ইরানে ফোন নম্বর পাঠানোর দায়ে কাশ্মীরি যুবক সৌদি কারাগারে

সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চলীয় দাম্মাম শহরে কর্মরত কাশ্মীরের এক যুবক ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরানে তারই পরিচিত এক কাশ্মীরি ছাত্রকে হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার সরবরাহ করার কারণে দুই বছর ধরে কারাগারে রয়েছেন। এরইমধ্যে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে তার পরিবার মারাত্মক উদ্বেগ উৎকণ্ঠা এবং দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে।

বিষয়টি ইরানের প্রেস টিভি জানার পর অনুসন্ধানে নামে এবং ঘটনার সত্যতা খুঁজে পায়। জাভেদ আহমদ মীর নামে  ৩৭ বছর বয়সী ওই যুবক ২০১৪ সালে দাম্মাম শহরে একটি চীনা ফুড চেইন শপে চাকরি নিয়ে কাশ্মীর থেকে সৌদি আরবে যান। এরপর তিনি ২০১৬ এবং ২০১৮ সালে ছুটিতে দেশে বেড়াতে যান।

২০১৮ সালের ডিসেম্বরে তিনি কাশ্মীরে ফিরে বিয়ে করেন এবং স্ত্রীকে পরিবারের সাথে রেখে আবার সৌদি আরব ফিরে যান। ২০১৯ সালে তার একটি মেয়ে শিশু জন্মগ্রহণ করে কিন্তু কোভিড মহামারি ছড়িয়ে পড়ার কারণে জাভেদ আহমদ মীর দেশে ফিরতে পারেন নি।

২০২০ সালের মার্চ মাসে ইরানের মাশহাদ শহরে অধ্যয়নরত ইমতিয়াজ হুসাইনি নামে এক ছাত্র তার হোয়াটসআপ নাম্বার চান। জাভেদ তার নাম্বার ইমতিয়াজ হোসাইনিকে দেয়ার পরপরই সৌদি পুলিশ তাকে আটক করে। তার অফিসের এক সহকর্মী পরের দিন ফোন করে কাশ্মীরে জাভেদের পরিবারকে জানান। সেই আটকের পর এই পর্যন্ত জাভেদ আহমদ মীর সৌদি কারাগারে আটক রয়েছেন। আর্থিক সংকটের কারণে তার পরিবার সৌদি আরবে তার জন্য কোনো আইনজীবী নিয়োগ করতে পারেন নি। এ পর্যন্ত দুটি শুনানি হয়েছে কিন্তু তার মুক্তির ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি হয় নি।

হোয়াটঅ্যাপ নাম্বার পাওয়ার ব্যাপারে ইমতিয়াজ হোসাইনি প্রেস টিভিকে জানিয়েছেন, তিনি ওই বছর সৌদি আরব সফর করতে চেয়েছিলেন। এজন্যই বিভিন্ন পরামর্শ করতে পূর্ব পরিচিত জাভেদ আহমেদের হোয়াটস্যাপ নাম্বার চান। তিনি আশা করেছিলেন, সৌদি সফরের সময় তিনি জাবেদ মীরের পরামর্শ এবং গাইড পাবেন। বিতর্কিত কোনো কর্মকাণ্ডের জন্য জাভেদ মীরের ফোন নাম্বার নেননি বলে জানান ইমতিয়াজ হুসাইনি।

এদিকে, জাভেদ আহমদ মীর আটকের পর দুই বছরের বেশি সময় পার হওয়ার কারণে তার পরিবারে নানা ধরনের ট্রাজেডি নেমে এসেছে। মেয়ে শিশুটির বয়স তিন বছর হলেও জাভেদ মীর তার সন্তানের মুখ দেখতে পারেন নি। আবার তার সন্তান ও বাবার ছোঁয়া পায় নি। দীর্ঘদিন কারাগারে থাকায় তার স্ত্রী হতাশ হয়ে পড়েছেন। এছাড়া, বৃদ্ধ মা-বাবা ভীষণ মনোকষ্টের ভেতর দিয়ে দিন পার করছেন। জাভেদ মীদের শোকে এবারের ঈদটাও তাদের বড় কষ্টই কেটেছে। তাছাড়া জাবেদ মীর পরিবারকে আর্থিক সমর্থন দেবেন বলে চাকরি নিয়ে সৌদি আরবে গেলেও এখন কারাগারে আটক থাকার কারণে তিনি কোন অর্থ করে দিতে পারেন না। বিধায় তার পরিবার মারাত্মকভাবে আর্থিক সংকটের মুখে পড়েছে।
এই অবস্থায় জাবেদ মীরের মা-বাবা এবং ভাই তার আশু মুক্তি দাবি করেছেন। খবর পার্সটুডে/এনবিএস/২০২২/একে

news