ফিলিস্তিনি নারী সাংবাদিক হত্যা ও ফিলিস্তিনের ভবিষ্যৎ

আরও এক বিখ্যাত ফিলিস্তিনি সাংবাদিককে হত্যা করল বর্ণবাদী দখলদার ইসরাইল। ফিলিস্তিনি সাংবাদিক সমিতিগুলো জানিয়েছে ২০০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ইসরাইলি সেনারা অন্তত ৪৬ জন ফিলিস্তিনি সাংবাদিককে হত্যা করেছে এবং প্রতি বছর ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের ওপর ৫০০ থেকে ৭০০টি হামলা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটায় দখলদার সেনারা।

মানবাধিকার, বাক-স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের স্বাধীনতা নিয়ে প্রতারণা ও রাজনৈতিক ছলচাতুরী খেলার শীর্ষস্থানীয় পেশাদার খেলোয়াড় মার্কিন সরকার ও পশ্চিমা সরকারগুলোও শিরিন হত্যার ঘটনাকে পাশ কাটিয়ে যাবে নিরবে অথবা বড় জোর খুব 'সাধারণ দুর্ঘটনা' হিসেবে তুলে ধরবে! ফিলিস্তিনের, ইয়েমেনের অথবা আফগানিস্তানের দরিদ্র ও মজলুম মানুষেরা পশ্চিমা মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হলে বা শরণার্থী হলে পশ্চিমা মিডিয়াগুলোর কি-ই বা আসে যায়? তারা তো আর ইউক্রেনের শ্বেতাঙ্গ চর্মধারী ও নীল-চোখা পশ্চিমা সভ্য মানুষের জাত নয়! তাই তারা এসব ঘটনা নিয়ে কেন হৈ-চৈ করবে?!!

যদিও এই ফিলিস্তিনি সাংবাদিক ছিলেন একজন স্থানীয় খ্রিস্টান ফিলিস্তিনি নারী, আর মার্কিন নাগরিকত্বও তার ছিল তবুও তিনি তো নিহত হয়েছেন মার্কিন সরকারের 'মহান' অবৈধ-সন্তানতুল্য রাষ্ট্রের 'মহান' ইহুদিবাদী ইসরাইলি সেনার গুলিতে! ফিলিস্তিনিদের ঘর-বাড়ি অবৈধভাবে ভেঙ্গে দেয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় ইসরাইলি বুলডজার যখন ২৩ বছর বয়স্ক মার্কিন নারী মানবাধিকার কর্মী রাসেল কোরিকে জীবন্ত কবর দেয় ফিলিস্তিনের মাটিতে (২০০৩ সালে) তখনও তা মার্কিন সরকারের বিবেককে বিন্দুমাত্রও আহত করেনি!  এমনকি ফিলিস্তিনের গাজার আবাসিক এলাকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক সংবাদ সংস্থা এপি'র দপ্তরকেও ইসরাইল বোমা মেড়ে গুড়িয়ে দিলেও পশ্চিমা মিডিয়া জগত তা নিয়ে তেমন কোনো হৈচৈ তোলেনি কর্পোরেট স্বার্থ রক্ষার তাগিদে!  

আসলে ইসরাইল এমন এক সারময়ের লেজ যে লেজই সামরমেয়টাকেই নাড়ায়! ইহুদিবাদ নিয়ন্ত্রিত বিশ্ব-পুঁজিবাদী স্বার্থের টানে চলতে অভ্যস্ত মার্কিন সরকার ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক জামাল খাশোগি'র (খাশোগচি) নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রেও তার প্রতিক্রিয়াকে লোক-দেখানো কিছু নিন্দাবাদে সীমিত রেখেছে! কায়েমি স্বার্থের আঁতে ঘা দেয়ায় অনুসন্ধানী অস্ট্রেলিয়ান সাংবাদিক জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জও ইঙ্গ-মার্কিন শক্তির চোখের শুল ও মহাপাপী!

