বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের ব্যাপারে পাশ্চাত্যের দ্বিমুখী নীতির তীব্র সমালোচনা করেছে ইরান


ইরানে সরকার বিরোধী গোলযোগ ও নৈরাজ্য শুরু হওয়ার পর গত আড়াই মাস ধরে পশ্চিমা দেশগুলো দাঙ্গাকারীদের প্রতি সমর্থন দিয়ে আসছে এবং তাদের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডকে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সমাবেশ বলে দাবি করছে।

ইরানের মানবাধিকার বিষয়ক সর্বোচ্চ পরিষদের সচিব কাজেম গরিবাবাদি একটি দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের ব্যাপারে পাশ্চাত্যের দ্বিমুখী নীতির তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, ওই দেশগুলো ইরানে গোলযোগ সৃষ্টিকারীদের সমর্থক বলে মনে করছে অথচ তারাই নিজ দেশে নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ জনসমাবেশও সহ্য করতে পারে না এবং নির্মমভাবে তা দমন করে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, গত কয়েক দশকের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে পাশ্চাত্যের দেশগুলো নিজেদেরকে মানবাধিকারের রক্ষক দাবি করলেও তারা এটাকে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে। অথচ এ দেশগুলোর সরকার দেশের ভেতরে ও বাইরে নজিরবিহীনভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে যাচ্ছে। আমেরিকা, ইতালি, ব্রিটেন, কানাডা, ফ্রান্স ও জার্মানির মতো দেশগুলোতে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ব্যাপক শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়েছে। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে কঠোর দমন অভিযান ও জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছে।

উদাহরণ স্বরূপ, আমেরিকায় সম্প্রতি কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর পুলিশি ও বিচারিক নির্যাতন এবং অস্বেতাঙ্গ ও সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিবাদ বিক্ষোভ দমনের কথা উল্লেখ করা যায়। আমেরিকার পুলিশের আচরণ পর্যবেক্ষণ সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে দেশটির পুলিশ চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ৭২২ ব্যক্তিকে হত্যা করেছে এবং আশঙ্কা করা হচ্ছে এ বছরের শেষ নাগাদ পুলিশের হাতে আরো ৪৪২ ব্যক্তি প্রাণ হারাতে পারে। এক হিসাবে দেখা গেছে আমেরিকায় প্রতি তিনটি হত্যাকাণ্ডের মধ্যে একটি হত্যাকাণ্ড পুলিশের সহিংস আচরণের দ্বারা সংঘটিত হয়। আর বাকি দুটি হত্যাকাণ্ড অহিংস অপরাধের মাধ্যমে সংঘটিত হয়।

এদিকে, ব্রিটিশ গণমাধ্যম জানিয়েছে ইউরোপীয় পরিষদের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনার ডেনিয়া মিয়াতোভিজ সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে বলেছেন, 'ব্রিটিশ সরকার মানবাধিকারের নীতিমালা উপেক্ষা করায় সেদেশের মানুষের অধিকার পদদলিত হয়েছে'। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, গত এপ্রিলে পুলিশের বিশেষ ক্ষমতা আইন পাশ হওয়ায় তা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচির অধিকারকে কেড়ে নেবে।

অন্যদিকে, ফ্রান্সের পুলিশও বহুবার জ্বালানি ও জরুরি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে এবং বেতন বৃদ্ধির দাবিতে জনগণের বিক্ষোভ কঠোরভাবে দমন করেছে। এই বিক্ষোভকারীদের মধ্যে পরিবহন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জ্বালানি, বাণিজ্য ও উৎপাদনের মতো খাতের শ্রমিকরা অন্তর্ভুক্ত।

এ ছাড়া, সম্প্রতি জার্মানির পুলিশ কর্মকর্তারাও ১১টি প্রদেশে ১৩০টি এলাকায় ব্যাপক অভিযান চালিয়ে সরকারকে উৎখাত করার ষড়যন্ত্রের সন্দেহে চরমপন্থী গোষ্ঠী "রাইচ সিটিজেনস" এর অন্তত ২৫ জন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। বিভিন্ন খবরে জানা গেছে আগামী কিছুদিনের মধ্যে আরো অনেককে গ্রেফতার করা হতে পারে যাদের মধ্যে অনেক বয়স্ক ব্যক্তিও থাকতে পারে। কানাডায়ও স্থানীয় আদিবাসীদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে।
 খবর পার্সটুডে/এনবিএস/২০২২/একে

news