ফরীদিবিহীন এগারো বসন্ত

চলে এলা ঋতুরাজ বসন্ত। গাছে নতুন পাতা গজাচ্ছে। পল্লবের শাখায় প্রশাখায় গজাচ্ছে নতুন রঙ। বসন্তের এমন আগমনি সময়ে যে খুশির আমেজ থাকার কথা তা ম্লান হয়েছে এগারো বছর আগেই। শোবিজের মানুষদের মধ্যে এই দিনে ভরে থাকে বিষাদের ছায়া। কেননা ২০১২ সালের এই দিনে নীরবে নিভৃতে না ফেরার দেশে চলে যান শক্তিমান অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি।

১৯৫২ সালে ঢাকার নারিন্দায় জন্ম নেয়া হারানো এই নক্ষত্র মাধ্যমিকে থাকা অবস্থায়ই নাট্য জীবনে প্রবেশ করেন। সেসময় তিনি নাট্যকার বাশার মাহমুদের ‘শিল্পী নাট্যগোষ্ঠী’ সংগঠনের সাথে যুক্ত হন। কল্যাণ মিত্রের ‘ত্রিরত্ন’ নাটকের মাধ্যমে অভিনেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন হুমায়ুন ফরীদি। তিনি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানিক ক্যামিষ্ট্রিতে পড়ছিলেন তখন দেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। দেশমাতৃকার টানে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে রাইফেল কাঁধে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এই কিংবদন্তী।

যুদ্ধ শেষে আবার শিক্ষাজীবন শুরু করেন তিনি। এবার ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিতে। তবে অভিনয়ের প্রতি তীব্র আকর্ষণে তিনি বাংলা নাটকের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব সেলিম আল দীনের কাছে দীক্ষা গ্রহণ করেন। যুক্ত হন ‘ঢাকা থিয়েটার’এ।  সেখানেই তার অভিনয় প্রতিভার বিচ্ছুরণ ঘটে।

মঞ্চ থেকে ‘নিখোঁজ সংবাদ’ নাটকের মাধ্যমে টেলিভিশন নাটকে অভিষেক ঘটে হুমায়ুন ফরীদির। তবে ‘সংশপ্তক’ এর মাধ্যমে দেশজুড়ে জনপ্রিয়তা লাভ করেন তিনি। এতে কানকাটা রমজান চরিত্রে অভিনয় করেন। তার অভিনীত নাটকগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘দুই ভুবনের দুই বাসিন্দা’, ‘একটি লাল শাড়ি’, ‘মহুয়ার মন’, ‘অযাত্রা’, ‘পাথর সময়’, ‘শীতের পাখি’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘মোহনা’, ‘শৃঙ্খল’ প্রভৃতি।

চলচ্চিত্রেও রেখেছেন শ্রেষ্ঠ প্রতিভার ছাপ। ১৯৮৫ সালে ‘দহন’ সিনেমার মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষেক হয় তার। এরপর ‘সন্ত্রাস’, ‘দিনমজুর’, ‘দূরত্ব’ ‘জয়যাত্রা’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘মায়ের অধিকার’, ‘অধিকার চাই’, ‘ত্যাগ’ ও ‘মায়ের মর্যাদা’র মতো জনপ্রিয় সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। ২০০৪ সালে ‘মাতৃত্ব’ সিনেমার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন এ অভিনেতা। এছাড়া মৃত্যুর পর ২০১৮ সালে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হন হুমায়ুন ফরীদি।

এনবিএস/ওডে/সি

news