পরমাণু গবেষণায় ইতিহাস! সূর্য-তারার মতো দূষণহীন, অফুরন্ত শক্তির জোগান দেবে নিউক্লিয়ার ফিউশন
তেজস্ক্রিয়তা ছড়াবে না, দূষিত গ্যাস বিশ্ব-উষ্ণায়ণের কারণ হবে না। সূর্য ও মহাকাশের নক্ষত্রেরা যেভাবে শক্তি তৈরি করে ঠিক সেই পদ্ধতিতেই বিপুল শক্তির জোগান দেওয়ার পদ্ধতি বের করে ফেলেছেন বিজ্ঞানীরা। পরমাণুর সঙ্গে পরমাণু জোড়া দিয়ে আরও বড় পরমাণু তৈরি করে তার থেকে শক্তি ও তেজ পাওয়া যাবে। পরমাণু বিজ্ঞানে যাকে বলে নিউক্লিয়ার ফিউশন (Nuclear Fusion )। বিগত কয়েক দশক ধরে এই নিয়ে পরীক্ষা চলছিল। মার্কিন বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, ফিউশন বিক্রিয়া সফল হয়েছে। এবার বিশ্বজুড়ে দূষণহীন, অফুরন্ত শক্তির চাহিদা মেটানো যাবে।
সূর্য হল প্রকৃতির নিউক্লিয়ার ফিউশন (Nuclear Fusion ), বিনে পয়সায় অফুরন্ত তেজ ও শক্তির জোগান দিচ্ছে। এই শক্তি দূষণহীন। আর মানুষ পরমাণু চুল্লিতে যে শক্তি তৈরি করছে তার প্রভাব প্রাণঘাতী। পরমাণু চুল্লিতে এখন যে ভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়, সে পদ্ধতির নাম ফিশন। অর্থাৎ, ভারী পরমাণুকে ভেঙে দু’টুকরো করা। এই পদ্ধতিতে তেজস্ক্রিয়তা ছড়ানোর ভয় আছে। তাছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কয়লার মতো প্রচলিত জ্বালানির উপরে নির্ভরশীলতা অনেক বেশি। কয়লা পুড়িয়ে যে শক্তি পাওয়া যাচ্ছে তাতে দূষিত গ্যাসও তৈরি হচ্ছে সমানুপাতিকভাবেই। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির দূষণ বিশ্ব-উষ্ণায়ণের কারণ হয়ে উঠছে। জ্বালানি পুড়িয়ে শক্তি উৎপাদনের সময়ে যে বিপুল পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অন্যান্য গ্রিন হাউস গ্যাস তৈরি হয়, তা ভয়ঙ্কর।
তাই অন্য পথে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার চেষ্টা শুরু হয়। এই পদ্ধতির নাম ফিউশন। হাল্কা পরমাণুগুলিকে জোড়া দিয়ে নক্ষত্র যে ভাবে আলো, তাপ দেয়, ঠিক সেইভাবে শক্তি তৈরি করা হয়। ফিউশনে ফিশনের মতো তেজস্ক্রিয়তার বিপদ নেই। তাই ইউরোপ, আমেরিকার বিজ্ঞানীরা চার দশক ধরে ফিউশন পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। এতদিনে আশার আলো দেখা গেছে বলেই দাবি বিজ্ঞানীদের।
তাংওয়াং সীমান্তে পরিস্থিতি স্বাভাবিক, পিছু হটছে ভারত-চিনের সেনা, দাবি মার্কিন রিপোর্টে
লরেন্স লিভারমোর ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির (LLNl) ডিরেক্টর ও গবেষক কিম বুডিল বলেছেন, মানবজাতির ইতিহাসে সবচেয়ে কঠিন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাগুলোর মধ্যে একটি ছিল এই নিউক্লিয়ার ফিউশন। এতদিনে সাফল্যের মুখ দেখা যাচ্ছে। তবে এই পদ্ধতিতে বিশ্ব জুড়ে বাণিজ্যিক ভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করতে এক দশক বা তার বেশি সময়ও লেগে যেতে পারে।
ফিউশন হইল এমন এক বিক্রিয়া, যেখানে একাধিক পরমাণু জুড়ে গিয়ে একটি ভারী পরমাণু সৃষ্টি করে। সাধারণত চারটি হাইড্রোজেন পরমাণু যুক্ত হয়ে একটি হিলিয়াম পরমাণু তৈরি হয়। এই বিক্রিয়া কিছুটা পরিমাণ পদার্থ হারিয়ে যায়, অর্থাৎ মোট ভরের কিছুটা তারতম্য হয়। এই হারিয়ে যাওয়া অংশটুকুই অ্যালবার্ট আইনস্টাইন আবিষ্কৃত ফর্মুলা অনুযায়ী প্রকাণ্ড এনার্জি রূপে দেখা দেয়। নক্ষত্রের অগ্নিকুণ্ডে এই ফিউশন প্রক্রিয়া চলতে থাকে। আমাদের সূর্যেও এমনই ফিউশন বিক্রিয়া হতে থাকে। প্রত্যেকটি নক্ষত্রে চলে দুই বিপরীতমুখী বিক্রিয়া। বিপুল পরিমাণ পদার্থের অভিকর্ষজ চাপ, যা নক্ষত্রকে সঙ্কুচিত করতে চায়। এর বিরুদ্ধে কাজ করে বহির্মুখী চাপ যা নক্ষত্রকে ফুলিয়ে স্ফীত করতে চায়। এই দুই বিপরীতমুখী বিক্রিয়াতেই প্রচণ্ড তেজ ও শক্তি তৈরি হয়। এই শক্তি হল ‘ক্লিন এনার্জি’।
সাবেক প্রথায় কয়লা বা তেল পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গ্রিনহাউস গ্যাসের কারণে পরিবেশ দূষিত হয়। পরমাণুচুল্লি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে তেজস্ক্রিয়তা ছড়ায়। এইসব থেকে রেহাই পাওয়ার জন্যই ফিউশন বিক্রিয়া ল্যাবরেটরিতেই করার চেষ্টা চলছিল। নক্ষত্রে প্রচণ্ড চাপ ও তাপে হাইড্রোজেন পরমাণুরা মিলে হিলিয়াম পরমাণু তৈরি করে বটে, কিন্তু পৃথিবীর ল্যাবরেটরিতে নক্ষত্রের মতো পরিস্থিতি তৈরি করা ছিল দুঃসাধ্য কর্ম। সেই অসাধ্য সাধনই করলেন বিজ্ঞানীরা।
খবর দ্য ওয়ালের /এনবিএস/২০২২/একে


