এখন আর বডি শেমিংকে পাত্তা দেই না: পারিসা
মিস অ্যান্ড মিসেস প্লাস বাংলাদেশ একটি প্রতিযোগিতা; এর বৈশিষ্টও কিছুটা ভিন্ন। স্লিম ফিগার আর উজ্জ্বল গায়ের রংকে যেখানে অনেকে সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে মনে করেন, সেখানে মিস অ্যান্ড মিসেস প্লাস প্রতিযোগিতাটি আয়োজিত হয়েছে তুলনামূলক স্বাস্থ্যবান নারীদের নিয়ে। বিবাহিত ও অবিবাহিত নারীরা এখানে অংশ নিয়েছেন।
১০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় প্রতিযোগিতার প্রথম আসরের চূড়ান্ত পর্ব। ২১ প্রতিযোগীর মধ্যে প্রথম হন তাসনিয়া তাবাসসুম পারিসা। সোমবার রাতে তার সঙ্গে কথা হয় সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে।
পারিসা জানান, তিনি কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক শেষ করেছেন। এখন কাজ করছেন মেকআপ আর্টিস্ট ও লাইভ প্রমোটার হিসেবে। অনেক মডেলের সঙ্গেই তার যোগাযোগ, আর তাদের কয়েকজনের কাছ থেকেই আয়োজনটি সম্পর্কে জানতে পারেন তিনি।
পারিসা বলেন, ‘‘আয়োজনটি সোশ্যাল অ্যাওয়ারেনেসকে প্রমোট করে। সে জন্য আমি বেশি আগ্রহী হই প্রতিযোতিার ব্যাপারে। আয়োজনটির একটি স্লোগান আছে ‘বডি শেমিং বন্ধ করো’। এটা দেখার পর ইন্টারেস্ট আরও বেড়েছে।’’
ছোটবেলা থেকেই নাচ-গানের সঙ্গে যুক্ত পারিসা। সেগুলোকে পুঁজি করে নেমে পড়েন প্রতিযোগিতার মাঠে।
পারিসা বলেন, ‘আমাদের তিন মাস গ্রুমিং ক্লাস হয়েছে। জুনে শুরু হয় ক্লাস। যেহেতু এটা মিস অ্যান্ড মিসেস প্লাস বাংলাদেশ, অনেক মিসেস ছিলেন প্রতিযোগী হিসেবে। তাদের সংসার-সন্তানের জন্য সপ্তাহে দুই দিন অর্থাৎ শুক্র-শনিবার ক্লাস করানো হতো।
‘সেখানে আমাদের শিখিয়েছে কীভাবে কথা বলতে হবে, কীভাবে উচ্চারণ করতে হবে, কীভাবে দাঁড়াতে হবে, কীভাবে মাইক্রোফোনটা ধরতে হবে, সব শিখিয়েছে। নাচ, গান, অভিনয় নিয়ে গ্রুমিং হয়েছে। এই যে আপনার সঙ্গে এতো কনফিডেন্টলি কথা বলছি, এটা কিন্তু গ্রুমিংয়ের কারণেই হয়েছে।’
গ্রুমিংয়ের এই অভিজ্ঞতাই কাজে লাগাতে চান পারিসা। তিনি বলেন, ‘আমার মতো যেসব নারীরা আছে অর্থাৎ যারা প্লাস সাইজ, তারা অনেকেই এসব বিষয় নিয়ে ডিপ্রেশনে থাকেন। তারা মনে করেন, আমিতো মানুষের সামনে যেতে পারব না। আমি ব্যক্তিগতভাবে এ নারীদের কনফিডেন্স বাড়াতে কাজ করতে চাই।’
পারিসার জয়ে খুশি তার পরিবারের সবাই। কাছের অনেকে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সময় নিরুৎসাহিত করেছিল পারিসাকে। তারাও এখন শুভেচ্ছা জানাচ্ছে তাকে। পারিসা বলেন, ‘এদের অনেকেই বলেছে যে, তোমার উপর আমার বিশ্বাস ছিল। এরকম অভিজ্ঞতা আমার কখনও হয়নি। বিষয়টা খুবই ইন্টারেস্টিং ছিল।’
আমাদের সমাজে প্লাস সাইজ বা স্বাস্থ্যবান হলে প্রায় সব নারীকেই ছোট বেলা থেকেই নানা কটূ কথা শুনতে হয়। বড় হলেও সেটি অব্যাহত থাকে। তেমন কটূ কথা শুনতে হয়েছে পারিসাকেও।
সেই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে পারিসা বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকে যেহেতু মোটা ছিলাম মানুষের কথা শুনে বড় হয়েছি। কাছের মানুষরাই বলেছে, মজা করেই বলুক বা যেভাবেই বলুক, এ ধরনের কথা বলেছে যেমন, তুমি আস্তে বস চেয়ার তো ভেঙে যাবে। আমি যেহেতু নাচে ছিলাম, নাচতে গেলে বলতো যে, মা তুমি আস্তে নাচো স্টেজ ভেঙে যাবে। মা তুমি লাইনের পিছে চলে যাও, তোমার জন্য তো কাউকে দেখা যাচ্ছে না।’
এসব কথা সুন্দর করে হেসে হেসেই মানুষজন বলতেন বলেও জানান তিনি। ছোটোবেলায় এসব কথা শুনে মন খারাপ হলেও বড় হয়ে এসব আর গায়ে মাখেননি পারিসা।
তিনি বলেন, ‘এখন অনলাইন প্রমোটার হিসেবে যখন কাজ করি, তখনও বুলিংয়ের শিকার হই। লাইভে অনেকে কমেন্ট করে যে, এত মোটা, শুধু আপনাকে দেখা যাচ্ছে, আর কিছুতো দেখা যাচ্ছে না। প্রথমদিকে আমি খুব মন খারাপ করতাম। কিন্তু পরিবারের সমর্থনে সেই খারাপ লাগাগুলো কাটিয়ে উঠেছি। এখন পাশ থেকে কেউ কিছু বললেও পাত্তা দেই না।’
পারিসার ইচ্ছা কোরিওগ্রাফার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা। কেউ যদি তাকে অভিনয়ের অফার করে এবং তিনি যদি সেটা পারেন, তাহলে অভিনয়টাও করার ইচ্ছা আছে বলে জানান মিস অ্যান্ড মিসেস প্লাস বাংলাদেশ তাসনিয়া তাবাসসুম পারিসা।