এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ১৫ জুলাই, ২০২৩, ০৫:০৭ পিএম
জেনিনের প্রতিরোধ যোদ্ধার জীবন: ‘মৃত্যুই কেবল আমাদেরকে রুখতে পারবে’
ইসরায়েলের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে বিরামহীন প্রতিরোধ লড়াইরত একজন যোদ্ধা আল-জাজিরার প্রশ্নের উত্তরে এ দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
নিজের পুষ্পাঙ্কিত জরাজীর্ণ মেঝেতে পাতা সোফায় পায়ের ওপর পা রেখে বসেছিলেন তিনি। একটি কেফিয়া বা রুমাল দিয়ে তার মুখ ঢাকা ছিল যেন, তাকে চেনা না যায়। তিনি একজন ফিলিস্তিনী যোদ্ধা। জেনিন উদ্বাস্তু শিবিরে বাস করেন। চলতি মাসের প্রথম দিকে ইসরায়েলের বাহিনী দুদিন ধরে ভয়াবহ হামলা চালায়। এ সময় সরে থাকার কোন চেষ্টা তিনি করেননি।
তার শক্ত হাত দুটি একটি ভারী স্বয়ংক্রীয় অস্ত্রের ওপর রাখা ছিল। তার অনেকটা অন্ধকার এপার্টমেন্টের মধ্যেও অস্ত্রের ধাতব অংশ চক চক করছিল। তবে কঠিন যুদ্ধে লিপ্ত এ ব্যক্তি এক সময় স্বাভাবিক জীবন যাপনের স্বপ্ন দেখতেন। এখন কেবল টিভি অনুষ্ঠানে তিনি এমন জীবন দেখতে পান।
২৯ বছর এ যোদ্ধা তিন বছর আগে সরকারি চাকরি করতেন। এরপর তিনি মাতৃভূমি ফিলিস্তিনে দখলদার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ লড়াইয়ে যোগদান করেন। তিনি বলেন, আমরা জেনিন উদ্বাস্তু শিবিরের বাইরে জীবন সম্পর্কে কিছুই জানি না। নিরাপত্তার কারণে তিনি তার নাম প্রকাশ করতে আগ্রহী নন।
তিনি বলেন, প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সংগঠন জেনিন ব্রিগেডে যোগদানের পর ‘আমরা কখনোই সুইমিং পুল বা সাগর দেখার সুযোগ পাই না।’ জেনিন ব্রিগেড ইসরায়েলি দখলদারিত্ত্বের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
‘আমাদেরকে কেউ থামাতে পারবে না।’ ২ জুলাই ইসরায়েল জেনিন শিবিরে হামলা চালায়। তার ভাষায় ‘সন্ত্রাসীদের’ নিশ্চিহ্ন করতে। তারা এলাকাটি দখলে নেয়। সেখানে প্রায় ১৪ হাজার মানুষ বাস করে। ড্রোন থেকে বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের ছত্রছায়ায় শত শত সেনা শিবিরটিতে হামলা চালায়। প্রতিরোধ যোদ্ধারা নিজেদেরকে এ হামলার মূলে দেখতে পান। ‘আমাদের কাছে কেবল হাল্কা অস্ত্র ছিল। তারা (ইসরায়েলি বাহিনী) এ আগ্রাসনের সময় একটি বড় কিছু অর্জনের আশা করেছিল, তাহল আমাদেরকে নিবৃত্ত করা।
এ যোদ্ধা অবিরাম হামলার স্মৃতিচারণ করে বলেন, একটি ঘটনা তার অন্তরে গেঁথে আছে। তা হল, একটি ক্ষেপণাস্ত্র ২০-৩০ জন যোদ্ধার কাছে এসে পড়ে । এতে তাদের ১৭ জন আহত হন। ওই ইসরায়েলি হামলায় ৩ শিশুসহ ১২ জন ফিলিস্তিনী নিহত হন।
তিনি বলেন, ইসরায়েল প্রতিরোধ যোদ্ধা ও বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মধ্যে আতংক সৃষ্টির যে পরিকল্পনা করেছিল তা মোটেই কাজে আাসেনি। নিরাবেগ ও দৃঢ়কন্ঠে বলেন, সশস্ত্র প্রতিরোধের বাইরে আর কিছুই তারা ভাবতে পারেন না। ‘কেবল মৃত্যু আমাদেরকে রুখতে পারে। ওরা হয়ত আমাদেরকে হত্যা করতে পারবে, সে ক্ষেত্রে আমরা শহীদ হবো।’
‘লোকের অকারণে মারা যাক তা আমরা চাই না’, হত্যা ও ধ্বংসের মাঝেও যোদ্ধারা পরস্পরের ও মানুষের কাছে থাকেন এবং দখলদার শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই তাদের চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ় সংকল্পে অটল ছিলেন। তিনি বলেন, লোকেরা যোদ্ধাদের জন্য তাদের ঘরের দরজা খুলে দেন ও খাবার ব্যবস্থা করেন। এবং যারা বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন, তারাও বার্তা রেখে গেছেন, ঘরে যা কিছু আছে তা থেকে আপনারা ইচ্ছে মতো খান।
‘আল্লাহ আমাদেরকে বিজয় দান করবেন,অনেক যোদ্ধা হামলার সময় শিবির ছেড়ে যেতে বাধ্য হন। এটি ছিল কৌশলগত পশ্চাদাপসারণ। তারা এ জন্য অনেক আগে থেকেই প্রস্তত ছিলেন। এ যোদ্ধা বলেন, ‘আল্লাহ আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। আমরা ঈমানদার । আমরা জানি আল্লাহ অবশ্যই আমাদেরকে বিজয় দেবেন।সূত্র: ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলা
এনবিএস/ওডে/সি