ঢাকা, শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Logo
logo

মহানবী (সা.) কে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের প্রতিবাদে বিশ্বজুড়ে তোলপাড়


এনবিএস ওয়েবডেস্ক   প্রকাশিত:  ০৮ জুন, ২০২২, ০২:০৬ পিএম

মহানবী (সা.) কে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের প্রতিবাদে বিশ্বজুড়ে তোলপাড়

মহানবী (সা.) কে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের প্রতিবাদে বিশ্বজুড়ে তোলপাড়

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার বিতর্কিত ও আপত্তিকর মন্তব্যের প্রতিবাদে অনেক মুসলিম দেশের তীব্র প্রতিক্রিয়ার মধ্যে এবার জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্রের বিবৃতি প্রকাশ্যে এসেছে।

তিনি বলেছেন, আন্তর্জাতিক সংস্থা দৃঢ়ভাবে সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহনশীলতাকে উৎসাহিত করে। গণমাধ্যমে প্রকাশ, একজন পাকিস্তানি সাংবাদিক মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এঁর বিরুদ্ধে হিন্দুত্ববাদী বিজেপির সাবেক জাতীয় মুখপাত্র নূপুর শর্মা এবং দলটির দিল্লি শাখার মিডিয়া প্রধান নবীন কুমার জিন্দালের আপত্তিকর মন্তব্যের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। তিনি বেশ কয়েকটি মুসলিম দেশের নিন্দার বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, যার জবাবে তার মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক ওই বিবৃতি দিয়েছেন।

আজ (মঙ্গলবার) হিন্দি গণমাধ্যম ‘হিন্দুস্তান’-এ প্রকাশ, স্টিফেন দুজারিকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে,  এ সংক্রান্ত খবর আমি দেখেছি। আমি মন্তব্যও দেখেছি। আমি আপনাকে বলতে পারি যে আমরা সমস্ত ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা এবং সহনশীলতাকে দৃঢ়ভাবে উত্সাহিত করি। 

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এঁর বিরুদ্ধে বিতর্কিত মন্তব্যের বিরোধিতা করেছে অনেক মুসলিম দেশ। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত (রোববার) বিজেপি নূপুর শর্মাকে সাসপেন্ড করেছে এবং নবীন জিন্দালকে বহিষ্কার করেছে।  

এরআগে,  মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে বিজেপি নেতার বিতর্কিত মন্তব্যের প্রতিবাদে কাতার, ইরান এবং কুয়েত ভারতীয় রাষ্ট্রদূতদের তলব করেছিল। উপসাগরীয় অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলো বিতর্কিত মন্তব্যের নিন্দা করেছে এবং তীব্র আপত্তি জানিয়েছে। কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব প্রশমিত করার চেষ্টা করে  কাতার এবং কুয়েতে ভারতীয় দূতাবাসের মুখপাত্ররা রোববার বলেন, রাষ্ট্রদূতরা স্পষ্ট করেছেন যে টুইটগুলো  কোনওভাবেই ভারত সরকারের মতামতকে প্রতিফলিত করে না। এগুলো সংকীর্ণ চিন্তাধারার উপাদান।   

বিতর্কিত মন্তব্য নিয়ে মুসলিমদের প্রতিবাদের মধ্যে, বিজেপি একপ্রকার উভয় নেতার বিবৃতি এড়িয়ে বলেছে, তারা সমস্ত ধর্মকে সম্মান করে এবং কোনও ধর্মের শ্রদ্ধেয় ব্যক্তির অপমান স্বীকার করে না।

গতকাল সোমবার ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত,  বাহরাইন এবং আফগানিস্তানও হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এঁর বিরুদ্ধে বিতর্কিত মন্তব্যের নিন্দা করেছে এবং সমস্ত ধর্মীয় বিশ্বাসকে সম্মান করার গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছে।

নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো দেশগুলোর সংখ্যা প্রতিদিনই বেড়ে চলেছে। এ পর্যন্ত প্রতিবাদে শামিল হয়েছে ইরান, ইরাক, কুয়েত, কাতার, সৌদি আরব, ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডান, আফগানিস্তান, বাহরাইন, মালদ্বীপ, লিবিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক ও অন্যরা।   

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ওই ঘটনার নিন্দা করে ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতের ‘চার্জ দা’ফেয়ার্স’-কে ডেকে পাঠায় পাক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিবৃতি দিয়ে বলা হয়,  পাকিস্তান সরকার ভারতের শাসক দল বিজেপির দুই পদস্থ কর্মকর্তার  জঘন্য মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করছে। ভারতীয় দূতকে বলা হয়েছে, ওই ঘটনা শুধু পাকিস্তানকেই নয়, গোটা বিশ্বের মুসলিম মনকে আহত করেছে। 

ভারতের পক্ষ থেকে পাল্টা জবাবে পাকিস্তানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপরে নির্যাতনের অভিযোগ করে ভারতে তারা যেন সাম্প্রদায়িক অশান্তি তৈরি না করে বলে জানিয়ে দিয়েছে। 

এদিকে, ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা ‘ওআইসি’ বলেছে, ‘মোদি সরকার ক্রমশ সাম্প্রদায়িক ঘৃণা বাড়িয়ে চলেছে। ভারতে ইসলামকে কদর্য ভাবে আক্রমণ করছে। ধারাবাহিক এবং সুপরিকল্পিতভাবে মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ বুনে দেওয়া হচ্ছে।’  

ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী পাল্টা জবাবে বলেছেন, ‘আমরা ভারত নিয়ে ‘ওআইসি’র বিবৃতি দেখেছি। ভারত সরকার সার্বিকভাবে ওই সঙ্কীর্ণমনা, অযাচিত বিবৃতিকে প্রত্যাখ্যান করছে। ভারত সরকার প্রত্যেকটি ধর্মের প্রতি  সম্পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল। কিছু ব্যক্তি বিশেষ একজন ধর্মীয় ব্যক্তিকে খাটো করে টুইট করে। ওই মতামত কোনওভাবেই ভারত সরকারের মতামতের প্রতিফলন নয়। ইতোমধ্যেই ওই  মন্তব্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক,  ‘ওআইসি’ সচিবালয় এমন  উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, অনুচিত এবং বিভ্রান্তিমূলক মন্তব্য করল। এটা তাদের বিভাজনকামী মানসিকতাকেই তুলে ধরছে। বিশেষ স্বার্থসিদ্ধির জন্য এটা করা হল।’খবর পার্সটুডে/এনবিএস/ ২০২২/একে