এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩, ০২:০২ পিএম
ইউপিএ পুনর্জাগরণের ডাক খাড়্গের, এখন কী অবস্থায় সনিয়ার নেতৃত্বাধীন সেই জোট
ছত্তীসগড়ের রায়পুরের মহা সমাবেশ থেকে কংগ্রেস (Congress) সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে (Mallikarjun Kharge) শনিবারের ভাষণে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ-র (UPA) পুনর্জাগরণের কথা বলেছেন। তুলে ধরেছেন ২০০৪ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত দুটি ইউপিএ সরকারের সাফল্যের খতিয়ান। সনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বে ২০০৪ সালে তৈরি সেই জোট এখন কী অবস্থায় আছে?
যাত্রা শুরুর সময় সেই জোটের শরিক ছিল ১৪টি দল। গত উনিশ বছরে একে একে ছেড়ে গিয়েছে প্রায় সব শরিক। ইউপিএ বা ইউনাইটেড প্রোগ্রেসিভ অ্যালায়েন্সে এখন বলতে গেলে আছে শুধু কংগ্রেস আর এক-দুটো ছোট আঞ্চলিক দল। বছর দেড়েক আগেই তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন ইউপিএ-র কোনও অস্তিত্ব নেই।
কী অবস্থায় আছে সেই জোট?
কংগ্রেস সূত্রে জানা যাচ্ছে, ১৪ দলের মধ্যে সাকুল্যে চারটিও আর ওই জোটে নেই। শরিকদের পাশাপাশি ছেড়ে গিয়েছে ইউপিএ-র সমর্থক দলগুলিও। তবে বিজেপি বিরোধী অবস্থানের বাম দলগুলির মতো সংসদে এবং রাজ্যে অনেক দলকেই এখনও কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে আন্দোলনে শামিল হতে দেখা যাচ্ছে। যেমন, সংসদে কংগ্রেসের রাজ্যসভার নেতা মল্লিকার্জুন খাড়্গের ডাকা বৈঠকে ১২টি দল যোগ দিয়েছিল। যৌথ বিবৃতিতেও সই করে তারা। তবে ওই বৈঠক ইউপিএ-র বৈঠক ছিল না।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনেক আগেই ইউপিএ-র বিকল্প জোট গড়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তাঁর ভাবনার সঙ্গে ইউপিএ’র ফারাক কোথায়?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তি, নেতৃত্বে কংগ্রেসকে রাখা নিয়েই। তৃণমূলের বক্তব্য, বিজেপিকে মোকাবিলায় নেতৃত্ব দেওয়ার অধিকার কংগ্রেস হারিয়েছে। তারা একের পর এক নির্বাচন হেরেছে। এখন দলটাই ভেঙে যাচ্ছে। সেই দলকে নেতৃত্বে রেখে কীভাবে বিজেপি বিরোধিতা সম্ভব?
ইউপিএ-র শরিকেরা এখন কে কোথায়?
