পাকিস্তান সরকার ও তেহরিকে তালেবানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি

পাকিস্তানের তেহরিকে তালেবান গোষ্ঠী ও সরকারের মধ্যে অনির্দিষ্টকালের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়েছে বলে বার্তা সংস্থাগুলো জানিয়েছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে এ খবরের সত্যতা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো বিবৃতি দেয়া হয়নি।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, পাকিস্তানের সরকার ও তেহরিকে তালেবান গোষ্ঠীর মধ্যে অনির্দিষ্টকালের যুদ্ধবিরতির অর্থ কেবলমাত্র ওই দুপক্ষের মধ্যকার কোনো সমঝোতা নয় বরং এর সঙ্গে আরো অনেক পক্ষ জড়িয়ে আছে এবং এ পদক্ষেপের ফলে কাবুলে দুপক্ষের প্রতিনিধিদের মধ্যে সংলাপের ক্ষেত্রও প্রস্তুত করেছে। যদিও আফগানিস্তানের তালেবান সরকার অনেক আগে থেকেই পাকিস্তানের সরকার ও তেহরিকে তালেবান গোষ্ঠীর মধ্যে মধ্যস্থতা করার চেষ্টা চালিয়ে আসছে কিন্তু সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত বৈঠকে আফগান তালেবান কর্তৃপক্ষ ভূমিকা রেখেছে এবং দুপক্ষকেই সংলাপ সফল হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী করে তুলেছে। এ ছাড়া, পাকিস্তানের খাইবার পাখতুন খোয়া প্রদেশের অন্তত ৫০ উপজাতি নেতাও পাক সরকার ও তেহরিকে তালেবানের মধ্যকার সংঘাত অবসানে ব্যাপক চেষ্টা চালিয়েছে।

এ ব্যাপারে পাকিস্তানের একজন বিশ্লেষক রুইয়া সেফাত বলেছেন, উপজাতি অঞ্চলের প্রভাবশালী বয়োবৃদ্ধ নেতারা ওই অঞ্চলের সংকট নিরসনে নীতি নির্ধারণী ভূমিকা পালন করছেন। তেহরিকে তালেবান গোষ্ঠী উপজাতি এলাকাসহ পাকিস্তানে ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছে। তাই ওই বৈঠকে তারা পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের অভিন্ন উপজাতি অধ্যুষিত এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিল।

যদিও পাকিস্তান সরকারের দৃষ্টিতে তালেবান একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ কিন্তু পাকিস্তানের সরকার ও সেনাবাহিনীর সমর্থনেই ৯০ এর দশকের দিকে এ গ্রুপ গঠিত হয়েছিল এবং তারাই শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয়বারের মতো আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে। আফগান তালেবান গোষ্ঠীর মতো এখন পাকিস্তানের তেহরিকে তালেবানও সেদেশে ইসলামি শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবি জানাচ্ছে এবং এমনকি প্রায়ই তারা পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় পাকিস্তান সরকার তেহরিকে তালেবানকে সাহায্য সমর্থন দেয়ার জন্য আফগান তালেবানকে অভিযুক্ত করছে। আফগানিস্তানের ভূমি ব্যবহার করেই তেহরিকে তালেবান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী হামলা চালাচ্ছে। ফলে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীও সম্প্রতি আফগানিস্তানের ভেতরে কামানের গোলা নিক্ষেপ ও সামরিক হামলা চালাতে বাধ্য হয়েছে।

ইরানের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ সুরুশ আমিরি এ ব্যাপারে বলেছেন, আফগানিস্তানের তালেবান গোষ্ঠী তেহরিকে তালেবানের প্রতি সমর্থন দিয়ে পাকিস্তানের জন্য বিরাট সমস্যা তৈরি করেছে। পাকিস্তান সরকার হয়তো কখনো ভাবেনি যে তাদের মাটিতে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তাদেরই ঘোষিত একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে সংলাপে বসতে হবে এবং এ গোষ্ঠীর সদস্যরা তারাই যারা পাকিস্তানের ভেতরেই বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বা মাদ্রাসায় লালিত পালিত হয়েছে।

যাইহোক, আফগানিস্তানের ক্ষমতায় তালেবানরা থাকায় তেহরিকে তালেবানসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী গ্রুপের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের সেনাবাহিনীও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তাদের সাথে আলোচনায় বসতে বাধ্য হচ্ছে। তেহরিকে তালেবানের সঙ্গে বৈঠকে বসার অর্থ হচ্ছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগ আইএসএস সশস্ত্র বাহিনী হিসেবে তেহরিকে তালেবানের শক্তিকে মেনে নিয়েছে। ফলে পাকিস্তান সরকার ছাড়া না দিয়ে পারবে না। এটা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জন্য অনেক বড় আঘাত হিসেবে বিবেচিত হবে। কারণ তেহরিকে তালেবানকে সুবিধা দিলে আফগানিস্তানের তালেবানও অনেক ক্ষেত্রে সুবিধা পাবে।খরব পার্সটুডে/এনবিএস/২০২২/একে

news