ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেট দখলকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব আরোপের একটি বিলের প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছে।
এই পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড সংযুক্তির সমান ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রকাশ্য লঙ্ঘন বলে মনে করছে।
বিতর্কিত এই বিল পাসের পরপরই যুক্তরাষ্ট্র ও আরব দেশগুলো তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সতর্কবার্তা
ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, এই বিল মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রক্রিয়াকে বিপদে ফেলতে পারে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সাংবাদিকদের বলেন, “নেসেটে ভোটে বিলটি পাস হয়েছে, তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পরিষ্কারভাবে জানিয়েছেন—এ মুহূর্তে আমরা এর পক্ষে নই। এটি গাজা শান্তি চুক্তির জন্য হুমকি হতে পারে।”
গত মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইসরায়েলকে সতর্ক করে বলেছিলেন, তিনি কোনোভাবেই এমন সিদ্ধান্ত অনুমোদন করবেন না যা আরব দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করে বা গাজা শান্তি পরিকল্পনাকে ব্যাহত করে।
সৌদি আরবের তীব্র নিন্দা
প্রভাবশালী আরব দেশ সৌদি আরব নেসেটের বিলের কঠোর নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এটি “অবৈধ উপনিবেশ স্থাপনকে বৈধ করার প্রচেষ্টা।”
রিয়াদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, “আমরা সব ধরনের দখলনীতি ও অবৈধ বসতি স্থাপনের তীব্র বিরোধিতা জানাই এবং ১৯৬৭ সালের সীমারেখা অনুযায়ী পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক অধিকারকে পুনরায় সমর্থন করছি।”
সৌদি বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ করে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের মাধ্যমে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠাই এখন একমাত্র পথ।”
আরব ও ফিলিস্তিনি প্রতিক্রিয়া
নেসেটের ভোটের পর ফিলিস্তিন, হামাস, কাতার ও জর্ডানও তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, “পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম ও গাজা—এই অঞ্চলগুলো একক ভৌগোলিক ইউনিট, যার ওপর ইসরায়েলের কোনো সার্বভৌমত্ব নেই।”
হামাস এক বিবৃতিতে জানায়, “এই বিল দখলদার ইসরায়েলের ঔপনিবেশিক মুখোশ সরিয়ে দিয়েছে। পশ্চিম তীর দখলের এই প্রচেষ্টা অবৈধ এবং আমরা একে সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করছি।”
কাতার বলেছে, “এটি ফিলিস্তিনি জনগণের ঐতিহাসিক অধিকারের প্রকাশ্য লঙ্ঘন এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি স্পষ্ট চ্যালেঞ্জ।”
আর জর্ডান তাদের পররাষ্ট্র বিবৃতিতে জানায়, “এই পদক্ষেপ দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের ভিত্তি ধ্বংস করবে এবং ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারে সরাসরি হস্তক্ষেপ।”
নেসেট ভোট ও ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি
১২০ সদস্যের নেসেটে ভোটে ২৫ জন পক্ষে এবং ২৪ জন বিপক্ষে মত দেন।
যদিও প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তার দল লিকুদ পার্টি বিলটির বিরোধিতা করেছে, তবুও এটি প্রাথমিকভাবে অনুমোদিত হয়েছে।
বিলটি কার্যকর হতে আরও তিন দফা ভোট পেরোতে হবে।
নেসেটের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “জুডিয়া ও সামারিয়া পশ্চিম তীর-এর অঞ্চলে ইসরায়েল রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব প্রয়োগের লক্ষ্যে এই বিল আনা হয়েছে।”
লিকুদ পার্টি একে “বিরোধীদের রাজনৈতিক উসকানি” বলে অভিহিত করে দাবি করেছে, এটি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করতে পারে।
তবে নেতানিয়াহুর জোটের কট্টর ডানপন্থী শরিক দলগুলো—ইতামার বেন-গভিরের জিউইশ পাওয়ার পার্টি এবং বেজালেল স্মোট্রিচের রিলিজিয়াস জায়োনিজম পার্টি—বিলটির পক্ষে ভোট দেয়।
