উড়োজাহাজে স্বপ্নের বাড়ি

স্বপ্নের বাড়িটি বানানোর উদ্দেশ্যে মার্কিন নাগরিক জো এক্সলাইন টেক্সাসের এক প্রাইভেট এয়ারপোর্টে জমি কিনেন। সেই সঙ্গে কিনেন দুটি পরিত্যক্ত জেট, এই দুই উড়োজাহাজ দিয়েই স্বপ্ন পূরণ করেছেন তিনি।

একটি উড়োজাহাজ ম্যাকডোনেল ডগলাস এমডি-৮০ জেট, এর ষাট ফুট বডিকে তিন রুমের একটা বাসায় পরিণত করেছেন তিনি। অপরটি ম্যাকডোনেল ডগলাস ডিসি-৯। এটিতে আছে সংস্কার করা ১৯৭০ মডেলের ককপিট।

তো এই উড়োজাহাজ দিয়ে বাড়ি বানানোর এই বিচিত্র খেয়াল কেনো? জবাবে জো এক্সলাইন জানালেন, এ স্বপ্ন তার ছোটবেলার। সত্তরের দশকে, যখন তিনি শিশু, একটি টেলিভিশন সিরিজ দেখে উড়োজাহাজে বাড়ি বানানোর আইডিয়া আসে মাথায়। সিরিজটির নাম দ্য ম্যাজিশিয়ান, মূল চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন বিল বিক্সবি। সিরিজটিতে তিনি ম্যাজিশিয়ান হিসেবে দুর্দান্ত প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন। অন্যদিকে তার ছিলো একটি প্রাইভেট জেট, সেটিতে চড়ে বিভিন্ন শহরে যেতেন, অমীমাংসিত রহস্যের সমাধান করতেন। অপরাধ ঠেকাতেন। এখানে ওখানে যাওয়ার সময় বিল বিক্সবি তার গাড়িটিও প্লেনে তুলে নিতেন। এই ম্যাজিশিয়ান চরিত্রটিই জো এক্সলাইনকে উড়োজাহাজে ঘর বানানোর স্বপ্ন দেখায়।

কৈশোর পার হওয়ার পর শখের বশে তিনি বিমান চালানো শিখেন। ভালো পাইলট হিসেবে সার্টিফিকেটও পান। কিন্তু বয়স যখন ২৬, তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, আর প্লেন চালাবেন না। আইটি সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়া এবং তারপর বিয়ের পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমে পড়লেন, সফল হলেন।

২৩ বছর পর, ২০১১ সালে জো এক্সলাইন ও তার স্ত্রীর বিচ্ছেদ হলো। মুক্ত স্বাধীন জীবনযাপন করতে পারবেন, এই ভেবে উচ্ছ্বসিত হলেন জো। তখন তার সঞ্চয় আড়াই লাখ ডলার, এই টাকাই তাকে স্বেচ্ছাধীন জীবনযাপনে শক্তি জোগালো।
 

তিনি টেক্সাসে তার বাড়ির কাছেই একটি প্রাইভেট এয়ারস্ট্রিপে জায়গা কিনলেন। এবার উড়োজাহাজে বাড়ি বানানোর পালা। প্রাইভেট এয়ারপোর্টটিতে মোবাইল হোম নিয়ে বাস করা কিংবা বাড়ি বানানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও প্লেন রাখার ক্ষেত্রে কোনো বিধিনিষেধ ছিলো না। তিনি এবার প্লেনের সন্ধানে নামলেন।

জানা গেলো, ফ্লোরিডার একটি পরিত্যক্ত মলে একটি বিমান আছে। এর মধ্যে বিমানকে প্রয়োজনমতো সাজিয়ে দেন, এমন একজনের সঙ্গে জো এক্সলাইনের যোগাযোগ হলো। নিলামে তিনি ম্যাকডোনেল ডগলাস ডিসি-৯ প্লেনের একটি কাঠামো কিনলেন। এটি শুধুই ফিউজিলাজ বা বিমানের শরীর, সঙ্গে ডানা ছিলো না। আগেই বলা হয়েছে, স্পিরিট এয়ারলাইন্সের এই বিমানটিতে সংস্কার করে ১৯৭০ সালের স্টাইলে ককপিট সাজানো হয়েছিলো। নিলামে কেনার পর বিমানটি নিজের জায়গায় নিতে নিতে ১ বছর কেটে গেলো। এর মধ্যে তিনি দ্বিতীয় বিমানটির সন্ধান করছিলেন। ২০১১ সালের নভেম্বরে তিনি  ম্যাকডোনেল ডগলাস এমডি-৮০ জেটের একটি কাঠামো কিনলেন। ট্রাকে পরিবহনের সুবিধার্থে দুটি বিমানের কাঠামোই কেটেছেঁটে ৬০ ফুটে নামিয়ে আনা হয়।

ম্যাকডোনেল ডগলাস এমডি-৮০ জেটের ভেতর তিনি তিন রুমের বাসা বানিয়ে নেন। সেখানেই থাকছেন তিনি। বাসাটা তার খুব পছন্দের, কারণ ঘরগুলো সব কাছে কাছে, কয়েক ফুটের মধ্যে। তিনি জানান, এই বাসায় থাকতে তার মাসে খরচ পড়ে ২০০ ডলারের মতো। বিদ্যুৎ ও পানির বিল এবং ভূমিকর মিলিয়ে এই টাকাটা দিতে হয়, যে টাকায় এমন মানের কোনো বাসা ভাড়া পাওয়া সম্ভব নয়। নিজের আশৈশব লালিত স্বপ্নের বাড়িতে খুব ভালো আছেন জো, এখানেই থাকতে চান জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত।

এনবিএস/ওডে/সি

news