
জানিয়েছেন, শেখ হাসিনাকে কিভাবে মনস্টার হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে দেশের মানুষ। আর কারা তাকে মনস্টার বানিয়েছেন?
দীর্ঘ এক ফেসবুক পোস্টে ফারুকী লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের সো কলড নাগরিক সমাজ। “বিএনপি ঠেকাও” (যদিও তারা মুখে বলত বিএনপি-জামাত, কিন্তু ভেতরে ভেতরে তারা জানত ভোটে জেতার সক্ষমতা বিএনপির বেশি, তাই বিটুইন দ্য লাইন ছিল বিএনপিই) মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ নাগরিক সমাজ হাসিনাকে যা ইচ্ছা তা করার লাইসেন্স দিয়েছে। এই আত্ম-সমালোচনাটা বাংলাদেশের নাগরিক সমাজ যদি না করে তাহলে ভবিষ্যতেও আমরা এইরকম মনস্টার জন্ম দিতেই থাকব। আমরা মুখে গণতন্ত্র বলি, কিন্তু আমাদের বগল মে “ঠেকাঠেকি”! দেখেন যে কেউ যে কাউকে ঠেকাতে চাইতেই পারে। এটা তার গণতান্ত্রিক অধিকার। এর জন্য সে প্রচার চালাতে পারে, জনমত গঠন করতে পারে। কিন্তু গোলমাল দেখা দেয় যখন এই ঠেকাঠেকিটা করা হয় ভোট ডাকাতি বা ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়ার মাধ্যমে। আমাদের আদি পাপ এখানে। এই ঠেকাঠেকি অধিদপ্তর থেকেই গুম-খুন-ব্যাংক লুট-লক্ষ কোটি টাকা পাচার-রাষ্ট্রীয় সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করার লাইসেন্স বা সম্মতি দেওয়া হইছিল শেখ হাসিনাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সময় আসছে বোঝার বাংলাদেশের মানুষজানে কখন কাকে ঠেকাতে হবে। ৯৬তে সে বিএনপিকে ঠেকায় নাই? ২০০১-এ আওয়ামী লীগকে ঠেকায় নাই? ২০০৮-এ আবার বিএনপিকে ঠেকায় নাই? তারপরতো আর জনগণকে সুযোগই দেওয়া হয় নাই। ফলে সময় এসেছে ঠেকাঠেকির দায়িত্ব জনগনের হাতে তুলে দিয়ে এই আদিপাপ থেকে বের হয়ে আসার।’
সবশেষে ফারুকী বলেন, ‘প্রশ্ন আসতে পারে, জনগণ যদি ভুল লোককে নির্বাচিত করে? ভুল শক্তি সরকারে আসে? গরিষ্ঠের শাসন মানলে আপনাকে এটা মেনে নিতেই হবে। মেনে নিয়ে আপনি ভুল লোকের ভুল কাজের তীব্র সমালোচনা করবেন, প্রতিবাদ করবেন, আদালতে যাবেন! তাকে লাইনে রাখার জন্য যা যা করা দরকার সবই করবেন। এবং পরের ভোটে ঠেকিয়ে দিবেন। এটার নামই গণতন্ত্র। আর তা না করে আপনি যদি মনে করেন আমরা আর আমার কতিপয় অনুসারীই দেশের ভালো কিসে হবে সেটা সবচেয়ে ভালো বুঝি, তাহলে আপনি আরেকটা হাসিনা হয়ে উঠার প্রক্রিয়ায় আছেন। কানে বাজে এখনও তার কথা, “আমার চেয়ে এই দেশের ভালো কে বেশি বোঝে?