এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ২৬ মার্চ, ২০২৩, ১০:০৩ পিএম
কর্ণাটকে ‘ওবিসি’ শ্রেণিতে মুসলিমদের জন্য সংরক্ষণ সুবিধা প্রত্যাহার করল বিজেপি সরকার
ভারতে বিজেপিশাসিত কর্ণাটকে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি বা ‘ওবিসি’তে শিক্ষা ও চাকরিতে মুসলিমদের জন্য যে চার শতাংশ সংরক্ষণ সুবিধা ছিল তা প্রত্যাহার করে নিয়েছে রাজ্য সরকার।
এতদিন ‘ওবিসি’ কোটায় মুসলিমদের জন্য যে চার শতাংশ সংরক্ষণ ছিল তার দুই শতাংশ করে বরাদ্দ করেছে হিন্দুদের দু’টি প্রভাবশালী জাতিগোষ্ঠী লিঙ্গায়েত ও ভোক্কালিগাদের জন্য। এরফলে লিঙ্গায়েত সম্প্রদায় সাত এবং ভোক্কালিগা জনগোষ্ঠী ছয় শতাংশ হারে সংরক্ষণের সুবিধা পাবে। এর আগে তা ছিল যথাক্রমে পাঁচ ও চার শতাংশ।
গত (শুক্রবার) রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্বাই অবশ্য দাবি করেছেন, এরফলে মুসলিমদের কোনও ক্ষতি হবে না। তারা আর্থিকভাবে পশ্চাৎপদ সাধারণ শ্রেণির (ইডব্লিউএস) জন্য বরাদ্দ ১০ শতাংশের আওতায় সংরক্ষণের সুবিধা পাবেন।
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয়ভাবে জারি হওয়া নির্দেশিকা অনুসারে ইডব্লিউএস শংসাপত্র পেতে গেলে কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। তার মধ্যে আছে- পরিবারের বার্ষিক আয় ৮ লাখ টাকার কম হতে হবে, কৃষিজমি থাকলে তার পরিমাণ ৫ একরের কম হতে হবে, ফ্ল্যাট থাকলে তার আয়তন ১ হাজার বর্গফুটের মধ্যে হতে হবে এবং রেসিডেন্সিয়াল প্লট থাকলে তার আয়তন এলাকা ভেদে ১০০ বা ২০০ বর্গ গজের কম হতে হবে। এক্ষেত্রে আবেদনকারীর জানানো তথ্য যাচাই করে শংসাপত্র পাওয়ার প্রক্রিয়া বেশ জটিল বলে ওয়াকিফহাল মহলের অভিমত।
এদিকে রাজ্য সরকারের ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গতকাল (শনিবার) রাজ্যের কিছু মুসলিম নেতা একটি বৈঠক করেছেন। তারা রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে আদালতে ওই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করার কথা বলেছেন। মুসলিম নেতাদের মতে, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে জেতার জন্য বিজেপি এই রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছে।
ওলামা কাউন্সিলের সদস্য এবং জামিয়া মসজিদের ইমাম মাকসুদ ইমরান বলেছেন, ‘বর্তমানে শিক্ষাক্ষেত্রে মুসলমানদের মর্যাদা তফশিলি জাতি (এসসি) এবং তফসিলি উপজাতি (এসটি) থেকে কম। ভোক্কালিগা এবং লিঙ্গায়তদের অতিরিক্ত সংরক্ষণ দিতে তাদের কোনও আপত্তি নেই, কিন্তু কারও অধিকার কেড়ে নিয়ে এটি করা উচিত নয়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা রাস্তায় নামব না, রাস্তায় তোলপাড়ও করব না। আমরা আমাদের অধিকারের জন্য আইনি লড়াই করব।’
ইমাম মাকসুদ ইমরান বলেন, ‘আমরা ভোক্কালিগা এবং লিঙ্গায়ত মহন্তদের কাছে আবেদন করতে চাই যে তারা কারো কাছ থেকে যে অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে তা তারা নিতে চান কিনা। আমরা আমাদের অধিকার সংরক্ষণের জন্য সরকারকে চাপ দিতে চাই।’ মুসলমানদের সংরক্ষণ না নিয়েও ভোক্কালিগা এবং লিঙ্গায়ত সম্প্রদায়ের সংরক্ষণ বাড়ানো যেত বলেও মন্তব্য করেন ইমাম মাকসুদ ইমরান।
কর্ণাটকে প্রায় ১৩ শতাংশ মুসলমান রয়েছে। বিধানসভার ২০ থেকে ২৩টি আসনে মুসলিম ভোট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে, ৬০টি বিধানসভা আসনে মুসলিম ভোটারদের প্রভাব রয়েছে। বর্তমানে বিধানসভায় মাত্র ৭ জন মুসলিম বিধায়ক রয়েছেন এবং সকলেই কংগ্রেসের।
কর্ণাটকে টিপু সুলতানকে নিয়ে বিতর্কের মধ্যে রাজ্যটিতে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের মুখে বিজেপি বিধায়ক বাসনগৌড়া পাটিল ইয়াতনালের সাম্প্রতিক বক্তব্যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিজয়পুরায় এক জনসভায় বক্তব্য দেওয়ার সময়ে তিনি মুসলমানদেরকে টিপু সুলতানের সাথে তুলনা করেন। এবং জনগণকে মুসলিম নেতাদের ভোট না দিতে বলেন। বিজেপির চোখে, ব্রিটিশের বিরুদ্ধে যুদ্ধের শহীদ টিপু সুলতান ‘হিন্দু-হত্যাকারী’ বলে বিশ্লেষকদের অভিমত।
এর আগে কর্ণাটক বিজেপির সভাপতি নলিন কুমার কাতিল এমপিও টিপু সুলতান সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্যে বলেন, টিপু সুলতানের ভক্তদের বেঁচে থাকাই উচিত নয়! শুধু তাই নয়, টিপু সুলতানের বংশধরদের জঙ্গলে পাঠানোর কথাও বলেন তিনি। বিজেপির একটি কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখার সময়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ভগবান রাম, ভগবান হনুমানের ভক্ত। আমরা ভগবান হনুমানের সামনে প্রার্থনা করি, প্রণাম জানাই। আমরা টিপু সুলতানের বংশধর নই। আসুন টিপুর বংশধরদের তাদের দেশে ফেরত পাঠাই!’ কর্ণাটকের রাজনীতিতে টিপু সুলতান নামটি বরাবরই হিন্দুত্ববাদী বিজেপির মেরুকরণের রাজনীতির হাতিয়ার বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।
খবর পার্সটুডে /এনবিএস/২০২৩/একে