সৌদি যুবরাজের তুরস্ক সফর: পিছু হটলেন এরদোগান; খাশোগি হত্যাকাণ্ডের নথিপত্র যাচ্ছে রিয়াদে

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারা সফরে গেলে সেদেশের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছেন।

বেশ ক'বছর ধরে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক চলে আসার পর শেষ পর্যন্ত তুরস্ক ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়েছে। এর আগে সৌদি পররাষ্ট্র নীতি বিশেষ করে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের প্রধান সমালোচক হিসেবে পরিচিতি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান গত এপ্রিলে সৌদি আরবের ব্যাপারে নিজের কট্টর অবস্থান থেকে সরে এসে রিয়াদ সফরে গিয়েছিলেন এবং দেশটির রাজার সাথে সাক্ষাতে মিলিত হয়েছিলেন। বর্তমানে সৌদি যুবরাজের আঙ্কারা সফর এরদোগানের রিয়াদ সফরের জবাব হিসেবেই ধরা হচ্ছে যাতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং যে কোনো উত্তেজনার অবসান ঘটে।

এতে কোনো সন্দেহ নেই যে সৌদি যুবরাজ বিন সালমানের তুরস্ক সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে সৌদি ভিন্ন মতবালম্বী সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যার ঘটনায় সরাসরি নিজের জড়িত থাকার অপরাধকে আড়াল করা। ২০১৮ সালের অক্টোবরে ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে সৌদি নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নৃশংসভাবে খুন হন সাংবাদিক জামাল খাশোগি। এ অবস্থায় তুরস্কের মাধ্যমে মানবাধিকার ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সমাজের চাপ কমানো এবং এ ক্ষেত্রে তুরস্ক সরকারের সমর্থন পাওয়া যাবে বলে বিন সালমান আশা করছেন।

তুরস্ক সফরের পেছনে সৌদি যুবরাজের আরেকটি উদ্দেশ্য হচ্ছে নিজেকে সৌদি আরবের সর্বময় ও একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে তুলে ধরা। তিনি এমন সময় সৌদি রাজা হিসেবে নিজেকে জাহির করছেন যখন এ ধরণের সফরের মাধ্যমে বিশেষ করে নিজ দেশে ব্যাপক অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজের ভাবমূর্তি তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। বিন সালমান এর আগে মিশরসহ মধ্যপ্রাচ্যের আরো তিনটি দেশ সফর করেছেন যারা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে খুবই দুর্বল। এসব দেশে তিনি অর্থনৈতিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজের মর্যাদা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন যাতে সৌদি আরবের পরবর্তী রাজার পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার জন্য তিনি আন্তর্জাতিক সমর্থন লাভ করতে পারেন।

তবে, সৌদি যুবরাজের আঙ্কারা সফর তুরস্কের অভ্যন্তরে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় তুলেছে। প্রেসিডেন্ট এরদোগান সবসময়ই প্রমাণ করেছেন সময় ও সুযোগ মতো তার পররাষ্ট্র নীতিতে পরিবর্তন আনতে তিনি দ্বিধা করেন না।  বিগত অনেক বছর ধরে এরদোগান ছিলেন সৌদি আরবের প্রধান সমালোচক। বিশেষ করে জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ডের পর এরদোগানের সমালোচনার মাত্রা তীব্র আকার ধারণ করেছিল। ২০১৮ সালেই এরদোগান এ কথা ফাঁস করে দেন যে সৌদি সরকার জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত সমস্ত নথিপত্র রিয়াদের কাছে হস্তান্তর করার অনুরোধ জানিয়েছে। কিন্তু আমরা চাই তারা তুরস্কে আসুক এবং আমাদের কাছে সংরক্ষিত অডিও রেকর্ড শুনুক তারপরও এ সংক্রান্ত প্রমাণপত্র আমরা তাদেরকে দিতে রাজি নই। কেননা তারা হয়তো চায় এসব প্রমাণ ধ্বংস করে ফেলতে।

যাইহোক, শেষ পর্যন্ত এরদোগানের এসব বক্তব্যের প্রায় সাড়ে তিন বছর পর তুরস্কের আদালত জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত সমস্ত নথিপত্র সৌদি আরবের কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দিয়েছে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, তুরস্ক বর্তমানে তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে এবং এ কারণে সরকার অভ্যন্তরীণ চাপের মুখে রয়েছে। এ অবস্থায় প্রেসিডেন্ট এরদোগানের ধারণা আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং তুরস্কে ওই দেশটির ব্যাপক পুঁজি বিনিয়োগের মাধ্যমে তুর্কি জনগণের কাছে নিজের ভাবমূর্তি উন্নত করা যাবে এবং জনপ্রিয়তা বাড়বে।

তবে সৌদি আরবের ব্যাপারে এরদোগানের নীতিতে পরিবর্তন আসায় তুরস্কের  অভ্যন্তরে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। তুরস্কের ফিউচার পার্টির নেতা ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আহমাদ দাউদ ওগ্লু বলেছেন, খাশোগি হত্যার প্রমাণ পত্র সৌদি আরবকে দেয়া হলে তা হবে তুরস্কের জন্য মর্যাদাহানিকর। 

যাইহোক, তুরস্ক ও সৌদি আরবের নেতাদের এসব সফর বিনিময়ের উদ্দেশ্য যতটা না বন্ধুত্বের খাতিরে তার চেয়ে বেশি বিন সালমান ও এরদোগানের অভিন্ন স্বার্থ ও প্রয়োজনীয়তাকে কেন্দ্র করে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।খবর পার্সটুডে/এনবিএস/২০২২/একে

news