হাজার ছাড়াল

 অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বিমান হামলার পাশাপাশি ভারী গোলাবর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। সেখানে প্রতি মিনিটে কয়েকবার করে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজায় তাদের যুদ্ধ দ্বিতীয় ধাপে প্রবেশ করেছে, এ পর্যায়ের যুদ্ধ হবে বেশ দীর্ঘ।

গত শুক্রবার রাত নামতেই গাজায় সর্বাত্মক হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। ইন্টারনেটসহ সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে গাজায় রাতভর বিরামহীন হামলা চলে। একের পর এক বোমাবর্ষণে ‘অগ্নিকুণ্ডলীতে’ পরিণত হয় গাজা। পরিস্থিতিকে ‘নরকের’র সঙ্গে তুলনা করেছেন সেখানকার বাসিন্দারা। অনেকে বলেছেন, ভয়াবহ ভুমিকম্পের চেয়েও খারাপ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে গাজায়।

বিরামহীন হামলার সুযোগ নিয়ে উত্তর গাজায় ঢুকে পড়ে ইসরায়েলের পদাতিক বাহিনী। তাদের সামনে এগোতে সাহায্য করতে গত শনিবারও দিনরাত বিমান হামলার পাশাপাশি গোলাবর্ষণ অব্যাহত ছিল।

৭ অক্টোবর আক্রমণ শুরুর পর শুক্রবার রাতের হামলা সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল বলে জানান গাজার বাসিন্দারা। স্থানীয় একটি রেডিওকে একজনকে বলতে শোনা যায়, গত রাতে গাজায় যা ঘটেছিল, তা ছিল ‘নরকের’ মতো। গাজা সীমান্তবর্তী একটি ইসরায়েলি শহর থেকে সংবাদ সংগ্রহ করছেন বিবিসির সাংবাদিক জেরেমি বোয়েন। তিনি বলেন, গাজায় ভারী গোলাবর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। মিনিটে কয়েকবার করে গাজায় হামলা চালানো হচ্ছে।

শুক্রবার রাতের ভয়াবহ হামলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গাজা সিটি। পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তের পাশাপাশি গাজা সিটির কয়েক শ ভবন গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সকাল হতেই হামলার ভয়াবহতা প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে।

এএফপির ফটো সাংবাদিকের কয়েকটি ছবিতে দেখা যায়, আল-শাতি শরণার্থী শিবিরসহ এর কাছের কয়েকটি ভবন বিধ্বস্ত হয়েছে। এসব ভবনের ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ করতে দেখা যায় কয়েকজনকে। একটি ছবিতে এক ব্যক্তিকে ধ্বংসস্তূপ থেকে তার ছোট্ট শিশুর মরদেহ বের করে আনতে দেখা যায়।

শুক্রবার রাতের হামলায় নিহত ব্যক্তিদের মরদেহ হাসপাতালগুলোতে জড়ো করা হচ্ছে। একজন চিকিৎসকের বরাত দিয়ে সিএনএন জানায়, রাতের ওই হামলার পর শুধু একটি হাসপাতালেই ২২টি মরদেহ আনা হয়।

গাজায় বার্তা সংস্থা এপির সঙ্গে কাজ করেন ফারেস আকরাম। তিনি আল-জাজিরায়ও লেখালেখি করেন। শুক্রবার ইসরায়েলের বিমান হামলায় তার একান্নবর্তী পরিবারের ১৮ সদস্য নিহত হন। এ খবর নিশ্চিত হতে তার সময় লেগেছিল ১২ ঘণ্টা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে ফারেস আকরাম বলেন, বিমান হামলায় বিধ্বস্ত বাড়ির ধ্বংসস্তূপে পরিবারের আরও ১৮ সদস্য এখনো আটকা পড়ে আছেন।

গাজার বাসিন্দা আবির আইয়ুব বর্তমানে তুরস্কে অবস্থান করছেন। ইসরায়েলের গত কয়েক দিনের অব্যাহত হামলা সত্ত্বেও এত দিন স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন এই সাংবাদিক। কিন্তু শুক্রবার রাত থেকে ইসরায়েল কার্যত অবরুদ্ধ গাজায় ইন্টারনেটসহ সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকে স্বজনেরা হঠাৎ করেই তার খুদে বার্তার জবাব বন্ধ করে দেন বলে জানান আবির। তারা জীবিত আছেন কি না, জানতে পারছেন না তিনি।

এদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ের সময় গত শনিবার এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কুদরা যখন ব্রিফিং শুরু করেন, তখন ক্যামেরায় নিজেকে দেখানোর জন্য এক বৃদ্ধ তার পেছনে এসে দাঁড়ান। শুক্রবার রাতে ইসরায়েল হামলা শুরু করার পর স্বজনদের সঙ্গে আর যোগাযোগ হয়নি ওই বৃদ্ধের। স্বজনেরা যাতে জানাতে পারেন তিনি বেঁচে আছেন, সে জন্য ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান ওই বৃদ্ধ। সূত্র: ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলা

এনবিএস/ওডে/সি

news