ফিলিস্তিনের গাজায় দুই বছর ধরে চলা যুদ্ধের ধাক্কা এবার ইসরায়েলের ভেতরেই পড়েছে। দেশটিতে ক্ষুধা আর খাদ্যসংকট এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, মানবিক সংস্থা লাতেত-এর বার্ষিক প্রতিবেদনে এটাকে সরাসরি ‘সামাজিক জরুরি অবস্থা’ বলে ঘোষণা করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের মোট পরিবারের ২৬.৯ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় ৮ লাখ ৬৭ হাজার ২৫৬ পরিবার এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় কষ্ট পাচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এটা ২৭.৫ শতাংশ বেড়েছে – দেশের ইতিহাসে এটা সর্বোচ্চ।
শিশুরাও কষ্টে আছে। বর্তমানে ১১ লাখ ৮০ হাজারের বেশি শিশু – যা ৩৭.৫ শতাংশ – নিয়মিত পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছে না। যুদ্ধ শুরুর পর গত দুই বছরে যারা নতুন করে সাহায্য চাইতে শুরু করেছে, তাদের ‘নতুন দরিদ্র’ বলে চিহ্নিত করেছে লাতেত।
সংস্থাটি জানায়, খাদ্যসংকট এখন আর শুধু গরিবদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় – নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোও এতে জড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে ইসরায়েলের ১০ শতাংশ পরিবার চরম খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আছে।
এদিকে, সাহায্য চাইলে বাড়ছে, কিন্তু অনুদান কমছে। যুদ্ধের খাতে খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেক দাতা সংস্থা আগের মতো দিতে পারছে না – ফলে মানবিক কাজের ওপর চাপ পড়েছে।
জীবনযাত্রার খরচও দ্রুত বাড়ছে। চলতি বছরে একজনের ন্যূনতম খরচ ৫.৫ শতাংশ এবং একটা পরিবারের ৫.৬ শতাংশ বেড়েছে। ইসরায়েলে সম্মানজনকভাবে বাঁচতে একজনের মাসে ৫,৫৮৯ শেকেল (১,৭৩৩ ডলার) আর চার সদস্যের পরিবারের ১৪,১৩৯ শেকেল (৪,৩৮৪ ডলার) লাগে।
সাহায্য নেওয়া পরিবারের ৫৯.৬ শতাংশ বলেছে, গত বছর তাদের আর্থিক অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। তাদের ৩৩.১ শতাংশের ব্যাংক হিসাব জব্দ বা বাজেয়াপ্ত হয়েছে – সাধারণ নাগরিকদের তুলনায় তিন গুণ বেশি। এই পরিবারগুলো মাসে গড়ে ১২,৭৩৪ শেকেল খরচ করে, যা তাদের আয়ের প্রায় দ্বিগুণ।
সংকটের ধাক্কা শিক্ষায়ও পড়েছে।
৩৩% পরিবার স্কুলের বই-খাতা কিনতে পারেনি।
৮৪% পরিবার খরচের কারণে সন্তানদের স্কুল কার্যক্রম বা ভ্রমণে পাঠাতে পারেনি।
৬১.৯% মানুষ বলেছে, তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো নেই।
৪২.৪% বলেন, ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবরের পর তাদের মানসিক স্বাস্থ্য আরও খারাপ হয়েছে।
উল্লেখ্য, ১০ অক্টোবর ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এর আগে দুই বছরের ইসরায়েলি হামলায় ৭০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ৭১ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
