ইসরায়েলজুড়ে বিক্ষোভের মধ্যে পার্লামেন্টে কমানো হলো আদালতের ক্ষমতাইসরায়েলজুড়ে বিক্ষোভ

ইসরায়েলে ব্যাপক গণ বিক্ষোভ ও বিরোধী দলের বর্জনের মধ্যে দেশটির পার্লামেন্টে সোমবার নতুন এটি বিতর্কিত আইন পাশ হয়েছে। ৬৪-০ ভোটে এই আইনে অযৌক্তিক মনে হলে কোন সরকারি পদক্ষেপকে বাতিল করার সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা সীমিত করা হয়েছে।

সরকার গঠনের পরই জানুয়ারিতে বিচারব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার ঘোষণা দেয় ডানপন্থী নিয়ন্ত্রিত বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকার। এর পর থেকে দেশটিতে নজিরবিহীন বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিলটির প্রতিবাদে পার্লামেন্ট অধিবেশন বয়কট করেন বিরোধী আইনপ্রণেতারা।

 দিনের শুরুতেই এই বিলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্টে প্রবেশের রাস্তায় অবস্থান নেন। চূড়ান্ত ভোটের কয়েক ঘণ্টা আগে, পার্লামেন্ট নেসেটের বাইরে পুলিশ জলকামান ব্যবহার করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে। তবে সন্ধ্যায় হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। এই আইন সংস্কারকে ঘিরে ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ শুরু হয়। বিরোধী দলগুলো সতর্ক করেছে যে এসব পদক্ষেপ সে দেশের গণতন্ত্রকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

অন্যদিকে সরকার যুক্তি দিচ্ছে, ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার স্বার্থেই এই সংশোধনী প্রয়োজন, কারণ সাম্প্রতিক দশকগুলিতে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর আদালত ক্রমবর্ধমান হারে হস্তক্ষেপ করছে।

পাার্লামেন্টে এই ভোটটি নিয়ে গত ক’মাস ধরেই ইসরায়েলে বিক্ষোভ চলছে। ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট সোমবার রাজনৈতিক নেতাদের সতর্ক করে বলেছেন, দেশটি এখন এক "জাতীয় জরুরি অবস্থার মধ্যে রয়েছে।"

বিক্ষোভকারীদের একজন বিবিসিকে বলেন যে তিনি ‘স্বৈরাচার’-এর বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। কতদিন এ অবস্থায় থাকবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা কখনোই আত্মসমর্পণ করবো না।“ আরেকজন বিক্ষোভকারী রেউত ইফাত উজিয়েল বলেন, তিনি তার সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। "নেতানিয়াহু দেশটিকে হাইজ্যাক করেছেন এবং আমি উদ্বিগ্ন যে এটি একটি ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রে পরিণত হবে," তিনি বলেন। নতুন আইনটি যাতে পাশ না হয় সেজন্য হাজার হাজার বিক্ষোভকারী গত সপ্তাহের শেষদিকে তেল আবিব থেকে জেরুজালেম পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে যাত্রা শুরু করেন।

প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু শনিবার তার হার্ট অপারেশনের পরপরই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে ভোটের কয়েক ঘণ্টা আগে পার্লামেন্টে এসে হাজির হন। এই আইন সংশোধনের প্রস্তাবে পুরো ইসরায়েল জুড়ে রাজনৈতিক মেরুকরণ এবং দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুতর অভ্যন্তরীণ সঙ্কট শুরু হয়েছে।

ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর পাইলটসহ হাজার হাজার রিজার্ভ সৈন্য প্রতিরক্ষা বাহিনীতে অংশ না নেয়ার হুমকি দিয়েছেন, যা সঙ্কটকে আরও গভীর করে তুলেছে। বিবিসি সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন, এধরনের অভূতপূর্ব ভিন্নমত ইসরায়েলের সামরিক প্রস্তুতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

ইসরায়েলের নিরাপত্তা সার্ভিসের সাবেক প্রধান, দেশের প্রধান বিচারপতি এবং বিশিষ্ট আইনজীবী এবং ব্যবসায়ী নেতারাও সরকারের এই আইন সংশোধনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই পদক্ষেপের সমালোচনা করে বলেছেন, এই “বিভাজন সৃষ্টিকারী" আইনটি যেন স্থগিত করা হয়। সূত্র: ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলা

এনবিএস/ওডে/সি

 

news