নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় (এনএসইউ) এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের (বিবিএফ) সহযোগিতায় আয়োজন করা হয়েছে জাতীয় শিক্ষা ও উদ্ভাবন সংলাপ ২০২৫। এই অনুষ্ঠানে বক্তারা একাডেমিক ব্যুরোক্রেসি মুক্তির পাশাপাশি, ব্যক্তিগত বিশ্ববিদ্যালয়ে কর না আরোপের প্রস্তাব দিয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল অডিটোরিয়াম এবং সিন্ডিকেট হলে অনুষ্ঠিত হয়েছে এই বিশেষ সংলাপ, যেখানে বিভিন্ন শিক্ষাবিদ, নীতিনির্ধারক এবং উদ্ভাবকরা একত্রিত হয়ে বাংলাদেশের শিক্ষা ও উদ্ভাবন খাতের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করেছেন। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি, শিক্ষামন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা প্রফেসর ওহিদুদ্দীন মাহমুদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর এসএমএ ফাইজ।
প্রধান অতিথি প্রফেসর ওয়াহিদুদ্দীন মাহমুদ বলেন, “শিক্ষা এবং বাজেট একে অপরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আরও সমর্থন দেওয়া উচিত।” তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, পাবলিক এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একটি হাইব্রিড মডেল গ্রহণ করা যেতে পারে।
এছাড়া বিশেষ অতিথি প্রফেসর এসএমএ ফাইজ বলেন, “আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এমনভাবে পরিবর্তন করতে হবে যাতে ছাত্ররা ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করতে পারে।”
এনএসইউর ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর আবদুল হান্নান চৌধুরী বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষা দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, তবে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এখনও বৈশ্বিক মানের থেকে পিছিয়ে আছে। আমরা প্রযুক্তি শিক্ষাকে পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে পারলে তা আমাদের আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করবে।”
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. সাইদ ফারহাত আনোয়ারও বলেন, “শিক্ষার্থীদের জন্য জ্ঞান সৃষ্টির সুযোগ সৃষ্টি করা জরুরি। আমরা যদি এমন পরিবেশ তৈরি করতে পারি, তবে উন্নতির পথ প্রশস্ত হবে। এছাড়া, আমাদের আরও বেশি বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়কে দেশে এনে প্রতিযোগিতা বাড়ানো উচিত।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, “আমাদের পাঠ্যক্রমে আরো ভোকেশনাল কোর্স অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত দক্ষতা নয়, সৎ চরিত্র এবং সততার মতো মানও শিক্ষার্থীদের মধ্যে গড়ে তুলতে হবে।”
এছাড়া, এশিয়ান টাইগার ক্যাপিটাল পার্টনার্সের প্রতিষ্ঠাতা ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, “বাংলাদেশকে যদি দ্রুত উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়, তবে আমাদের উদ্যোক্তা পরিবেশ এবং সৃজনশীলতার পথ তৈরি করতে হবে। তরুণদের জন্য সুযোগ তৈরি করা হবে, তবে সেই সঙ্গে সমাজে ধনী-দরিদ্র বৈষম্য কমানোও জরুরি।”
ব্যাংকিং খাতের বিশিষ্ট ব্যক্তি ড. আহসান এইচ. মন্সুর, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, এই আলোচনা অনুষ্ঠানে বলেছেন, “উদ্ভাবনকে গুরুত্ব দিতে হবে, কারণ এমন ছোট ছোট উদ্ভাবনও দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।”
সংলাপের প্রথম প্যানেল আলোচনা ছিল ‘বাংলাদেশের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের উন্মুক্তির সুযোগ’। যেখানে আলোচনায় অংশ নেন শেয়ারট্রিপের সিইও সাদিয়া হক, প্রাভা হেলথের সিইও সিলভানা কুয়াদার সিনহা, এনএসইউর স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ফিজিক্যাল সায়েন্সেসের ডিন প্রফেসর মোহাম্মদ শাজ্জাদ হোসেন এবং লাইটক্যাসল পার্টনার্সের কো-ফাউন্ডার বিজয়ন ইসলাম। এই সেশনে সরকারের উদ্যোগ এবং স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করা হয়।
দ্বিতীয় প্যানেল ‘প্রাইভেট সেক্টর ইনোভেশন: সাসটেইনেবল গ্রোথের চালিকা শক্তি’ নিয়ে আলোচনা হয়, যেখানে অংশগ্রহণ করেন গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের সিইও ফারজানা চৌধুরী, বিও কিউ আলফার সিইও সাম সামদানী, অ্যাসপেন ক্যাপিটাল সলিউশনসের পার্টনার রাজী আমিন এবং অ্যাঙ্করলেস বাংলাদেশ সিইও রহাত আহমেদ।
তৃতীয় প্যানেল ‘স্কিলস ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড বিল্ডিং এএআই ড্রিভেন নলেজ-ইকোনমি’-তে একত্রিত হন দেশের শীর্ষ বিশেষজ্ঞরা, যেখানে তারা বাংলাদেশকে একটি উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর কর্মশক্তির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উপায় নিয়ে আলোচনা করেন।
শেষ প্যানেলটি ছিল ‘সোশ্যাল ইনোভেশন অ্যান্ড উইমেন এন্টারপ্রেনিউরশিপ’। এতে অংশ নেন বিভিন্ন নারী উদ্যোক্তা যারা সমাজে উদ্ভাবন এবং সৃজনশীলতার মাধ্যমে পরিবর্তন আনছেন।


