ঢাকা, বুধবার, এপ্রিল ২৩, ২০২৫ | ১০ বৈশাখ ১৪৩২
Logo
logo

ইসরায়েলের অবিস্ফোরিত বোমা দিয়েই অস্ত্র বানাচ্ছে হামাস


এনবিএস ওয়েবডেস্ক     প্রকাশিত:  ২৯ জানুয়ারী, ২০২৪, ০৫:০১ পিএম

ইসরায়েলের অবিস্ফোরিত বোমা দিয়েই অস্ত্র বানাচ্ছে হামাস

ইসরায়েলের অবিস্ফোরিত বোমা দিয়েই অস্ত্র বানাচ্ছে হামাস

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসে আল-আকসা তুফান অভিযান চালানোর দিন থেকেই অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি স্থল হামলা শুরুর পর সেনাদের বিরুদ্ধে তুমুল লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে হামাসসহ প্রতিরোধ যোদ্ধারা। এ যুদ্ধে হামাস যেসব অস্ত্র ব্যবহার করেছে তার একটা উল্লেখযোগ্য অংশ এসেছে অস্বাভাবিক একটি উৎস থেকে। তা হলো ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। ইসরায়েলের সামরিক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারাই একথা জানিয়েছেন। 

সামরিক বিশ্লেষকেরা বহু বছর ধরে বলে আসছেন যে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর অবরোধের মধ্যেও হামাসের কাছে এত ভারী অস্ত্র থাকার কারণ হলো, গোপন সুড়ঙ্গ দিয়ে তৈরি করা পথে চোরাচালানের মাধ্যমে এসব অস্ত্র তাদের হাতে আসে। অস্ত্র বিশেষজ্ঞ এবং ইসরায়েলি ও পশ্চিমা দেশগুলোর গোয়েন্দাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সাম্প্রতিক এ তথ্যে উঠে এসেছে।

গাজায় ইসরায়েলের ফেলা অবিস্ফোরিত হাজার হাজার গোলাবারুদ দিয়ে নিজেদের জন্য রকেট ও ট্যাংকবিধ্বংসী অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা অর্জন করেছে হামাস। এ ছাড়া ৭ অক্টোবর হামলার সময় ইসরায়েলের সামরিক ঘাঁটি থেকে লুট করা অস্ত্রও যোদ্ধাদের হাতে তুলে দিচ্ছে হামাস। প্রায় চার মাস ধরে লড়াইয়ের সময়ে সংগৃহীত গোয়েন্দা তথ্যে উঠে এসেছে, হামাসের উদ্দেশ্য সম্পর্কে ৭ অক্টোবরের আগে যেভাবে ভুল মূল্যায়ন করেছিল তেল আবিব ঠিক তেমনিভাবে তাদের সামরিক সক্ষমতার বিষয়টিকেও খাট করে দেখেছিল ইসরায়েল।

এখন এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে গত ১৭ বছরের গাজা অবরোধকালে সেখানে ইসরায়েলের সশস্ত্র বাহিনী যেসব অস্ত্র ব্যবহার করেছে, এখন সেগুলোই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হচ্ছে। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের বিস্ফোরক ইসরায়েলে বৃষ্টির মতো রকেট ছোড়া এবং প্রথমবারের মতো গাজা থেকে ইসরায়েলি একটি শহরে ঢুকে হামাসকে হামলা চালাতে সক্ষম করে তুলেছে।  

৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সীমানাবেড়া ভেঙে হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলে ঢোকার কয়েক ঘণ্টা পর রেইম সামরিক ঘাঁটির বাইরে সশস্ত্র এক হামাস যোদ্ধার লাশ দেখতে পান চার ইসরায়েলি সেনা। তার শরীরে বাঁধা ছিল একটি গ্রেনেড। চার ইসরায়েলি সেনার একজন বলেন, গ্রেনেডে হিব্রু ভাষায় লেখাগুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। তিনি চিনতে পারেন, সেটি ইসরায়েলের তৈরি নতুন মডেলের বুলেটপ্রুফ গ্রেনেড।

সেদিন ইসরায়েলে পাঁচ হাজার রকেট ছুড়েছিল হামাস। ওই সামরিক ঘাঁটির কয়েক মাইল দূর থেকে একটি রকেট উদ্ধার করে ইসরায়েলের একটি ফরেনসিক দল। ইসরায়েলের এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ফরেনসিক দল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখে, রকেটে যে বিস্ফোরক ছিল, সে ধরনের বিস্ফোরকের ব্যবহার শুধু সামরিক বাহিনীতেই দেখা যায়। যেটি খুব সম্ভবত এর আগের গাজা যুদ্ধে ছোড়া অবিস্ফোরিত ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্রের বিস্ফোরক দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল।

ইসরায়েলি পুলিশের বোমা নিষ্ক্রীয়করণ বিভাগের সাবেক উপপ্রধান মিখাইল কারদাশ বলেন, হামাসের হাতে থাকা বিস্ফোরকের প্রধান উৎস হলো অবিস্ফোরিত সমরাস্ত্র। তারা ইসরায়েলের ছোড়া বোমা ও কামানের গোলা কাটছে। তারা বিস্ফোরক ও রকেট তৈরির ক্ষেত্রে তা কাজে লাগাচ্ছে। অস্ত্রবিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রায় ১০ শতাংশ বা তারও বেশি বোমা ও গোলাবারুদ অবিস্ফোরিত থেকে যাচ্ছে। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইসরায়েলের এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, এসব ক্ষেপণাস্ত্র অবিস্ফোরিত থাকার হার ১৫ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। গাজায় হাজার হাজার টন অবিস্ফোরিত সমরাস্ত্র এলোপাতাড়িভাবে পড়ে আছে, যেগুলো পুনরায় ব্যবহারযোগ্য। অবিস্ফোরিত ৭৫০ পাউন্ডের একটি বোমা থেকে কয়েক শ ক্ষেপণাস্ত্র বা রকেট বানানো সম্ভব। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে হামাস নেতৃত্বের কাছে বার্তা পাঠানো হয়েছিল। তবে হামাস তাতে সাড়া দেয়নি।