‘দ্যা থর্ন অ্যান্ড দ্যা কার্নেশন’ অর্থাৎ ‘কাঁটা ও ফুল’ নামক গ্রন্থটি হামাস নেতা ও শহীদ কমান্ডার ইয়াহিয়া সিনওয়ার লেখা নামকরা উপন্যাস। এর পাশাপাশি, সিনওয়ার হিব্রু ও ইংরেজি থেকে আরও পাঁচটি বই অনুবাদ করেছেন এবং সাহিত্যের ক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক বন্দীদের একজন হিসাবে তিনি পরিচিত।
ময়দানে একজন সেনাপতি হিসেবে সিনওয়ার ছিলেন দারুণ সাংস্কৃতিক ও সাহিত্যিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন ব্যক্তি। তিনি একজন অনুবাদক এবং বেশ কয়েকটি বইয়ের লেখক ছিলেন। পার্সটুডে জানিয়েছে, আলী সালিমি এ বিষয়ে ইরানের দৈনিক হামশাহরি পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে লিখেছেন:
ইয়াহিয়া ইব্রাহিম হাসান আল- সিনওয়ার একজন সামরিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, যিনি ইয়াহিয়া সিনওয়ার নামে পরিচিত। তাঁর শৈল্পিক ব্যক্তিত্ব থেকে তাঁর উন্নত চিন্তা, সংস্কৃতি ও সাহিত্যের পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি বেশ কিছু গ্রন্থের রচয়িতা এবং অনুবাদক। ইহুদিবাদী ইসরাইলের কারাগারে বন্দী থাকা অবস্থায় তিনি এই সাহিত্যকর্ম আঞ্জাম দিয়েছিলেন।
সিনওয়ার কিশোর বয়সেই ফিলিস্তিনের মুক্তি সংগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন, ১৯৮৮ সালে ইসরাইলি সেনাদের এক অভিযানে গ্রেপ্তার হন এবং চারবার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন! তিনি ২০১১ সাল পর্যন্ত ইসরাইলি কারাগারে ছিলেন এবং তার জীবনের প্রায় ২২টি বছর ইসরাইলের ভয়ানক কারাগারে কাটিয়েছিলেন। কিন্তু এই সময়ে তিনি অলস বসে থাকেননি। তিনি ইসরাইলি কারাগারে হিব্রু ভাষা শিখেছিলেন এবং সাহিত্য রচনা শুরু করেছিলেন।
"কাঁটাএবং ফুল" উপন্যাসটি সাহিত্য ক্ষেত্রে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান যা তিনি কারাগারে বসে লিখেছিলেন। কিন্তু অ্যামাজনের সর্বোচ্চ বিক্রির তালিকায় স্থান পাওয়ার পর ইসরাইলের চাপের কারণে এই উপন্যাস সমস্ত সাইট থেকে মুছে ফেলা হয়।
ইসরাইলের পক্ষে ব্রিটিশ আইনজীবী অ্যামাজনকে বলেছিলেন যে সিনওয়ারের বই বিক্রি অবৈধ। তিনি চলতি বছরের ১৮ এপ্রিলে অ্যামাজনকে জানান যে তার বই বিক্রির সুযোগ ব্রিটেনের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের লঙ্ঘন। অ্যামাজনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উত্থাপনের পরের দিনই অ্যামাজন বইটি সরিয়ে দেয় যাতে বিক্রি না হয়।
অবশ্য, ‘দ্যা থর্ন অ্যান্ড দ্যা কার্নেশন’ উপন্যাসটি লেখার পাশাপাশি সিনওয়ার হিব্রু এবং ইংরেজি থেকে আরও পাঁচটি বই অনুবাদ করেছেন এবং সাহিত্যের ক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক বন্দীদের একজন হিসাবে তিনি পরিচিতি পান। এ কারণে তাঁর আশেপাশের ব্যক্তিরা তাকে একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হিসাবে বিবেচনা করার পাশাপাশি সাহসী যোদ্ধা ও সংগ্রামী হিসাবে চেনেন।
"কাঁটা ও ফুল" উপন্যাস
"কাঁটা ও ফুল " উপন্যাসটি ২০০৪ সালে ইসরাইলের "বিয়ার শেভা" কারাগারে লেখা হয়েছিল। বইয়ের এমন নামকারণ গাজার জীবনেরই প্রতিচ্ছবি। গাজার মানুষের জীবন তীব্র যন্ত্রণা ও কষ্টের জীবন যা কাঁটার প্রতীক এবং লেখক এটিকে লবঙ্গ ফুলের সাথে তুলনা করেছেন যা আনন্দের প্রতীক। এই উপন্যাসে প্রেম এবং সহিংসতা, আশা এবং হতাশা, কোমলতা এবং শক্তির বিষয়টি চমৎকারভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
‘কাঁটা ও ফুল’ একটি শিক্ষামূলক উপন্যাস এবং আধ্যাত্মিক যাত্রায় পূর্ণতাপ্রাপ্তির বর্ণনা দেয়া হয়েছে যেখানে "আহমেদ" নামে একজন ব্যক্তির কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে। এতে গাজা ও আল খলিলে দুটি পরিবারের গল্প এবং দুটি প্রতিরোধ আন্দোলনের বর্ণনা রয়েছে যার সাথে সিনওয়ারের জীবনের কাহিনী জড়িত।
প্রতিরোধের মহাকাব্যিক বর্ণনার পাশাপাশি এই উপন্যাসে ফিলিস্তিনিদের কিছু প্রকট সামাজিক সমস্যার চিত্রও উঠে উসেছে। উদাহরণ স্বরূপ, উপন্যাসটিতে কিছু ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের ইসরাইলে কাজ করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যেটাকে কেউ কেউ তাদের পরিবারের জন্য তাদের জীবনযাত্রার অবস্থার উন্নতি করার সুযোগ হিসেবে দেখেছেন, আবার কেউ কেউ এটিকে বিশ্বাসঘাতকতা হিসাবে দেখেছেন।
অন্যদিকে, উপন্যাসে আহমেদ এবং অন্যান্য চরিত্রের কথোপকথনে কিছু ধর্মীয় বিষয় এবং ফিলিস্তিনের কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য এবং অন্যান্য প্রতিরোধ গোষ্ঠী সম্পর্কে তাদের দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
বাস্তব জীবনে ইসরাইলি গুপ্তচরদের শনাক্ত করার দায়িত্ব ছিল সিনওয়ারের। এই বইতে সিনওয়ার ফিলিস্তিনিদের সহজসরল জীবন ও দারিদ্র্য নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন।