গাজায় গণহত্যা হচ্ছে না, জো বাইডেনের দাবি নিয়ে বিতর্ক
গাজায় হামলা ও দখলদারিত্ব ইসরায়েল হামাসবিরোধী অভিযান বলে দাবি করলেও দেখাতে আসলে তা যুদ্ধ ও গণহত্যা। এই বার্তা দিয়ে সম্প্রতি ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার আবেদন জানিয়েছেন ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টের (আইসিসি) চিফ প্রসিকিউটর করিম খান।
কিন্তু সেই দাবির বিরোধিতা করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ‘‘গাজায় যা হচ্ছে তা কিছুতেই গণহত্যা নয়।’’
আইসিসি’র দাবির বিরোধিতা করে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকও বলেছেন, করিম খানের এই আবেদন মধ্য এশিয়ায় শান্তি আনতে পারবে না।
করিম খানের দাবি, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে হামাস ও গাজার সংঘর্ষে মানবতা বিপন্ন। নির্বিচারে প্রাণ হারাচ্ছেন গাজার নারী-পুরুষ-শিশু। ত্রাণটুকুও পৌঁছচ্ছে না। তাই, প্রয়োজন গ্রেফতারি পরোয়ানার।
নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টে মূলত গণহত্যা, মানবতাবিরোধী ঘৃণ্য অপরাধ, যুদ্ধাপরাধের বিচার হয়।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সেখানে মামলা করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, মামলা করেন গাজায় আক্রান্তদের আইনজীবীরাও।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানার সম্ভাবনা নিয়ে প্রতিবাদ ও নিন্দা করেছেন নেতানিয়াহু ও গ্যালান্ট। ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগও প্রতিবাদ জানিয়েছে।
আপত্তি জানিয়েছে আমেরিকা ও ব্রিটেন।
তবে আইসিসিকে সমর্থন করেছে ফ্রান্স ও বেলজিয়াম।
গাজার সরকারি গণমাধ্যম দফতর ও প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনও করিম খানের আবেদনকে স্বাগত জানিয়েছে।
নেতানিয়াহুর দাবি, আসলে করিম খান ফের ইহুদি-বিদ্বেষ জাগিয়ে তুলতে চাচ্ছেন। তিনি ‘আধুনিক যুগের অন্যতম প্রধান ইহুদি-বিদ্বেষী’।
নেতানিয়াহু বলেন, “দ্য হেগের আইনজীবী কী ভাবে গণতান্ত্রিক ইসরায়েলের সঙ্গে রক্তপিপাসু হামাসের তুলনা করছেন! ইসরায়েলি বাহিনী স্রেফ আত্মরক্ষার খাতিরে লড়াই করছে। আর হামাস নির্বিচারে অপহরণ করে খুন ও ধর্ষণ করেছে আমার ইসরায়েলি ভাই-বোনেদের।” প্রায় একই সুরে গ্যালান্টের দাবি, ইসরায়েলের হকের লড়াইকে অন্যায় ভাবে প্রভাবিত করতে চাচ্ছেন করিম খান।
আইসিসির প্রধান প্রসিকিউটর করিম খান যে দিন এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানার দাবি জানান, সে দিনই হোয়াইট হাউসে ‘ইহুদি ঐতিহ্য মাস’ সংক্রান্ত একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ‘‘আমি স্পষ্ট ভাবে একটা কথাই বলতে চাই। ইসরায়েল রাষ্ট্র আর হামাসের মধ্যে কোনও তুলনাই হয় না। আমরা আইসিসি-র প্রস্তাব সম্পূর্ণ খারিজ করে দিচ্ছি।’’
ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজ়ালেল স্মোট্রিচও বলেন যে, ইহুদিদের প্রতি এই ধরনের তীব্র বিদ্বেষ দেখা গিয়েছে একমাত্র নাৎসি জার্মানিতেই।
হামাসের পাল্টা দাবি, নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বিষয়টিতে বেশ দেরি করে ফেলল আন্তর্জাতিক আদালত। তবে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই।
ফ্রান্স ও বেলজিয়াম অবশ্য এক বিবৃতি প্রকাশ করে করিম খানকে সমর্থন জানিয়েছে। ফ্রান্সের মতে, ইসরায়েলের ‘আত্মরক্ষা’র খাতিরে বহু নিরপরাধ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর বিচার প্রয়োজন। একই সুর বেলজিয়ামের। এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থাগুলিও।
করিম খান ও তাঁর সহযোগীদের দাবি, হামাস মৌলিক মানবাধিকারকে খর্ব করেছে। ইসরায়েলও আত্মরক্ষার নামে আন্তর্জাতিক মানবতার আইন না মেনে নির্বিচারে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। ঠিক এই কারণেই গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রয়োজন।
গত ৭ অক্টোবর থেকে প্রায় ৩৬ হাজার প্রাণহানি ঘটেছে গাজায়। হামলা এখনও অব্যাহত। সূত্র: ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলা
এনবিএস/ওডে/সি


