ভারতের তথাকথিত ‘অপারেশন সিন্ধুর’-এর নামে পাকিস্তানের ভূখণ্ডে চালানো একতরফা ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। ভারত দাবি করছে, তারা পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে ৯টি ‘সন্ত্রাসী ঘাঁটি’ লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো—এই হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নিরীহ নাগরিক, ধর্মীয় স্থান এবং শিশুদের স্কুল। পাকিস্তান এই আগ্রাসনকে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবি করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।

ভারতের দাবি অনুযায়ী, তাদের সেনা, বিমান ও নৌবাহিনী একযোগে তথাকথিত ‘সন্ত্রাসবাদবিরোধী’ অভিযান চালায়। এ অভিযানে ব্যবহার করা হয় ‘লোইটারিং মিউনিশন’—এক ধরনের ড্রোন যা একবার ছাড়া হলে নিজে থেকেই লক্ষ্য খুঁজে নিয়ে আঘাত হানে।

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা শুধুমাত্র ‘সন্ত্রাসী ঘাঁটি’ লক্ষ্য করেছে এবং কোনো সামরিক স্থাপনায় আঘাত করেনি।

কিন্তু পাকিস্তান বলছে, এই হামলা ছিল সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন, এবং আঘাত হেনেছে বেসামরিক এলাকায়—গ্রাম, মসজিদ ও স্কুল লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের কাছে পাকিস্তান ইতোমধ্যে উপগ্রহ চিত্র ও ধ্বংসাবশেষের প্রমাণ উপস্থাপন করেছে।

পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল আহমেদ শরীফ এক বিবৃতিতে বলেন—“ভারতের এই আগ্রাসন কেবল আন্তর্জাতিক আইন নয়, মানবাধিকার লঙ্ঘনও বটে।”

তিনি আরও জানান, পাকিস্তান শান্তি চায় এবং সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু কেউ যদি দেশের মাটি বা মানুষের ওপর হামলা চালায়, তার উপযুক্ত জবাব অবশ্যই দেওয়া হবে।

প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠক ডেকে এই ইস্যু জাতিসংঘে তোলা এবং আন্তর্জাতিক আদালতে ন্যায়বিচার চাওয়ার ঘোষণা দেন।

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং, বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলসহ একাধিক বিজেপি নেতা এই হামলার পর “ভারত মাতা কি জয়” স্লোগানে সোশ্যাল মিডিয়া ভরিয়ে দেন।

কিন্তু পর্যবেক্ষকদের মতে, এই প্রচারণা আসলে ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা আড়াল করার হাতিয়ার। আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে সরকার চাইছে ‘দেশপ্রেম’ আর ‘সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান’-এর নাটক সাজিয়ে জনমত ঘুরিয়ে দিতে।

ভারতের প্রধান বিরোধী দলগুলোর সদস্যরাও যেন প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছেন পাকিস্তানকে ‘শাস্তি’ দেওয়ার পক্ষে স্লোগান দিতে। কিন্তু কেউ একবারও প্রশ্ন তোলেনি—এই হামলার আসল ভিত্তি কী ছিল? কোথায় প্রমাণ?

ভারতের অভিযোগ—পাকিস্তান অপারেশনের পর কাশ্মীরের ভিম্বের গলি এলাকায় গোলাবর্ষণ করেছে। কিন্তু পাকিস্তানের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্য।

বলা হয়েছে—ভারত নিজের আগ্রাসনের দায় পাকিস্তানের ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছে। সীমান্তে শান্তি বজায় রাখতে পাকিস্তান বরাবরই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে সশস্ত্র আক্রমণের জবাব না দিলে সেটা হবে জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।

ভারতের তথাকথিত অপারেশন সিন্ধুরের মাধ্যমে দেখা গেল, কীভাবে আধুনিক ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি রাষ্ট্র প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিমূলক হামলা চালাতে পারে। পাকিস্তান বিশ্বের কাছে আহ্বান জানিয়েছে—এই যুদ্ধপ্রবণতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।

শান্তির পথে অবিচল পাকিস্তান স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে—সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তারা অটল, কিন্তু একইসঙ্গে আগ্রাসনের বিরুদ্ধেও প্রস্তুত।

news