এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ০২ জুন, ২০২২, ০২:০৬ পিএম
‘পরের জন্মে ফিরে এসো নজরুলে’, রাগ-অভিমান-বিতর্ক ধুইয়ে দিলেন কবীর সুমন
‘পরের জন্মে ফিরে এসো নজরুলে, গাইব দু’জনে তাঁরই বাংলা গান’, ফেসবুক পোস্টে সমস্ত রাগ-অভিমান-তর্ক-বিতর্ক, আলোচনা-সমালোচনা ধুইয়ে দিলেন কবীর সুমন (Kabir Suman-Singer KK)। কাকে সমর্থন করলেন, আর কাকে নয় সেটা বড় কথা নয়। বরং বোঝালেন শিল্পীর শিল্পসত্তা তুলনায় আসে না। অনেক অভিমান থেকে চাপা দুঃখ জন্ম নেয়, তার সঙ্গে হিংসা-বিদ্বেষ খাপ খায় না। শিল্পী তার শিল্পসত্তাতেই অমর। বার বার তাঁর প্রতিভা নিয়ে ফিরে আসতে পারে। সেখানে মান-অভিমান অতি তুচ্ছ ব্যাপার।
কলকাতার নজরুল মঞ্চে একটি কলেজের অনুষ্ঠানে কেকে-র লাইভ প্রোগ্রাম নিয়ে যখন তুমুল মাতামাতি চলছে, তখন বফেসবুক লাইভ করে রাতারাতি লাইমলাইটে চলে আসেন রূপঙ্কর বাগচী। লাইভে তিনি বাংলার দর্শকদের উদ্দেশ্য়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন, জিজ্ঞাসা করেন, “হু ইজ কেকে?” দাবি করেন, কেকে-র থেকেও বেশি ভাল গাইতে পারেন বাংলার শিল্পীরা, অথচ তাঁদের নিয়ে অতটা মাতামাতি হয় না। রূপঙ্করের এই বক্তব্য় ঘিরে যখন সমোলাচনার ঝড় উঠতে শুরু করেছে, তখনই খবর আসে লাইভ অনুষ্ঠানের শেষে মৃত্য়ু হয়েছে সঙ্গীতশিল্পী কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ ওরফে কেকে-র। এরপরেই যেন বিতর্কের আগুনে ঘি পড়ে। জ্বলে ওঠেন নেটিজেনরা। বাক্য়বাণে ঝাঁঝরা করে দেন জাতীয় পুরষ্কারজয়ী সঙ্গীতশিল্পীকে। রাতারাতি কুখ্যাত হয়ে যান রূপঙ্কর।
এরপর বিতর্কের জল অনেকদূর গড়িয়েছে। শোনা গেছে, রূপঙ্কর নাকি খুনের হুমকি পেয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়াজুড়ে তাঁর মুণ্ডপাত হচ্ছে। গালিগালাজ, অশালীন মন্তব্য়ের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। এক শিল্পীর মর্মান্তিক মৃত্য়ুতে আর এক শিল্পী ছিন্নভিন্ন হচ্ছেন।
এরপরে অবশ্য নানাজনে নানা মত দিয়েছেন। বাংলার সঙ্গীতশিল্পী, অভিনেতাদের অনেকে পরোক্ষে রূপঙ্কর বাগচীর মন্তব্যের বিরোধিতা করেছেন। কেউ আবার পাশে দাঁড়িয়েছেন। এক শিল্পীর, আরেক শিল্পীর প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধা-সম্মান থাকা উচিত, এমন কথাও বলেছেন অনেকে। কেকে-র মৃত্যুর পর ২৪ ঘণ্টা কেটে গেছে। ফেসবুক পোস্ট করে এবার নিজের ভাবনার কথা জানিয়েছেন কবীর সুমন। কবিতায় নিজের ভাবনা ও বিশ্বাসের সূক্ষ্ম দিকগুলো ফুটিয়ে তুলেছেন সুমন। সেখানেও কোথাও রূপঙ্করের কথাকেই সমর্থন করেছেন তিনি যে বাংলাভাষার গান বরাবরই অবহেলিত, সেখানে সন্ধ্য়া মুখোপাধ্যায়ের মতো কিংবদন্তীকেও অবহেলা করা হয়। তবে কেকে-র মতো প্রতিভাবান সঙ্গীতশিল্পীদেরও যে দিকশূন্যপুরে চলে যাওয়ার সময় আসেনি সেটাও ফুটিয়ে তুলেছেন তাঁর কবিতায়।
বহুবার বিতর্কে তিনি নিজেও জড়িয়েছেন। তাঁর বলা অনেক কথা নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। সম্প্রতি একটি বাংলা চ্যানেলের সাংবাদিকের সঙ্গে তাঁর ফোনালাপ ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়। সেই অডিও ক্লিপ ভাইরাল হয় এবং তা নিয়ে বিস্তর তর্ক-বিতর্ক হয়। ঝামেলা আইনের দরজা অবধি পৌঁছয়। সেই সময়ে কবীর সুমনের হয়ে লাইভ করেছিলেন রূপঙ্কর বাগচী। মনে করিয়ে দিয়েছিলেন গায়ক সুমন, গীতিকার সুমন, সুরকার সুমনের কথা। বিতর্ক যে শিল্পীর সত্তাকেই ছাড়খাড় করে দেয় সেটা তখন প্রকাশ্যে বলেছিলেন রূপঙ্কর। এবার হয়ত চরম অস্থির সময়ে সেই কথাই আবার মনে করিয়ে দিলেন কবীর সুমন। বাংলা হোক বা বলিউড, শিল্পী তার প্রতিভাতেই বেঁচে থাকবেন। তাঁর বিশ্বাস, রূপঙ্করের কথায় কেকে রাগ করেননি। কারণ পরজন্মে আবার তাঁকে ফিরতেই হবে এই বাংলায়, তখন তাঁরা একসঙ্গেই না হয় বাংলা গান গাইবেন। সুরে সুরে মিলমিশ হবে, ঘুচে যাবে সব মান-অভিমান।দ্য ওয়ালের /এনবিএস/২০২২/একে