ঢাকা, সোমবার, এপ্রিল ২১, ২০২৫ | ৮ বৈশাখ ১৪৩২
Logo
logo

নির্বাচনী বন্ডকে অসাংবিধানিক বলল ভারতের সুপ্রিম কোর্ট


এনবিএস ওয়েবডেস্ক     প্রকাশিত:  ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪, ০৮:০২ পিএম

নির্বাচনী বন্ডকে অসাংবিধানিক বলল ভারতের সুপ্রিম কোর্ট

 নির্বাচনী বন্ডকে অসাংবিধানিক বলল ভারতের সুপ্রিম কোর্ট

বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ জানাল, নির্বাচনী বন্ড প্রকল্প ‘অসাংবিধানিক’। তাই তা ‘বাতিল হওয়া উচিত’। তার সঙ্গে প্রকাশ্যে আসতে চলেছে রাজনৈতিক দলগুলির অনুদানদাতাদের নামও।

আনন্দবাজার জানায়, বৃহস্পতিবারের শুনানিতে শীর্ষ আদালতের তরফে জানানো হয়, নির্বাচনী বন্ড তথ্য জানার অধিকার (আরটিআই) আইনকে লঙ্ঘন করছে। নির্বাচনী বন্ড ব্যবস্থাকে ‘কুইড প্রো কুয়ো’ বলে মন্তব্য করেছে সুপ্রিম কোর্ট। অর্থাৎ কোনও কিছুর বিনিময়ে কাউকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়া।

নির্বাচনী বন্ডে স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি প্রধান বিচারপতি জানান, ভারতীয় স্টেট ব্যাংক এই ধরনের বন্ড দেওয়া বন্ধ করবে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে জমা পড়া অনুদান সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য তুলে দেবে।

সুপ্রিম কোর্টের তরফে সময়সীমা বেঁধে দিয়ে বলা হয়েছে, আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে কমিশনকে অনুদান সংক্রান্ত তথ্য তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।

বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট আরও দু’টি নির্দেশ দিয়েছে। এক, ১৫ দিনের মধ্যে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে নেওয়া টাকা অনুদানদাতাকে ফেরত দেবে রাজনৈতিক দলগুলি। দুই, নির্বাচনী বন্ড নিয়ে যাবতীয় তথ্য আগামী ৬ মার্চের মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে দেবে ভারতীয় স্টেট ব্যাংক।

কমিশন এই অনুদান সংক্রান্ত তথ্য পাওয়ার পর তা প্রকাশ্যেও আনা হবে।

সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত রিপোর্ট পাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই নির্বাচনী প্যানেল অনুদান সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করবে। অর্থাৎ ১৩ মার্চের মধ্যে এই বিষয়ে তথ্য জানা যাবে বলেও মনে করা হচ্ছে।

পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ তার পর্যবেক্ষণে জানায়, কালো টাকার বিরুদ্ধে লড়াই চলছে এবং অনুদান দাতাদের পরিচয় গোপন রাখা হচ্ছে, এই যুক্তিতে নির্বাচনী বন্ড চালু থাকতে পারে না। একই সঙ্গে সাংবিধানিক বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, কালো টাকা আটকানোর এটাই একমাত্র উপায় নয়।

গত ২ নভেম্বরের শুনানিতে ভারত সরকারের হয়ে সওয়াল করতে গিয়ে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা জানান, বর্তমান ব্যবস্থায় অনুদানদাতা এবং অনুদানপ্রাপ্ত দল উভয়েই জানে দেওয়া-নেওয়ার কথা।

বিচারপতি খন্না তখন মন্তব্য করেন, ‘শুধু ভোটারই জানেন না! এটা মেনে নেওয়া একটু কঠিন! সবটা খুলে দিচ্ছেন না কেন?’

নির্বাচনী বন্ড প্রকল্পের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের হওয়া মামলাগুলির শুনানিতে গত নভেম্বরে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছিল, নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে কারা শাসকদলকে আর্থিক সাহায্য করছে, সেই তথ্য গোপন রাখা গেলেও একই প্রকল্পে বিরোধীদের পাওয়া টাকার সূত্র প্রকাশ পেয়ে যেতে পারে।

সেই সঙ্গে ‘রাজনৈতিক দলগুলোর আর্থিক অনুদানের উৎস সম্পর্কে ভোটারের কিছুই জানার অধিকার থাকতে পারে না’, মোদি সরকারের ওই যুক্তিও খারিজ করে দিয়েছিল শীর্ষ আদালত।

প্রসঙ্গত, ভোটে কালো টাকার খেলা বন্ধ করার কথা বলে নির্বাচনী বন্ড চালু করেছিল মোদি সরকার। অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন ২০১৮ সালে প্রয়াত অরুণ জেটলি নির্বাচনী বন্ডের কথা ঘোষণা করেছিলেন। ২০১৭-র অর্থ বিলের মাধ্যমে আইনে একগুচ্ছ সংশোধনী এনে মোদি সরকার ২০১৮ থেকে নির্বাচনী বন্ড চালু করেছিল।

সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় সিপিএম এবং ‘অ্যাসোসিয়েশন অব ডেমোক্র্যাটিক রাইটস’ (এডিআর) নামে একটি সংগঠন। তাদের আর্জি, নির্বাচনী বন্ড বিক্রি নিষিদ্ধ করা হোক, কিংবা বন্ড কারা কিনছে, তাদের নাম জানানো হোক।