এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ১৭ মে, ২০২৩, ০৭:০৫ পিএম
নায়ক ফারুকের ৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ, সত্যতা কতটুকু?
বেশ কয়েক বছর ধরেই মুক্তিযোদ্ধা ও চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুকের ব্যাংকঋণ নিয়ে শোনা যাচ্ছে নানান গুঞ্জন। অনেকে বলছেন ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণখেলাপির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অভিনেতার মৃত্যুর পর সামাজিক মাধ্যম ও গণমাধ্যমে এ নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। এতে প্রশ্ন উঠেছে, ফারুক কি আসলেই ঋণখেলাপি? আর হয়ে থাকলে এর সত্যতা কতটুকু?
বাংলাদেশ ব্যাংক ও দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে দেশের বেসরকারি টেলিভিশন ‘ডিবিসি’ জানায়, প্রয়াত অভিনেতার বিরুদ্ধে ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণের সত্যতা পাওয়া যায়নি। তবে এটা সত্য যে, তিনি ঋণখেলাপি। সেই ঋণের পরিমাণও ৫ হাজার কোটির তুলনায় খুবই সামান্য। এ বিষয়ে ফারুকের স্ত্রী ফারহানা পাঠান বলেন, ‘২৪ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছিল। এরপর ২ কোটি টাকা পরিশোধও করা হয়। তবে বিষয়টা নিয়ে কিছুদিনের মধ্যে বিস্তারিত তথ্য সবাইকে জানাতে পারব।’ এছাড়া বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, অভিনেতার নামে সুদসহ প্রায় ১০১ কোটি টাকা ব্যাংকঋণ রয়েছে।
জানা গেছে, রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক থেকে ২০০৯ সালে ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন ফারুক। গাজীপুরে ১১৫ শতাংশ জমির ওপর গড়ে তোলেন ফারুক ডাইং নিটিং অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং। ২০১৩ সালে আবারও এই প্রকল্পে ঋণ দেয় সোনালী ব্যাংক। তবে এর কিছুদিন পর ঋণ হিসাবটি অনিয়মিত হয়ে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় কারখানা। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে ৮২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা খেলাপি ঋণ আদায়ে অর্থঋণ আদালতে মামলা করে সোনালী ব্যাংক।
২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৭ আসন থেকে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পান ফারুক। ওই সময় বিশেষ বিবেচনায় ঋণটি পুনঃতফসিল করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক এতে বিশেষ অনুমতি দেয়। তবে কারখানা চালু হয়নি, এরপর ঋণও শোধ করেননি তিনি। পরে ব্যাংক আবারও অর্থঋণ আদালতে মামলা দায়ের করে। তখন ব্যাংকঋণ সুদসহ বেড়ে দাঁড়ায় ১০১ কোটি টাকা। ব্যাংকের কাছে বন্ধকী হিসেবে রয়েছে শুধু গাজীপুরের কারখানা।
ঋণ তথ্য ব্যুরো (সিআইবি) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এই ঋণ ছাড়া অন্য কোনো ব্যাংকে ফারুকের কোনো দেনা থাকার তথ্য পাওয়া যায়নি। ব্যাংকের নথিপত্র থেকে দেখা গেছে, ফারুক ডাইং নিটিং অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের ৮৮ শতাংশ শেয়ারের অংশীদার আকবর হোসেন পাঠান ও ১২ শতাংশ শেয়ারের অংশীদার তার স্ত্রী ফারহানা পাঠান।
ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন, মর্টগেজ সম্পত্তি ভোগ, দখল ও বুঝিয়ে নেওয়ার রায় পেয়েছে ব্যাংক। শিগগিরই কারখানায় সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হবে। এরপর বিক্রি করে পাওনা টাকা আদায়ের উদ্যোগ নেওয়া হবে। ব্যতিক্রম কিছু না হলে নিয়ম অনুযায়ী টাকা আদায়ের এটাই একমাত্র উপায়। তবে ফারুকের ব্যাংকঋণের বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে প্রযোজক সমিতির সাবেক সভাপতি চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সদস্য ও প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণের এ গুঞ্জনকে ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘একটি পক্ষ গুঞ্জন ছড়াচ্ছে তিনি (ফারুক) ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণখেলাপি। এটি শুধুই একটি প্রোপাগান্ডা।’
এনবিএস/ওডে/সি