ওমিক্রন বিএফ.৭ কী? ভয়ানক এই প্রজাতির কারণে চিনে মৃত্যু মিছিল শুরু হয়েছে
চিনে করোনার বিস্ফোরণ হয়েছে। সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে সাঙ্ঘাতিকভাবে। দিনে দিনে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। হাসপাতালগুলিতে তিল ধারণের জায়গা নেই। ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা ভবিষ্যতবাণী করেছেন, আগামী তিন মাসের মধ্যে করোনায় প্রায় ২০ লাখ মানুষের মৃত্যু হবে চিনে। শুধু তাই নয়, চিন থেকে গোটা বিশ্বেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, চিনে ‘জিরো কোভিড টলারেন্স’ এতদিন মানার পরেও কীভাবে এত বেশি সংক্রমণ হচ্ছে? করোনার কোনও নতুন অতি সংক্রামক প্রজাতি (Omicron BF.7) এসেছে কি?
মার্কিন গবেষকরা খুঁজে বের করেছেন, চিনে ওমিক্রনেরই এক উপপ্রজাতি (Sub-Variant) হানা দিয়েছে, যার নাম বিএফ.৭ (Omicron BF.7 )। এই প্রজাতির সঙ্গে কোভিডের BA.5.2.1.7 প্রজাতির অনেক মিল রয়েছে। এর থেকেই অনুমান করা হয়েছে, কোভিডের ওই প্রজাতির মিউটেশন (Mutation) বা জিনের রাসায়নিক বদল (Genetic Change) হয়ে আরও এক নতুন প্রজাতির জন্ম হয়েছে।
সেল হোস্ট অ্যান্ড মাইক্রোব’ (Cell Host and Microbe) সায়েন্স জার্নালে ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা (Virologist) লিখেছেন, ওমিক্রনের বাকি প্রজাতিগুলোর থেকে এটি ৪.৪ গুণ বেশি সংক্রামক। আর চিন্তার ব্যাপার হল, ওমিক্রনের এই উপপ্রজাতি বা সাব-ভ্যারিয়্যান্টকে সহজে ভ্যাকসিন দিয়ে কাবু করা যাবে না। মানুষের শরীরে খুব দ্রুত ছড়াতে পারবে এই প্রজাতি এবং শরীরের শ্বেত রক্তকণিকার প্রতিরোধ শক্তিকেও ভেঙে দিতে পারবে অল্পদিনের মধ্যেই। কাজেই ভাইরাস প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরি হলেও সহজে একে নিকেশ করা যাবে না।
ওমিক্রনের দুই উপপ্রজাতি বিএ৪ ও বিএ৫ নিয়ে হইচই হয়েছিল একসময়। এই দুই ভাইরাল স্ট্রেনের কারণে আমেরিকা ও ইউরোপে সংক্রমণের হার বিপদসীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওমিক্রনের নতুন উপপ্রজাতি বিএফ.৭ আরও বেশি সংক্রামক হয়ে উঠেছে। এই ভাইরাসের কারণে শুধু চিনে মড়ক লেগেছে তাই নয়, অক্টোবরেই আমেরিকায় ৫%, ব্রিটেনে ৭.২৬% সংক্রমণ বেড়েছিল এই বিএফ.৭-এর কারণেই। তখন থেকেই ধীরে ধীরে ডালপালা মেলছিল এই ভাইরাস। ভাইরোলজিস্টদের মতে, সংক্রামক ভাইরাস যত বেশি মানুষের শরীরে ছড়াবে, ততই তার জেনেটিক সিকুয়েন্স বা জিনগত বিন্যাসের বদল হবে। মানুষের শরীরে ছড়াতে হলে ভাইরাসকে সংখ্যায় বাড়তে হবে, তাই দ্রুত তার বিভাজন হবে। আর যত বেশি বিভাজন হবে ততই ভাইরাস নিজেকে নতুন করে গড়েপিটে নেবে। সংক্রামক থেকে অতি সংক্রামক হয়ে উঠবে। ওমিক্রনের বিএফ.৭ এর ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।
ওমিক্রন এমনিও ৩০ বার জিনের গঠন বদলে ফেলেছে। ফলে খুব দ্রুত সংক্রমণ ছড়াতে পারে। শুধু তাই নয়, ভাইরাসের এই প্রজাতিতে প্রোটিনের বিন্যাস এমনভাবে বদলেছে যে রিয়েল টাইম আরটি-পিসিআর টেস্টকেও ফাঁকি দিতে পারে। কোভিড টেস্টেও ধরা পড়বে না এই স্ট্রেন। ওমিক্রনের মোট পাঁচটি উপপ্রজাতি (Omicron) ধরা পড়েছে এখনও অবধি–বিএ.১, বিএ.২, বিএ.৩, বিএ৪ ও বিএ৫। নতুন সংযোজন বিএফ.৭। এটি জিনের বদলের কারণে তৈরি নতুন উপপ্রজাতি যা ভবিষ্যতে আবারও বদলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের। ভারতে ইতিমধ্যেই চার জনের শরীরে বিএফ.৭ এর স্ট্রেন পাওয়া গেছে। কাজেই চিন্তার ভাঁজ ক্রমেই চওড়া হচ্ছে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।
খবর দ্য ওয়ালের /এনবিএস/২০২২/একে