সাংবাদিকরা কেন ইসরাইলের জন্য এত আতঙ্ক? 

ইসরাইলি কর্মকর্তারা আলজাজিরার সাংবাদিক ৫১ বছর বয়স্ক শিরিন আবু আক্বলেহকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে যাতে ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞ যথাযথভাবে তুলে ধরার সৎ সাহস দেখাতে না পারেন দেশপ্রেমিক ও স্বাধীনতাকামী ফিলিস্তিনি সাংবাদিকরা এবং বিশ্ববাসীও যেন ইসরাইলি অপরধযজ্ঞের খবরগুলো জানতে না পারে। মাথায় হেলমেট ও বুকে-পিঠে 'প্রেস' শব্দ-খচিত নিরাপত্তার জ্যাকেট থাকা সত্ত্বেও ইসরাইলি শার্পশুটার জুম-ক্যামেরা দিয়ে তার গলা লক্ষ্য করে গুলি চালায়! অ্যাম্বুলেন্স বা উদ্ধারকর্মীদের আগমন বিলম্বিত করে তার মৃত্যু যাতে সুনিশ্চিত করা যায় সেজন্য তার আশপাশে অনেকক্ষণ ধরে গুলি বর্ষণ অব্যাহত রাখে ইসরাইলি ঘাতক-সেনারা!  ইসরাইলি হামলায় ফিলিস্তিনের আলকুদস নামক পত্রিকার এক সাংবাদিকও গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন।

বর্ণবাদী ইসরাইল ২৫ বছর ধরে আলজাজিরা টিভিতে পাঠানো শিরিন আবু আক্বলেহ'র নির্ভীক রিপোর্টিংকে সহ্য করেছে!-যে শিরিন টুইট-বার্তায় লিখেছিলেন: আমি পবিত্র কুদস বা বেথেলহেমের কন্যা, আমি কুদসকে আনন্দিত ও প্রফুল্ল দেখতে চাই! বর্ণবাদী ইসরাইল এই পবিত্র শহর যা হাজার  হাজার বছর ধরে ফিলিস্তিনিদের মাতৃভূমি বা পিতৃভূমি সেখান থেকে কেবল ফিলিস্তিনি মুসলমানদেরই বিতাড়িত করতে চায় না, বিষাক্ত এই 'ক্যান্সার' এই অঞ্চল থেকে ফিলিস্তিনি খ্রিস্টানদেরও তাড়িয়ে দিতে চায় এবং অনেকাংশে সফলও হয়েছে ও হচ্ছে মীরজাফর বা সেবাদাস গোছের আরব রাজা-বাদশাহদের বিশ্বাসঘাতকতা ও পশ্চিমা 'আশীর্বাদের' কল্যাণে! 

শিরিন ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সংগ্রামের বৈধতার পক্ষে কথা বলতেন মিডিয়ায়! ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা তার কাছেকোনো সুদূর-পরাহত স্বপ্ন ছিল না বরং তা ছিল খুবই কাছের ও অতি-প্রিয় একটি লক্ষ্য! শাহাদাতের শিরিন শরবত পান করে শিরিনরা খুব দ্রুত তাদের লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হবে এবং বর্ণবাদী ইসরাইলের জুলুমের নাগপাশ থেকে মুক্ত হবে মুসলমানদের প্রথম কিবলা ও হযরত ঈসার পবিত্র জন্মস্থানসহ গোটা জেরুজালেম! 

দখলদার ইসরাইলি সেনারা শিরিনকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি! তারা পূর্ব বায়তুল মুকাদ্দাসের বাইত হানিয়া এলাকায় শিরিনের বাড়িতেও হামলা চালিয়েছে! নিহত সাংবাদিক শিরিনের নামও আতঙ্কগ্রস্ত করে রেখেছে হানাদার ইহুদিবাদী সেনা ও অবৈধ ইসরাইল সরকারকে! খবর পার্সটুডে/এনবিএস/২০২২/একে

news