তারুণ্যের প্রতীক নায়ক-গায়ক জাফর ইকবাল: ববিতা
হয় যদি বদনাম হোক আরো/ আমি তো এখন আর নই কারো, 'সুখে থেকো ও আমার নন্দিনী/ হয়ে কারো ঘরনী/ জেনে রাখো প্রাসাদেরও বন্দিনী প্রেম কভু মরেনি, এমন জন প্রিয় গানগুলো শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে জাফর ইকবালের কথা। পুরোনো দিনের মানুষসহ নতুন প্রজন্মের সব মানুষই তাকে চিনেন। তার গান শোনে মুগ্ধ হবে না এমন মানুষ খঁজে পাওয়া দায়। তাছারা তিনি চলচ্চিত্রের সব চেয়ে দাপুটে নায়কও ছিলেন জাফর ইকবাল।
জাফর ইকবালকে নিয়ে চিত্রনায়িকা ববিতা তার কিছু অভিজ্ঞতা প্রকাশ করলেন। তিনি বলেন, কাজ করতে গিয়ে এই মানুষটির সঙ্গে আমার বন্ধুত্বপূর্ণ একটা সম্পর্ক তৈরি হয়। 'মামাভাগ্নে' ছবির শুটিংয়ের সময় প্রায়ই তাকে দেখেছি গিটার বাজিয়ে গান গাইতে। দারুণ গিটার বাজাতেন। কণ্ঠও ছিল চমৎকার। তার গান শুনে একদিন গান শেখার কথা তাকে বলি। তিনিও আমাকে গানের তালিম দেওয়া শুরু করেন। গিটার বাজিয়ে ইংরেজি গান গেয়ে শোনাতেন। অভিনয়ের সুবাদে মানুষটিকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। তার খাম-খেয়ালিপনা, উদাসীনতা একদিন আমাকেও পেয়ে বসে।
তাকে প্রায় সময় দেখা যেতো গায়ে সাদা টি-শার্ট আর সাদা প্যান্ট, পায়ে সাদা জুতা। এই সাদাকালো সাদামাটা পোশাকে কী অপরূপ ফুটে উঠত। তারুণ্যের প্রতীক, সিনেমায় চলচ্চিত্রে চিরসবুজের প্রতিভূ যেন নায়ক-গায়ক জাফর ইকবাল।
জাফর ইকবালের অভিনয় ছিলো অসাধারণ। যখন যার সঙ্গে জুটিবদ্ধ হয়ে অভিনয় করেছেন সেখানেই যেন সোনা ফলেছে। বেকার যুবক, শিক্ষিত যুবক, মাস্তান, ভিক্ষারি, কণ্ঠশিল্পী, পুলিশ অফিসার, ডাক্তার, প্রেমিক- সব চরিত্রে অবলীলায় মিশে যাওয়ার যোগ্যতা তাকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়েছিল।
১৯৫০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন জাফর ইকবাল। গানকে ভালোবেসে গাইতে শুরু করেন। গিটার বাজানোয় আলাদা দক্ষতা ছিল তার। সেই সময়কার বিখ্যাত গায়ক এলভিস প্রিসলির ভক্ত ছিলেন তিনি। গানের প্রতি ভালোবাসা থেকেই ১৯৬৭ সালে বন্ধু তোতা, মাহমুদ ও ফারুককে নিয়ে গঠন করেছিলেন ব্যান্ড দল র্যাম্বলিং স্টোনস। অভিনয়ের পাশাপাশি তার গানেরও ভক্ত ছিলাম।
জাফর ইকবাল ১৯৯২ সালের ৮ জানুয়ারি পরলোক গমন করেন। তার সেই চিরচেনা হাসিমাখা মুখখানি এখনও সবার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। এমন মানুষ পৃথিবীতে বারবার আসে না। প্রয়াত নায়ক জাফর ইকবাল সবার প্রাণে আজীবন বেঁচে থাকবেন তার কর্মগুণে।
এনবিএস/ওডে/সি


