২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে রাহুরের নেতৃত্বে কংগ্রেসের পুনরুত্থান

ভোট গণনার দিন বিকেলে বোন প্রিয়াঙ্কাকে সঙ্গে নিয়ে কংগ্রেস দফতরে রাহুল গান্ধী 

২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি যখন প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হলেন, তার বিশ্বস্ত অমিত শাহ বিজেপি সভাপতি হয়েই ঘোষণা করেছিলেন তাদের অগ্রাধিকার হবে একটি ‘কংগ্রেসমুক্ত ভারত’ গঠন করা। সূত্র:বিবিসি

পরে অবশ্য বিজেপি ব্যাখ্যা দিয়েছিল, কংগ্রেসমুক্ত ভারত মানে কংগ্রেস দলটাকেই নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া নয়, বরং কংগ্রেসের যে আদর্শগুলো তারা মানে না, সেগুলোর সঙ্গে রাজনৈতিক লড়াই চালানো।

কিন্তু শতাধিক বছরের পুরনো ভারতের এই ‘গ্র্যান্ড ওল্ড পার্টি’ যেভাবে সারা দেশে ২০১৪ সালে ৪৪টি বা পরে ২০১৯ সালে ৫২টি আসন পেয়ে ধুঁকছিল তাতে বিজেপি নেতারা যে কংগ্রেসকে ধর্তব্যের মধ্যেই আনছেন না, তাদের কথায় তা ছিল স্পষ্ট।

কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা রাহুল গান্ধীকে ‘পাপ্পু’ বা অপদার্থ বলে চিহ্নিত করা এবং নরেন্দ্র মোদিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়ার মতো আসলেই কেউ নেই, এই ন্যারেটিভটাকেও সচেতনভাবে প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছিল।

কিন্তু গত দেড় দু’বছরের মধ্যে কংগ্রেসের এই ভাঙাচোরা ছবিটায় একটা নাটকীয় পালাবদল এসেছে।

২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে দেশের দক্ষিণতম প্রান্ত থেকে পায়ে হেঁটে যাত্রা শুরু করে কাশ্মীর পর্যন্ত একটানা পাঁচ মাস ধরে রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ দেশে রীতিমতো সাড়া ফেলেছিল পাশাপাশি রাহুল গান্ধী যে রাজনীতিবিদ হিসেবেও আন্তরিক ও সিরিয়াস, তার সেই নতুন পরিচিতিটাও ধীরে ধীরে তৈরি হচ্ছিল।

পরে দেশের পূর্বে মণিপুর থেকে পশ্চিমে মুম্বাই পর্যন্ত সেই পদযাত্রারই দ্বিতীয় পর্ব, ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’ও যথেষ্ঠ সফল ছিল।

রাহুল তখন প্রায়ই বলতেন, বিজেপির ঘৃণা ও বিদ্বেষের রাজনীতির বিরুদ্ধে তিনি ‘মহব্বত কা দুকান’ (ভালোবাসা বিলি করার দোকান) খুলতে চান, যে ভাবনাটাকে দেশের একটা বড় অংশের মানুষ সাদরে মর্যাদা দিয়েছিলেন।

তাৎক্ষণিকভাবে তখনই ভোটের বাক্সে হয়তো এর সুফল দেখা যায়নি, কিন্তু রাহুল গান্ধীর রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্য বাড়াতে এই যাত্রাগুলোর অবশ্যই খুব বড় ভূমিকা ছিল। লক্ষ্য করার বিষয় হল, রাহুলকে বিজেপির ‘পাপ্পু’ বলে আক্রমণ করাটাও ক্রমশ বন্ধ হয়ে এসেছিল।

এবারের লোকসভা নির্বাচনে এসে দেখা যাচ্ছে, সেই রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বেই কংগ্রেস কিন্তু প্রায় ‘সেঞ্চুরি’ করে ফেলেছে, তাদের নিজেদের আসন সংখ্যা গতবারের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ করতে পেরেছে।

এমন কী, বিরোধী শিবির যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে কাউকে তাদের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে তুলে ধরেনি দেশের মানুষের চোখে রাহুল গান্ধীই কিন্তু ছিলেন মোদীর অঘোষিত চ্যালেঞ্জার।

ফলে নরেন্দ্র মোদির কোনও বিকল্প নেই, বিজেপি এই যে কথাটা এতদিন ধরে বলে এসেছে, সেই ‘টিনা’ ফ্যাক্টরও (‘দেয়ার ইজ নো অল্টারনেটিভ’) এবারের ভোটে সেভাবে কাজ করেনি। কারণ রাহুল গান্ধী ছিলেন, তার নেতৃত্বে কংগ্রেসও ছিল উজ্জীবিত ভূমিকায়।

উত্তরপ্রদেশে যেমন রাহুল গান্ধী ও সমাজবাদী পার্টির তরুণ নেতা অখিলেশ যাদবের ‘জুটি’ রাজ্যে দারুণ হিট তাদের দুই দলের জোট সেখানে ৪৩টি আসন পেয়ে বিজেপিকে অনেক পেছনে ফেলে দিয়েছে।

কংগ্রেস যেখানে একটা সময় ওই রাজ্যে অস্তিত্ত্ব বাঁচানোর জন্য লড়ছিল, সেখান থেকেই তারা এবার পাঠাচ্ছে ছ’জন এমপিকে।

সামগ্রিকভাবে কংগ্রেসের নেতৃত্বে বিরোধীদের ‘ইন্ডিয়া’ জোটও যেভাবে শেষ পর্যন্ত ২৩২টি আসন পেয়েছে, সেটাও অনেকেই ভাবতে পারেননি।

এই জোটের বৃহত্তম দল হওয়া সত্ত্বেও কংগ্রেস যেভাবে অন্য শরিকদের মান-অভিমান ও ‘ইগো’কে মর্যাদা দিয়ে শেষ পর্যন্ত জোটটাকে মোটামুটি ঐক্যবদ্ধ রাখতে পেরেছে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা সে জন্য রাহুল গান্ধীর কুশলী নেতৃত্বর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করছেন।

কংগ্রেসসহ বিরোধীদের এই ‘পুনরুত্থান’ যে তৃতীয় দফায় নরেন্দ্র মোদির অগ্রযাত্রা অনেকটা প্রতিহত হওয়ার একটা বড় কারণ, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।

এযাবত রাহুল গান্ধীর রাজনৈতিক জীবনকেও বিশ্লেষকরা মোটামুটি দুভাগে ভাগ করেন। প্রথম পর্বের ছেলেমানুষি, খামখেয়ালিপনা, সিরিয়াসনেসের অভাব  এগুলোকে কাটিয়ে উঠে গত তিন-চার বছরে তিনি যেন অনেক পরিণত, বিচক্ষণ হয়েছেন এবং অনেক বেশি মাটির কাছাকাছি আসতে পেরেছেন এটা তার সমালোচকরাও আজকাল স্বীকার করেন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে এখন যে এখন বিস্তর বুঝেশুনে পা ফেলতে হবে, তার পেছনে এই রাহুল গান্ধী সত্যিই খুব বড় অবদান আছে। সূত্র: ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলা

এনবিএস/ওডে/সি

news