কংগ্রেস ছাড়া ইউপিএ-র বাকি শরিকেরা ছিল আরজেডি, ডিএমকে, এনসিপি, পিএমকে, টিআরএস, জেএমএম, এলজেপি, এমডিএমকে, এআইএমআইএম, পিডিপি, আইইউএমএল, আরপিআই (এ), আরপিআই (জি) এবং কেসি (জে)। জোট গঠনে প্রধান ভূমিকা নিলেও সিপিএম এবং সিপিআই, আরএসপি ও ফরওয়ার্ড ব্লকে ইউপিএ-তে যোগ দেয়নি। ন্যূনতম অভিন্ন কর্মসূচির রূপায়নের শর্তে ইউপিএ-কে বাইরে থেকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নেয় চার বাম দল।
কিন্তু দু’বছরের মাথায় মন্ত্রিসভা এবং ইউপিএ ছেড়ে যায় তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রসমিতি। ন্যূনতম অভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে বিরোধের জেরে তার পরের বছর অর্থাৎ ২০০৭-এ ইউপিএ ত্যাগ করে দক্ষিণের আর এক দল ভাইকোর এমডিএমকে।
২০০৮-এর মাঝামাঝি আমেরিকার সঙ্গে পরমাণু চুক্তি সই ঘিরে বামেদের সঙ্গে মনমোহন সরকারের বিরোধ চরমে ওঠে। ইউপিএ-র উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয় বামেরা। কিন্তু সংখ্যালঘু সরকারকে লোকসভায় বাঁচিয়ে দেয় মুলায়ম সিং যাদবের সমাজবাদী পার্টি।
পরের বছর অর্থাৎ ২০০৯-এ পর পর ইউপিএ ছেড়ে যায় কাশ্মীরের পিডিপি এবং তামিলনাডুর পিএমকে। দুই দলই নিজের নিজের রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের অঙ্কে কংগ্রেসের সঙ্গ ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেয়।
বামেদের সঙ্গে কংগ্রেসের বিরোধ এবং চার বামদল ইউপিএ-র উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের পর থেকেই বঙ্গ রাজনীতির চাকাও দ্রুত ভিন্ন দিকে মোড় নিতে শুরু করে। কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের বোঝাপড়া তৈরি হয়। ২০০৯-এর লোকসভা নির্বাচনে দুই দল এক জোট হয়ে বাংলায় বামেদের জোর ধাক্কা দেয়। তারপর একের পর এক পুরভোট এবং ২০১১-র পরিবর্তনে বিধানসভা নির্বাচন দুই কংগ্রেস হাতে হাত রেখে লড়াই করে সিপিএমকে ক্ষমতাচ্যুত করে। কিন্তু দুই কংগ্রেসের রাজনৈতিক ভাব-ভালবাসা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ২০০৯-এ ইউপিএ-টু মন্ত্রিসভায় রেলমন্ত্রী হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দু’বছরের মাথায় তিনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরও কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নানা বিষয়ে নিজের মতামত চাপিয়ে দিতে থাকেন বলে কংগ্রেস অভিযোগ তোলে। তার মধ্যে অন্যতম হল, রেলের যাত্রী ভাড়া বাড়াতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত। তাঁকে অন্ধকারে রেখে ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করায় দীনেশ ত্রিবেদীকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে নেন মমতা।
এরই মধ্যে, ২০১০-এ সংসদে মহিলা সংরক্ষণ বিলের বিরোধিতার প্রশ্নে ইউপিএ ত্যাগ করে লালুপ্রসাদ যাদবের রাষ্ট্রীয় জনতা দল। ওদিকে, শ্রীলঙ্কায় বসবাসকারী তামিলদের মানবাধিকার হরণের ঘটনায় ভারত সরকার নীরব বলে অভিযোগ তুলে ২০১২-তে ইউপিএ ছেড়ে যায় ডিএমকে। যদিও ততদিনে ডিএমকের মন্ত্রী এ রাজার বিরুদ্ধে টেলিকম কেলেঙ্কারির অভিযোগ ঘিরে মনমোহন সরকার জেরবার হতে শুরু করে। ওই বছরর শেষপ্রান্তে নানা প্রশ্নে বিরোধের কারণে ইউপিএ ছাড়ে তৃণমূল কংগ্রেসও। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মূল আপত্তি ছিল খুচরো ব্যবসায় বহুজাতিক সংস্থাকে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত। একই ইস্যুতে ইউপিএ ছাড়ে ঝাড়খণ্ডের জেভিএম-পি পার্টি এবং এআইএমআইএম।
কংগ্রেস ও ইউপিএ
২০০৪-এর লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস পেয়েছিল ১৪৫টি আসন, বিজেপির থেকে মাত্র সাতটি বেশি। ১৪ শরিকের প্রথম ইউপিএ সরকারের কাজকর্মের সুবাদে কংগ্রেস ২০০৯-এর লোকসভা ভোটে দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় ফেরে। আসন পায় ২০৬টি। কিন্তু একের পর এক শরিক ইউপিএ ছেড়ে যাওয়ায় ২০১৪-র লোকসভা ভোটে সনিয়া গান্ধীর পার্টির জোটে মাত্র ৪৪টি আসন, কম প্রাপ্তির নিরিখে কংগ্রেসের জন্য তা এখনও রেকর্ড।
খবর দ্য ওয়ালের/এনবিএস/২০২৩/একে